-খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী
অপরাধীকে রিমান্ডে নেয়া হয় কেন? জেলখানায় বন্দী রাখা হয় কেন? নিরিবিলি পরিবেশে বিভিন্ন তথ্য বের করার জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়। এর অর্থ এই নয় যে, তাকে রিমান্ডের নামে পিটিয়ে হাড় আর গোশত একাকার করে ফেলবে। এর অর্থ এও নয় যে, আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছ তার মজা বুঝ। জেলখানায় নিয়ে অপরাধীকে একদিকে শাস্তির মধ্যে রাখা হয়। অন্যদিকে তাকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার কথা।
জেল থেকে বের হয়ে সে যেন ভালো মানুষ হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে জেলে যায় চোর হয়ে আর বেরিয়ে আসে ডাকাত হয়ে। জেলে যায় ছোট একটি অপরাধে আর জেল থেকে বেরিয়ে, যার জন্য জেলে গেলো তাকে খুন করা হয়। জেলখানায় বন্দীদের সাথে কি আচরণ করা উচিত তা যেন আজ বিশ্বের সভ্য দেশগুলোও ভুলে গেছে। গুয়ান্তানামো বন্দীশালায় যে লোমহর্ষক আচরণ করা হয়েছে বন্দীদের সাথে তা সারাবিশ্বের বিবেকবান মানুষকে ব্যথিত করেছে।
বন্দীশালায় বন্দী নারীরা নিজেদের নির্মমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা দিনের বেলা যেটুকু নিরাপদে থাকি সন্ধ্যা হলে তা থাকে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই আমরা আতংকে থাকি- এই বুঝি এলো হায়েনার দল আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। ' বন্দীশালায় পুরুষদের সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় উপর দিকে পা আর নিচের দিকে মাথা রেখে নির্মমভাবে প্রহার করা হতো। কেবল নারীদের ধর্ষণ নয় পুরুষদেরও বলৎকার করা হতো। বিশ্বের বিবেকবান মানুষ বিবেকের তাড়নায় এ পৈশাচিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছে।
একি সভ্যতা?
আমরা যখন মিসর, ফিলিস্তিন ও গুয়ান্তানামো বন্দীশালায় বন্দীদের সাথে এ আচরণের বর্ণনা শুনতাম তখন ভাবতাম কি পাশবিক আচরণ করা হচ্ছে ভিন্নমতের লোকদের সাথে। আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আমরা কতই না সভ্য। কিন্তু সে বিশ্বাস হৃদয় থেকে বিদায় নিলো, যে দিন শুনলাম এদেশের একজন সিংহপুরুষ, যার দক্ষতা, যোগ্যতা, আর সততার ধারে কাছে আসার যোগ্যতা যাদের নেই, যার বলিষ্ঠ বক্তব্য আর লেখনি যে অন্যায়কারীদের তখত ভেঙে দিতে পারে তারা এ ব্যক্তিকে নির্যাতনের মাধ্যমে দমিয়ে দেয়ার জন্য মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার সাথে সাথে অর্থাৎ রিমান্ড চেয়ে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার আগেই তাকে উলঙ্গ করে ফেলা হয়েছে।
অন্ধকার কুঠুরীতে তাকে রাখা হয়েছে যেখানে নিজের শরীর পর্যন্ত দেখা যায়নি। প্রশ্ন হলো এমন একজন সম্মানিত লোকের সাথে এ কোন ধরনের আচরণ? তার পত্রিকা ও বক্তব্যের মধ্যে শাসকগোষ্ঠীর অপকর্মের কথা তুলে ধরাই কি তার অপরাধ? আমরা টিভির পর্দায় দেখি যখন তাকে আদালতে হাজির করা হয় তখন বেচারা হাঁটতে পারেন না। অথচ তাকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন তো তিনি হাসতে হাসতেই গেলেন। কোন সভ্য সমাজে কোন সভ্য দেশে এমনটি কাম্য হতে পারে না যে, এদেশের একজন সাবেক আমলা যার সততার মাধ্যমে দেশের উপকার হয়েছে, তার সাথে এ আচরণ এটা কেবল তার শরীরেই ব্যথা লাগে না, এদেশের কোটি কোটি মানুষ আজ ব্যথিত। এমন একজন মানুষের জন্য আজ আমাদের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে, রিমান্ডের নামে তাকে এ রকম নির্যাতন হলে আগামীতে আরো সম্মানিত নেতানেত্রী যারা রাজনীতি করছেন তাদের যে বিবস্ত্র করা হবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে।
রিমান্ডে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আমরা অনেক লেখনি ও ব্যক্তিত্ববান এমনকি আইনজীবীদের কথাও শুনেছি। কই রিমান্ডে নির্যাতন তো বন্ধ হচ্ছে না। শোনা যায়, যাদেরকে নির্যাতন করা হয় বিচারকের সামনে তা বলতেও নাকি দেয়া হয় না। কোর্টে নেয়ার পূর্বেই বলে দেয়া হয় সাবধান বিচারকের সামনে এসব বললে পরবর্তীতে আরো বেশি নির্যাতন করা হবে। সুতরাং রিমান্ডের নামে ভিন্নমতের ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন বন্ধ হতে হবে।
