সত্যানুসন্ধিৎসু
সাড়ে তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী জাতির এক ক্রান্তিকালে নানান পথপরিক্রমায় তৎকালীন বিদায়ী বিএনপি সরকারের রাষ্ট্রপতি ড.ইয়াজউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক জারি করা হয়েছিল জরুরি অবস্থা ও কারফিউ। আর সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় জনগণের চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির ওপর মানুষের অধিকারসহ আরও কিছু মৌলিক অধিকার।
সেই জরুরি অবস্থার আগে-পরে গ্রেফতার করা হয় প্রায় দু’লাখ বিভিন্ন স্তরের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, মাস্তান, অবৈধ অস্ত্রধারী। এরপর একাদিক্রমে দু’বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকে, অভিনব ও নতুন ভোটার তালিকা প্রণীত হয়, অনুষ্ঠিত হয় বহুকাঙ্খিত সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের ভরাডুবি ঘটে এবং নতুনভাবে ক্ষমতায় আসে মহাজোট সরকার।
আসুন, আমরা ফিরে দেখি, সেই ১/১১-এ আসলে কী ঘটেছিল এবং জাতি কীভাবে সেদিনের সেই ক্রান্তিকাল পাড়ি দিয়েছিল:
প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ইয়াজউদ্দিন ও সকল উপদেষ্টার পদত্যাগ: দেশে জরুরি অবস্থা জারি: কারফিউ
আসন্ন ২২ জানুয়ারী ২০০৭ অনুষ্ঠিতব্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ঠ রাজনৈতিক সংকট ও দেশব্যাপী চরম অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে অবশেষে অনির্দিষ্ঠকালের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। সেইসাথে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলা শহরে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১১ জানুয়ারী ২০০৭ তারিখ থেকে প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে কারফিউ। জরুরি অবস্থা চলাকালে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও বাক-স্বাধীনতাসহ বেশকিছু মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকবে। এদিকে গত রাতেই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন আরো নয় উপদেষ্টা।
এর আগে ‘৯০ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি এরশাদ জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং ৬ ডিসেম্বর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। সংবিধান অনুসারে ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন ও বিপদের সম্মুখীন প্রতীয়মান হওয়ায়' রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করেন।
১১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি দফায় দফায় বৈঠক করেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিচারপতি ফজলুল হক, আজিজুল হক, সুফিয়া রহমান, তিন বাহিনী প্রধান, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশের আইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটার পর একটা বৈঠক চলতে থাকে।
গত ২৭ অক্টোবর অষ্ঠম সংসদের মেয়াদান্তে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করলে ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করেন এবং নিয়োগ দেন ১০ জন উপদেষ্টা।
তবে রাস্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যক্রমে নিরপেক্ষতা না থাকায় ১৪ দল আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের তাৎপরতায় সে যাত্রায়ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।
পরর্বতী সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ আজিজের ছুটি, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে উপদেষ্টাদের গুচ্ছ প্রস্তাব প্রণয়ন, সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতির অনীহা, উপদেষ্টাদের না জানিয়ে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েন, চার উপদেষ্টার পদত্যাগ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকদের চাপে গুচ্ছ প্রস্তাবের আংশিক বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কয়েক দফা নির্বাচনী তফসিল বদলের পথ ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনে অংশগ্রহণে সম্মত হয়। কিন্তু ভূয়া ভোটার তালিকা এবং নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় নির্বাচন র্বজনের ঘোষণা দিয়ে মহাজোটের প্রার্থীরা নির্দিষ্ঠ দিন ৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে সংকট গভীর হয়। এ সময় থেকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও বিদেশি কূটনীতিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে নির্বাচন পিছিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানানো সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় থাকেন, বিপরীতে মহাজোট ১৪ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সংঘাতময় এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ঠ্র দফতরসহ বিদেশি কূটনীতিকদের চাপ বাড়তে থাকে। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর নেতৃত্বে বিদেশি কূটনীতিকরা রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তাদের প্রকাশ্য তাৎপরতা শুরু করেন। তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক নেতার সাথে দেখা করেন এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনার কথা জানান। এ সময় থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে 'যথাসময়ে' নির্বাচন না হলে 'অস্বাভাবিক' পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে মহাজোট দায়ী থাকবে বলে প্রচার চালিয়ে জরুরি অবস্থা জারির ইঙ্গিত দিতে থাকে। বিদেশি কূটনীতিকরাও রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে 'অগণতান্ত্রিক' ব্যবস্থা চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন।
