নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
নিজের মাননীয় বাপকে পছন্দ হওয়ার তেমন কোন কারণ ছিল না । এরকম বাপ কেন আমার কপালে পড়লো সেটা আল্লাহর কাছে বিরাট প্রশ্ন ছিল ।
কত ভাল ভাল বাপ ছিল আমাদের ক্লাসের পোলাপানদের । যেমন, বিল্লালের বাপ আড়ত চালাতো । জিন্দেগীতে চেয়েই দেখতো না পোলা কি করে ।
বিল্লাল ভিসিআর দেখতো, ক্যারাম খেলতো । মুন্সী কাদের ওরফে কান্দুর বাবা পুলিশ । পড়াশোনা নিয়ে মাথা ব্যথা নাই । কোন দিন বাড়িতে গেলে চেয়ারে বসায়ে মুরগীর সালুন দিয়ে খাওয়াতো ।
কুসুম নামে একটা মেয়েছিল একই ক্লাসে ।
তার বাপ মানে মতিন চাচা, দেখতে অত সুরতের না, চ্যাপ্টা মুখ, তলোয়ারের মত মোচ । কিন্তু সেই বদখত বাপও আমার আব্বাজানের চেয়ে এক দিকে ভাল ছিল ।
ঈদের মৌসুমে কে কত সেলামী দেয় তার অলিখিত হিসাব জানা ছিল আমাদের সেলামীবাহিনীর । কুসুমের বাবা ছিল সবচেয়ে দয়ার সাগর । অন্যরা যে বাজারে একটা পাঁচ টাকার নোট বের করতে চাইতো না, মতিন চাচা মাথা নুয়ে কদমবুচি করা মাত্র দিতো তিন তিন খান
আমার বাপ ছিল খানে দর্জাল ।
পয়সা দিতো চিপায়ে চিপায়ে । অথচ আমাকে ফাস্ট বয় বানানোর জন্য তার আগ্রহের অন্ত ছিল না । বাসাটাকে হৈচৈ করে জেল হাজত বানায়ে ফেলেছিল । কথায় কথায় পড়াশোনা আর ধমক । রেগে গেলে পিঠের জটিল হস্তশিল্পে সে ছিল সিদ্ধহস্ত ।
অবশ্য ততদিনে টম এন্ড জেরীর মত তাকে ফাঁকি দেয়ার অনেক কৌশলও আবিষ্কার করেছি । কথায় বলে না প্রয়োজন আবিস্কারের আম্মাজান । তবে কয়েকটা কাজ হতো কয়েকটা না । একটা কৌশল বলি
মাথা অত খারাপ ছিল না বলে পাস করে যেতাম। কিন্তু সেইবার পরীক্ষার আগে ক্রিকেট প্র্যাকটিস ছিল ।
রাতে ছিল ব্যাড মিন্টনের টুর্নামেন্ট । ফলাফল - পরীক্ষা হলে কাওয়ালী মুরগীর মত ঝিমানো । অঙ্কে ৩০ আর ইংরেজিতে ২৯ ।
আকবর আলী স্যার একে একে নাম ডেকে প্রগ্রেস রিপোর্ট কার্ড ধরায়ে দিয়ে বলেছে জলদি অভিভাবককে দেখাতে ।
ইনফ্যাক্ট পরীক্ষার খাতা গুম করে দেয়া সহজ।
সবাই দিত, রাসেল, কলিমউদ্দিন, বদরুদ্দোজা । কে যায় বাপকে এসব দেখাতে?
কিন্তু ঐ রিপোর্ট কার্ডে বাপের স্বহস্তে স্বাক্ষর লাগানোর কন্ডিশনটা বিরাট মুসিবত । আবহাওয়ার পুর্বাভাস করা সম্ভব না, দুই বিষয়ে ফেল দেখলে যে কোন কিছু হতে পারে । শ্রেণী শিক্ষকেরাও কম বদ না । কমেন্টও দিয়ে দিত
... বরাবরের মতই অমনোযোগী ।
ইংরেজি এবং গণিতে অকৃতকার্য । অভিভাবকদের মনোযোগ আবশ্যকীয় ।
একটা গুণ আমার বাপের ভাল । উনার সিগনেচারটা ছিল চিংড়িমাছের মত প্যাচানো কিন্তু হিজিবিজি হিজিবিজি । বুদ্ধিটা পাই বদরুলের কাছে ।
এতো জটিল জিনিস কে মিলাতে যাবে। ব্যাস । ফাইল থেকে পানির বিলের কপি চুরি করলাম । সাইন দেখে পাচ দশবার ট্রাই করে বিসমিল্লাহ করে দিলাম প্রগ্রেস কার্ডে ।
(চলবে..)
দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link
তৃতীয় পর্ব: Click This Link
চতুর্থ পর্ব: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।