আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রায়েই তত্ত্বাবধায়কের সমাধান রয়েছে !!!!!!!!!: বিচারপতি খায়রুল

তবে তাই হোক, ক্লান্তিহীন তিল তিল আরোহনে সত্য হোক বিক্খুব্ধ এই জীবন _____ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যখন দেশে রাজনৈতিক জটিলতার নিরসন হচ্ছে না তখন এ নিয়ে ঐতিহাসিক রায় প্রদানকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংকটের সমাধান আমার দেয়া রায়ের মধ্যেই আছে। ঢাকা ট্রিবিউনকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন তিনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন প্রশাসন কী ধরনের হবে তার পরিস্কার দিক নির্দেশনা রয়েছে ওই সম্পর্কিত রায়ে। কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতিবিদরা শুধু শুধু বিতর্কে লিপ্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে সমাধানে পৌঁছতে হবে নাহলে সংকট আরো গভীরতর হবে।

কিছু মানুষ চাচ্ছে তত্ত্ববধায়ক নিয়ে একটি ইস্যু তৈরি করতে কারণ এ নিয়ে রায় মেনে চললে তাদের আর বিতর্ক করার কিছুই করার থাকবে না। বিচারপতি খায়রুল বলেন, তারা কখনো তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে সমস্যার সমাধান চায় না কারণ এ সমাধান হয়ে গেলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। রাজনৈতিক দলগুলো রায়ের সেই অংশটুকুই মানেন যে টুকু তাদের পক্ষে যায়। কিন্তু রায়ের পুরো অংশ মানলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বিচারপতি খায়রুল এখনো তার রায় নিয়ে কোনো সমালোচনা শোনার পর তা ফের পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রতিবারই তিনি তার রায়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পান এবং তা তার কাছে সঠিক রায় বলেই বিবেচিত হয়।

২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ নিদর্লীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে। একই সময়ে ওই রায়ে পরবর্তী আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে যদি সংসদে এ ব্যাপারে ঐক্যমত হয়। সংক্ষিপ্ত ঐ রায়ে আদালত আরো বলে, সংসদ একমত হলে তত্ত্ববধায়ক সরকার অব্যাহত রাখার ব্যাপারে রায় কার্যকর নাও করতে পারে। এ রায় বের হবার ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তা প্রকাশ পায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন সে বিষয়টি সংসদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের সাত জন বিচারপতির মধ্যে চারজন রায়ে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ বললেও অন্য দুই জন একে বৈধ বলেন এবং বাকি আরেকজন বিচারপতি বিষয়টি ফয়সালার জন্যে সংসদের ওপর ছেড়ে দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ রায়ের এ অংশ টুকু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেনে নিলেও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে। রায়ের পর অনেকেই মনে করেন এতে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এখনো মনে করছেন, রায় সঠিকভাবে অনুসরণ করলে রাজনৈতিক সংকট দূর করা সম্ভব। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রায়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

যদি তা না থাকত তাহলে রায়ে সমাধান নেই বলে বলা যেত বলে তিনি মন্তব্য করেন। রায়ে দেয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা ও একটি ছোট আকারের একটি ক্যাবিনেট গঠন করতে হবে। সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে ক্যাবিনেটের আকার কেমন হবে। যেহেতু অনির্বাচিত ব্যক্তি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় তাই রায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির কথা বলা হয়েছে। আদালত বিবেচনা করেছে যে কোনো সরকার যদি জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

বিচারপতি খায়রুল হকের বিবেচনায় ৪২ দিনের সময় বেঁধে দেয়ার বিষয়টি বিচক্ষণ। এ সময়ের মধ্যে নিবাচনের সব ধরনের প্র¯‘তি নেয়া সম্ভব। কিন্তু তা যথেষ্ট না হলে আইনপ্রণেতারা ওই সময় সীমা ৩০ থেকে ৬০ দিন বৃদ্ধি করতে পারেন। তিনি বলেন, এ ব্যবস্থা যদি তারা পছন্দ না করেন তাহলে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আরো দুই মেয়াদে বহাল রেখে নির্বাচন করতে পারেন যদিও তা আদালতের দেয়া রায়ের বিপক্ষে যায়। যদি এরপরও রাজনৈতিক দলগুলো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারেন তাহলে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক বিচাপতিকেই বেছে নিতে পারেন।

বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, একজন বিচারপতি হিসেবে সংসদকে কোনো নির্দেশ দিতে পারি না। এজন্যেই রায়ে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এবং রায়ে কি করা যেতে পারে বা কি প্রয়োজন তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। টেকনিক্যালি দুটি বিকল্প রাখা হয়েছে। আমার মনে হয় আইন প্রণেতারা এখন একটি বিকল্প বেছে নিতে পারেন।

ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারও বিকল্প বেছে নেয়ার সুযোগ রায়ে রয়েছে। কেনো রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে তত্ত্ববধায়ক সরকার নিয়ে তিনি নির্দেশনা দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, তা দেয়াও সঠিক বলে আমার কাছে বিবেচিত হয়নি। কারণ তা হত চাপিয়ে দেয়ার নামান্তর। যা রায়ে বলা হয়েছে তা সঠিক বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য বা আইন প্রণেতারাই ঠিক করবেন কখন নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে নাকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হবে।

এবং যে সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা তারাই ঠিক করবেন। কিন্তু যখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করবেন তখন নির্বাচন কমিশন তা বা¯ত্মবায়নে প্রধান ভূমিকা নেবে যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা মূখ্য থাকবে না। এজন্যেই আদালতে দেয়া রায়ে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো আগামি দুটো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার সিদ্ধান্ত নেয়া তাহলে তার অবস্থান কী হবে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবার প্র¯ত্মাব দেন তাহলে তা শোনার পর তিনি পরবর্তী ফ্লাইট ধরে লন্ডনে তার মেয়ের কাছে চলে যাবেন। এবং সেখানেই তিনি বাস করবেন।

এমনকি তিনি দেশেও অবস্থান করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর এ ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কারণ ৯০ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হ¯ত্মান্তর করার বিধি থাকলেও সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গত মেয়াদে দুই বছর স্থায়ী হয়।

মহাজোট সরকারের সময়ে আদালতের দেয়া রায়ের পর সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আলোচনা এবং সমালোচনা হলেও বিচারপতি খায়রুল হক তার দেয়া রায় নিয়ে এখনো সন্তষ্ট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এর চেয়ে আরো ভাল রায় হতে পারে না বলেও তার বিশ্বাস। এজন্যেই এ রায় নিয়ে আমি খুশি। রায় নিয়ে যাতে কোনো সংকট সৃষ্টি না হয় সেজন্যেই এতে বিকল্প রয়েছে।

এজন্যে আমাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে কোনো বিচারপতি অবসর নেয়ার পর রায় লিখতে পারেন কী না এ প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, এ ব্যাপারে কোনো আইনগত বিধিনিষেধ নেই যে একজন প্রধানবিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর তা তিনি করতে পারবেন না। আপিল বিভাগে অনেক বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর তাদের রায় লিখেছেন। যদি অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকত তাহলে সেসব রায় বাতিল বলে গণ্য হতঅ। কিন্তু তা কখনো ঘটেনি।

তাই কোনো বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পরও রায় লিখতে পারেন। যারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তা সঠিক নয়। আমি আমার দায়িত্ব ও অনুভূতি নিয়ে রায় লিখেছি। এ রায়ে কোনো সরকারকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়নি। এজন্যে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।

এ রায় লেখার পেছনে দুর্বিপাক একটি ইতিহাস রয়েছে। যেখানে এমন একটি রায় দেয়ার জন্যে আমাকে পারিশ্রমিক দেয়া উচিত সেখানে আমার এ রায় নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন উত্থাপন করে কেউ কেউ বিতর্ক তৈরি করতে চান। সুত্র ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।