এমনি পরিবেশে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কড়া মনোভাব প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হয়। আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং দুই মার্কিন সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইন্সটিটিউট ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট। কানাডীয় হাইকমিশনার বারবারা রিচার্ডসনের বাসায় কূটনীতিকদের সঙ্গে মহাজোট ও বিএনপির নেতারা পৃথকভাবে বৈঠক করেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী দেখা করেন জাতীয় পার্টিরর চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের সবাইকে বঙ্গভবনে বৈঠকের জন্য ডেকে পাঠান।
বিকেলে উপদেষ্টারা বঙ্গভবনে গেলেও নির্ধারিত বৈঠকটি হয়নি। বরং সন্দ্যায় বঙ্গভবন থেকে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়।
জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট
গত ১০ জানুয়ারি পল্টনের বিশাল জনসভায় মহাজোটনেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন ২২ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ এনে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে পদত্যাগের দাবি জানান। জনসভা থেকে নির্বাচনের তারিখ পর্যন্ত অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ওদিকে কুমিল্লায় এক জনসভায় চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া ঘোষণা দেন, নির্বাচন কেউই পেছাতে পারবে না। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদেরকে এমনভাবে প্রতিহত করা হবে যাতে কোনো দিনই তারা আর মানুষের কাছে ভোট চাইতে না পারে।
এর আগে দীর্ঘ সংগ্রাম-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে মহাজোট নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়; কিন্তু সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের প্রভাবে আইনি মারপ্যাঁচে এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ৩ জানুয়ারি মহাজোট নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি চলে একটানা অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি।
বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্ঠায় দুই জোটের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপ শুরু হয় সংসদ ভবনে। চলে কমবেশি এক মাস। কিন্তু সে সংলাপ শেষাবধি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। জোটের ক্ষমতা ছাড়ার দিন সারাদেশে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর অর্ধশতাধিক কর্মী নিহত হন কয়েক দিনের ব্যবধানে।
এর আগে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের আপত্তির মুখে বিচারপতি কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি নিজেই স্বীয় ইচ্ছায় প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাৎকালীন ১৪ দল রাষ্ট্রপতির এ দায়িত্ব গ্রহণকে স্বাগত জানায়নি। আবার প্রত্যাখ্যানও করেনি। তারা রাষ্ট্রপতিকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
শেষাবধি আওয়ামী লীগসহ মহাজোট প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে আসছিল।
প্রধান উপদেষ্টার কিছু একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৪ জন উপদেষ্টা যথাক্রমে ড. আকবর আলি খান, মেজর জেনারেল (অব.) হাসান মশহদু চৌধহৃরী, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ও সিএম শফি সামি ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ওই পদ পুরণও করেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো গুরুত্ব পাননি। বরং ড. ইয়াজউদ্দিন অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর সচিবদের এক সভায় বলেন, র্বতমান সরকারের ধরন হলো রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের মতো।
তার আগে ২০০৬ সালের ৩০ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার নিরপেক্ষতা প্রমাণের আহ্বানসহ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে বিচারপতি এমএ আজিজ, স ম জাকারিয়ার অপসারণসহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়ন, প্রশাসনকে নির্দলীয়করণ, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও বিচারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। ওই দিন রাতেই তিনি নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ৪ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা এবং ৩ নভেম্বর পল্টনের জনসভা থেকে পরর্বতী কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান।
এ প্রেক্ষাপটে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে পল্টন ময়দানে জনসভায় শেখ হাসিনা আরো ৭ দিনের আলটিমেটামসহ ১২ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। ১২ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধ চলার পর ১৫ নভেম্বর আবারো ৪ দিনের জন্য অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এর আগে অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ১৩ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সার্ক ফোয়ারার কাছে পুলিশের ট্রাকচাপায় আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজিউল্লাহ্ নিহত হন।
সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজের বিদায়ের পর বিএনপি ক্যাডার হিসেবে বিতর্কিত মোদাবি্বর হোসেন ও সাইফুল আলমকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। এ কারণে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টাদের কথা দিয়েছিলেন যে, তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেবেন। এরপর ১৪ দল ২৮ ও ২৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
৩ ডিসেম্বর ২০০৬, দুই নেত্রীর কাছে উপদেষ্টা পরিষদ প্যাকেজ প্রস্তাব দেয়।
৩ ও ৪ ডিসেম্বর চতুর্থ দফার লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর ৪ ডিসেম্বর তা স্থগিত করা হয়। ৮ ডিসেম্বর প্যাকেজ প্রস্তাব বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর সারাদেশে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮ ডিসেম্বর পল্টনের মহাসমাবেশ থেকে মহাজোট গঠনের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টিরর চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও এলডিপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরদু্দোজা চৌধুরী একমঞ্চে ওঠেন।
