আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউপিডিএফের অস্ত্রবাজি চলছেই

...... সৃষ্টিশীলতার সন্ধানে

ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে শান্তিচুক্তিবিরোধী সংগঠনটি একের পর এক অস্ত্রবাজি করে যাচ্ছে। আগে এই অস্ত্রবাজির মহড়া দুর্গম পাহাড়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সংগঠনটি জেলা ও উপজেলা সদরে ঘাঁটি গেড়ে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটা এসব অস্ত্রবাজির ঘটনা কিছুতেই রোধ হচ্ছে না। গত ৩ জুন রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলা সদরে ইউপিডিএফ আরও একদফা সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে।

হামলা চালিয়েছে চুক্তির পক্ষের সংগঠন জনসংহতি সমিতির কর্মীদের ওপর। অভিযোগ আছে পুলিশ-থানা লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়েছে সংগঠনটির সশস্ত্র ক্যাডাররা। ৩ জুন সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া এই অস্ত্রবাজি চলেছে ঘণ্টাব্যাপী, যাতে প্রায় ৩শ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ইউপিডিএফের প্রায় অর্ধশত ক্যাডার এ সময় রাজস্থলী সদরে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। এসব ঘটনায় জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) এক কর্মী নিহত ও একজন আহত হন।

নিহতের নাম আনন্দ তংচংগ্যা। তিনি পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের কর্মী। এ ঘটনায় জেএমএস কর্মী পলাশ চাকমা (৩২) গুরুতর আহত হন। রাজস্থলীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে পাল্টা ৩০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয়েছে। এ ঘটনার পর রাজস্থলী বাজারে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

বাজারটি এখনও এক রকম জনশূন্য। এর আগে গত ১৬ মে রাজস্থলী উপজেলা সদরে সংগঠনটির সশস্ত্র ক্যাডারদের গুলিতে নিহত হন গাইন্দ্যা ইউনিয়ন শাখার এক জেএসএস কর্মী। এই ঘটনায় জেএসএসের অন্য এক কর্মী গুরুতর আহত হন। উল্লেখ্য, ২০ দিনের মধ্যে শুধু রাজস্থলী সদরেই শান্তিচুক্তিবিরোধীদের হাতে শান্তিচুক্তির পক্ষের সংগঠনে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। রাঙামাটির জুরাইছড়িতে গত ১৫ মে ইউপিডিএফের হাতে নিহত হয়েছেন দুজন জেএসএস কর্মী।

একই মাসের ২০ তারিখ জুরাইছড়িতে সংগঠনটি হামলে পড়ে জেএসএস কর্মীদের ওপর, যাতে দুজন নিহত হওয়ার গুজব রটেছিল। মে মাসে রাঙামাটির বরকলে জেএসএসের এক কর্মীকেও অপহরণ করেছে ইউপিডিএফ। এভাবেই পাহাড়ে নিত্যনতুন সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে সংগঠনটি। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠনটির চক্রান্তে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি এবং খাগড়াছড়ি সদরে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় ২০ ফেব্রুয়ারি বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের সাত কিলোমিটার জুড়ে ১০টি আদিবাসী পল্লী পোড়ানো হয়।

নিহত হন দুজন। পোড়ানো হয় বাঙালিদের ৩০-৪০টি বাড়ি। ২৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে সংগঠনটির উস্কানিতে বেশকিছু আদিবাসী ও বাঙালির ঘর-বাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নিহত হন একজন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাগড়াছড়িতে প্রশাসনকে কারফিউ জারি করতে হয়েছিল।

শান্তিচুক্তির এক যুগ পার হয়েছে। চুক্তির বিভিন্ন ধারা এখনও অবাস্তবায়িত রয়েছে। শান্তিচুক্তির পক্ষের সংগঠন জনসংহতি সমিতি বিভিন্ন শক্তি ও সংস্থার চক্রান্তে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ সময়ে পাহাড়ে ক্রিয়াশীল শক্তিগুলোর আনুকূল্যে চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি সদর ও বান্দরবান জেলার কয়েকটি উপজেলা বাদে পাহাড়ের সর্বত্রই এখন ইউপিডিএফের পদচারণা।

সংগঠনটির সশস্ত্র ক্যাডাররা লিপ্ত রয়েছে অস্ত্রবাজির মাধ্যমে নতুন এলাকা দখলে। নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোয় সংগঠনটি চালাচ্ছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ইউপিডিএফের কোনও কোনও উপজেলা শাখায় মোট নেতাকর্মীর অর্ধেকই চাঁদা সংগ্রাহক। হাট-বাজার, পথ-ঘাট, সরকারি- বেসরকারি উন্নয়ন কাজ, গাছ বিক্রি এমনকি লোকাল মদ বিক্রিতেও সংগঠনটি ভাগ বসাচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা যার পুরোটাই উগ্র মিশন বাস্তবায়নে ব্যয় করা হচ্ছে।

পোষা হচ্ছে অস্ত্র চালনায় দক্ষ ক্যাডার। তথ্য সংগ্রহে ব্যয় করা হচ্ছে অঢেল টাকা। এসব উগ্র কার্যকলাপের ফলে দিন যত গড়াচ্ছে পাহাড় ততই সহিংস হয়ে উঠছে। গত মে মাসেই রাজস্থলী থেকে উদ্ধার হয়েছে ইউপিডিএফের গোপন নথিপত্র, চাঁদার রসিদ ও আয়- ব্যয়ের হিসাব। কিন্তু এরপরও প্রশাসন নির্বিকার।

ফলে ইউপিডিএফের বিতর্কিত কর্মকা-ের রাশ টানা সম্ভব হচ্ছে না। বরং প্রশাসনের নাকের ডগায় সহিংস পরিস্থিতির বিস্তার ঘটছে। শান্তিচুক্তির পক্ষের সরকার ক্ষমতার দেড় বছর পার করছে। পাহাড়ের বাসিন্দারা আশা করেছিল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। শান্তিচুক্তিবিরোধীদের অস্ত্রবাজি চাঁদাবাজি বন্ধ হবে।

ফিরে আসবে সত্যিকার শান্তির পরিবেশ। কিন্তু তা হয়নি। গত দেড় বছরে পাহাড়ের পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়েছে। ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির কলেবর বেড়েছে। লাশের মিছিলে সময়ের পরিক্রমায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন মুখ।

অপহরণ বাণিজ্যও বেড়েছে। এসব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে সরকার অনেকটা নির্বিকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।