আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: আশৈশব অপছন্দের বাপজান - ২

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
মাস্টার মশাই আমাকে খুব একটা ভালচোখে দেখতো না । জিজ্ঞাস করলো, কীরে ঝন্টু তোর বাবাকে রিপোর্ট কার্ড দেখাইছিলি তো? কী বলছেন উনি? আমি গুড বয়ের মত মাথা নত করে, হু করি । সপ্তাহ দুই পরে বিকাল বেলা সবে মাত্র চিভি অন করলাম । নতুন একটা কার্টুন । আব্বার ফিরতে দেরী হয় কিন্তু সেইদিন আব্বা আগে আগেই বাড়ি ফিরেছে ।

ঘটনা কি? দুপুরে স্কুলে গিয়েছিল খোঁজ নিতে কেন তার হাতে পরীক্ষার রিপোর্ট আসে নাই । মাস্টার সা'ব অবাক । আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন । ঝন্টু তো সিগনেচার দিয়ে অনেক আগেই জমা দিয়েছে । বুঝতে দেরি হয়নি আসল ঘটনা ।

লালমোহনের মত টকটকে চোখ নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ঢুকলো বাপজান। আমাকে কয়েদ করা হলো বড় ঘরে । দু'পাশের দরজা বন্ধ । আমার পিঠে সেদিন চাবুকের মত বেতের আঘাত বর্ষন করা হল, যেন একশ'মাইল বেগে কালবৈশাখী তান্ডব । রাগ কমলো না তাতেও, চেঁচায়ে বলতে লাগলো মাকে, তোমার ঝন্টুর ভাত বন্ধ ।

একে গ্রামে হালচাষ করতে পাঠায়ে দিব । টীচার দিয়ে পড়াই । রক্ত পানি করা ইনকামের পয়সা দিয়ে মানুষ হবে সেই ইচ্ছায় আর শেষে কিনা আমার ছেলে কিনা একটা চোর, একটা বেঈমান! এভাবে বাপের ইচ্ছার কাছে মাথা নত করতে করতে দিন চলেছে । রেজাল্ট খুব ভাল হয় না কিন্তু মোটামুটি চলে যায় । এইচএসসির রেজাল্ট কোন কারণে ভাল হয়ে গেছে ।

এটা হয়েছে কাল । আব্বা জিকির করছে আমাকে এমবিবিএস ডাক্তার বানাবে । সেই স্বপ্নটা প্রতিদিন যেন লাউগাছের লতাপাতা ছড়াচ্ছে প্রতিদিন । কিন্তু আমার ইচ্ছা অন্যকিছু পড়বো । কলেজ শেষ ।

বড় হয়েছি । মুক্তা, জহির, চশমা শফিক সিটি কলেজে পরীক্ষা দেবে । মা'র কাছে গিয়ে বললাম পরীক্ষা দিব না । ডাক্তারী পড়তে চাই না। আমি সিটি কলেজে পড়বো ।

মা জীবরাইলের মত বাণী যথারীতি আব্বার কানে পৌছালো । আব্বা ইনডাইরেক্ট ফ্রীকিকে ওস্তাদ । আমাকে শোনায়ে শোনায়ে মাকে ঝাড়া শুরু করলো, ঝন্টুরে বলবা এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়া ঠিক মতো পড়তে । আমি ফর্ম আনছি । জমা দিবে পরীক্ষা দিবে ।

ব্যস । বেশি বুঝলে বাসায় থাকার দরকার নাই । বনের মহিষ তাড়ানো আমার সংসারে চলবেনা । জর্জ ওয়াশিংটন না কে যেন বলেছিল, লাইফ ইজ এ কম্প্রোমাইজ । আমি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে এতে রাজি হয়ে যাই ।

পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি ঘটে । বাপজান সেই রাতে হরলিক্সের বয়াম কিনে আনে । রাত জেগে পড়া শোনা করি সেজন্য দামী মোরগ মার্কা চাইনিজ মশার কয়েল । হয়তো চোখ বুজলেই দেখতে পাচ্ছিলো, দেশের বাড়ির সবাই বলছে ডাক্তারের বাপ । সহকর্মীরা সব বলছে ইদ্রিস সা'ব আসলেই একটা কাজের কাজ করেছে ।

পরীক্ষার দিন আব্বা নিজে আমাকে নিয়ে গেল কেন্দ্রে, কপালে সুরা ইয়াসিন পড়ে ফু দিয়ে বললো, খুব মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিস, সহজ গুলার আনসার আগে অলওয়েজ । ভুলে গেলে, ইন্না লিল্লাহি... পড়বি তিনবার । (চলবে..) প্রথম পর্ব: Click This Link তৃতীয় পর্ব: Click This Link চতুর্থ পর্ব: Click This Link
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.