ওই দিন থেকেই আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী প্রস্থুতি শুরু হয়।
২৪ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মহাজোট ২৬ ডিসেম্বর সারাদেশে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এরপর ২৭ ডিসেম্বর মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিরর চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৫টি মনোনয়নপত্রই বাতিল করা হয়। এরশাদ এর বিরুদ্ধে আপিল করলেও ৩১ ডিসেম্বর আপিল খারিজ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এসব কার্যক্রমে চারদলীয় জোট সরকারের কুপ্রভাব রয়েছে বলে আগাগোড়া সন্দেহ করা হয়।
কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির ছকেই দেশ পরিচালনা করে আসছেন বলে সব মহল থেকে অভিযোগ উঠতে থাকে।
৩ জানুয়ারি ২০০৭ শেরাটন হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে মহাজোট নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। শেখ হাসিনা মহাজোটের পক্ষে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন র্বজন এবং ৭ ও ৮ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই দিনই মহাজোট একযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। ৬ জানুয়ারি মহাজোটের সংবাদ সম্মেলন থেকে ৭ ও ৮ জানুয়ারি অবরোধের পাশাপাশি ৯ জানুয়ারি বঙ্গভবন ঘেরাওসহ দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
শেষপর্যন্ত আন্দোলনের মূল ইস্যু ছিল প্রধান উপদেষ্টা পদ এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কার। বিচারপতি এমএ আজিজ হাইকোর্টের বিচারপতি থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। নিয়োগ লাভের পর থেকেই একটানা বিতর্কিত কর্মকান্ড ও বক্তব্য দেওয়ার কারণে নিজেকে হাস্যকর এবং অযোগ্য করে তোলেন। এমনকি সাবেক সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসহ অনেকেই তার সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু পদত্যাগও করেননি।
অবশেষে আন্দোলনের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরামর্শে তিনি ছুটিতে যান। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তাকে বিদায় দিলেও প্যাকেজ প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করে সেখানে বিতর্কিত দু'জন কমিশনার নিয়োগ দেন। এমএ আজিজ যাওয়ার পর আরেক কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান অদৃশ্য ইঙ্গিতে রাতারাতি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করে বসেন।
আরো একটি বিষয় হলো ভোটার তালিকা। বিদেশিরাও ভোটার তালিকায় ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার আছে বলে জানান।
এসবই ছিল বিএনপি’র নির্বাচনে জয়লাভের পূর্বপরিকল্পিত ও জঘন্ন কারসাজি। ভোটার তালিকা নতুন করে তৈরি করা হবে, নাকি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ শুরু হয়। এজন্য মাহফুজুর রহমান ২৮, ২৯ ও ৩০ জুলাই নামসর্বস্ব ১১৭টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। সাবেক দুই নির্বাচন কমিশনার একে মোহাম্মদ আলী ও এমএম মুন্সেফ আলীর মতামত উপেক্ষা করে সিইসি একক সিদ্ধান্তে ভোটার তালিকা নতুন করে তৈরি করার উদ্যোগ নেন।
গত ৪ জানুয়ারি, ২০০৬ আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ভোটার তালিকা হালনাগাদের পক্ষে রায় দেন। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি সরকার নিজেদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বার্থে নতুন করে দুই নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান ও স ম জাকারিয়াকে নিয়োগ দেয়। একই বছরের ২৩ জানুয়ারি ট্রয়কা প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে ১৯ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং রাতে বাসায় ফিরে যান। এ খবর প্রকাশ হয়ে গেলে তিনি পরে আবার হাসপাতালে চলে যান। এ নিয়ে সারাদেশে তিনি ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন।
২০০৬ সালের ৬ আগস্ট দুই নির্বাচন কমিশনারের মতামত উপেক্ষা করে সিইসি তার একক সিদ্ধান্তে ভোটার তালিকা নতুন করে তৈরির উদ্যোগ নেন। কিন্তু ভোটার তালিকা অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুযায়ী নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করা যাবে না বলে অপর কমিশনাররা মতামত দেন। দুই কমিশনারের বিরোধিতার কারণে সিইসি প্রায় ৫ মাস কমিশনের কোনো বৈঠক ডাকেননি। এ সময় শুধু ফাইল চালাচালি করে একে অপরের মতামত দেন আর সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
রাষ্ট্রপতির বেতার ভাষণ
রাস্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ১০ জানুয়ারী ২০০৭, রাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, আগামী দু'একদিনের মধ্যে তিনি একটি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবেন।
প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতি পদের অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ায় যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশ ও জাতিকে দুটি বিপরীতমুখী ধারায় বিভক্ত করেছে। তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির স্বার্থে এ বিতর্কের অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রেক্ষাপট র্বণনা করে বলেন, শান্তিপ্রিয় মানুষ যারা অগ্রগতি ও প্রগতিতে বিশ্বাস করে তারা কেউ চায় না দেশের অপার সম্ভাবনার পথ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে রুদ্ধ হয়ে যাক। তিনি বলেন, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, ইতিমধ্যে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণম্ন হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি দেশপ্রেমিক ও পরীক্ষিত সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে বলে আশাবাদ জানিয়ে বলেন, তারা তাদের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে ন্যস্ত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবেন।
প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন বলেন, একটি দেশকে সম্ভাব্য উন্নতির লক্ষে পপৌঁছে দিতে গেলে জাতীয় নেতৃত্বে সততা, আন্তরিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেম এ চারটি গুণাবলির সমন্বয় প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় নেতৃত্বে এ চারটি গুণাবলির সমন্বয় হয়েছে কি-না তা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেশবাসীর এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সঠিক নেতৃত্ব যে একটি দেশকে ঈর্ষান্বিত পর্যায়ে নিয়ে যায় তার উদাহরণ আমাদের এ মহাদেশে রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সহিষষ্ণুতার অভাব। উপদেষ্টা পরিষদের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা সত্ত্বেও বিগত আড়াই মাসে দেশে হানাহানি, সন্ত্রাস ও রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসহিষষ্ণু ও হিংসাত্মক আচরণের ফলে অনেক মূল্যবান তাজা প্রাণ ঝরে গেছে এবং দেশের অর্থনীতি গভীরভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা, যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, সমগ্র জাতি আজ উবেগ, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় নিপতিত। শান্তি-শৃঙ্খলা দারুনভাবে বিঘ্নিত। কমবেশি সবাই জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত এবং গণমানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন সীমাহীন কষ্ঠ ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। ভাষণে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন এবং একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও শান্তিপুর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির হুসিয়ারী
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমল্প্বয়ক মিজ রেনাটা লক ডেসালিয়েন বলেছেন, বাংলাদেশে ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সংশিল্গষ্ঠতা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে দেশটির ভবিষ্যৎ ভূমিকায় প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত নির্বাচনে সব দলের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি।
জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক আরো বলেন, এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গভীর উবেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, র্বতমান পরিস্থিতিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
রেনাটা বলেন, এমন একটি নির্বাচনে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যে নির্বাচনে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোই অংশ নিচ্ছে না।
একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক চাপ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও একতরফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উবেগ-আশঙ্কা বেড়েছে। সবার অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নির্বাচনী পরিবেশের অভাব রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জাতিসংঘও ঢাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সমন্বয় অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে বুধবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রভাবশালী দুই মার্কিন সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনসি্টটিউট (NDI) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনসি্টটিউট (IRI)।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, রাজনৈতিক সংকটের কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বৈধতা মারাত্নকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি সেনাবাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন ও সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি ইইউ রাষ্ট্রদূত ড. স্টেফান ফ্রোয়েইন অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও সহযোগিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত দেন। এক বিবৃতিতে সব দলের অংশগ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ ও কার্যকর প্রক্রিয়া সৃষ্টির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গারেট বেকেট।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী সেনা অভিযানে আওয়ামী, বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়ে যায় ১১ জানুয়ারী গভীর রাত থেকেই।
ঢাকায় গ্রেফতার হন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মজুমদার ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন মামুন, দু'জন ওয়ার্ড কমিশনার ও দু'জন এনজিও পরিচালক। কারফিউর মধ্যেই দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী, তদবিরবাজ, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী এদিক-সেদিক পালাতে শুরু করে। অবশ্য তার আগেই সারাদেশ থেকে প্রায় দেড়লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে আটক করে জেলে ঢোকানো হয়। এদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ জানুয়ারীর এক তরফা নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও কারচুপির করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে।
সেই প্রত্যাশিত গণতন্ত্রে উত্তোরণে বহুলালোচিত সেনাপ্রভাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রচেষ্টা আর নির্বাচিত সরকারের কর্মকাণ্ডের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে এখন পর্যালোচনার দাবি রাখে।
নানা ইস্যুতে বিরোধীদলের সাথে সরকারি দলের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে রাজপথের আন্দোলনের চিন্তাভাবনাও চলছে। অন্যদিকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারীদলের অহমিকাও লক্ষ্যণীয়। তাদের সামনে আরও সাড়ে তিন বছর সময় আছে; সেই সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কতটুকু পুরণ করতে পারবে বা পারবে না, বিরোধীদলের ভেঙ্গেপড়া ইমেজ পুনরুদ্ধারে তাদেরই বা সফলতা কতটুকু - সবকিছু মিলিয়ে জাতির মুক্তি কোন পথে তা নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।