না হলে এটা আমাদের সকলের জন্যই ভয়াবহ ফলাফল বয়ে আনতে পারে। তারেক রহমানকে যেভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে তার বর্ণনা দেয়া হলে সরকার পক্ষ অর্থাৎ ফখরুদ্দিন সরকারের মুখপাত্ররা বলেছিলো তারেক রহমানের মেরুদন্ডে পূর্ব থেকেই সমস্যা ছিলো। অর্থাৎ তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে পিটিয়ে যে তথ্য নেয়া হয় তা সঠিক তথ্য না-ও হতে পারে। নির্মম নির্যাতনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে হয়তো কোন কথা বলে অথবা নির্যাতনের সময় বলা হয় এসব কথা বলো তা হলে আর নির্যাতন হবে না।
মানুষ বিপদের সময় একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য স্বাভাবিক ভারসাম্য হারিয়ে অনেক কিছুই বলতে পারে। অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করার কত পন্থাইতো রয়েছে। জনাব মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পত্রিকার হাসমত সাহেবের সাথে প্রতারণা করেছেন কি করেননি তা তদন্ত করেই বের করা যায়। তাকে পিটিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে বল্ বেটা প্রতারণা করেছিস কিনা? না হয় উলঙ্গ করে ফেলবো অন্ধকার ঘরে রাখবো। আবার ৮ দিনের রিমান্ডে দেয়া হয়েছে জঙ্গি কানেকশনের তথ্য বের করার জন্য।
মাহমুদুর রহমানের সাথে জঙ্গিদের কানেকশন আর যাদের বোন বিয়ে করেছে, শীর্ষ জঙ্গি নেতা তাদের সাথে কানেকশন নেই? বোন বিয়ে দেয়ার পর যারা দীর্ঘদিন দেখলো তার ভগ্নীপতি জঙ্গির সাথে জড়িত তখন তিনি কেন বললেন না জঙ্গিতো আমার ঘরের মধ্যেই, জঙ্গি আমার হাতের মুঠোয়। যখন একেবারে স্বীকার না করেই পারেন না তখন বলেছিল হ্যাঁ সে আমার বোনের স্বামী তবে তার সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেকদিন থেকেই নেই। মুফতী হান্নান কোন রাজনীতির সাথে জড়িত আর কোন রাজনীতির দলের নেতার ভাই তা তো জনগণ জেনেছে, তবে তাদের সাথে কাদের কানেকশন ওনাদেরকে জিজ্ঞেস করলেই পাওয়া যাবে। অযথা মাহমুদুর রহমানের সাথে জঙ্গি কানেকশন সে জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করে দিতে হবে এমন সব কথা বলে শান্তিকামী জনগণের হৃদয় আঘাত হেনে সরকার মনে হয় ভাল কাজ করছেন না। ময়দানে জরিপ চালিয়ে দেখার অনুরোধ রইলো জনাব মাহমুদুর রহমানের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে।
এখন টিভি পর্দায় যখনই মাহমুদুর রহমানের বক্তব্য শোনা যায় গৃহবধূরা বলে থাকেন এ লোকটি অত্যন্ত বুদ্ধি রাখেন। বলা হয়ে থাকে লোকটির বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর নির্ভিক দেশপ্রেমিক। তার লেখা যেদিন পত্রিকায় ছাপা হয় সেদিন পত্রিকার সার্কুলেশন আর যে দিন তার লেখা ছাপা হয় না সেদিনের সার্কুলেশন তুলনা করলেও তার পাঠকপ্রিয়তা প্রমাণিত হবে। অতএব মাহমুদুর রহমান কেবল একটি নাম নয় কোন দলের নেতা এ পরিচয়ও তার পরিচয় নয়। বলতে হবে মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের একটি অমূল্য সম্পদ।
ভীনদেশীরা তাকে ভয় পায় বলেই কারো না কারো মাধ্যমে তার ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য মরিয়া হয়ে লেগেছে। তার মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে পারে নব্য মালয়েশিয়া, হতে পারে, একটি সুন্দর সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশে রূপান্তর, তার যোগ্য নেতৃত্বে এদেশের মানুষ নেতৃত্বের সংকট থেকে মুক্তি পাবে। এটাই কি ভীনদেশীদের ভয়ের কারণ। যারা আমাদের দেশকে একটি করদরাজ্যে পরিণত করতে চায় এবং এদেশের কিছু জ্ঞানপাপী যারা আমাদের মানচিত্র মুছে ফেলে ভীনদেশীদের সাথে ঘরসংসার করার ব্যর্থ পরিকল্পনা করছে তাদের যৌথ ষড়যন্ত্রের শিকার প্রখ্যাত এ গুণীব্যক্তি জনাব মাহমুদুর রহমান। এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে এটা আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে।
আমরা যদি সচেতন হই তাহলে যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন সময়ের ব্যবধানে দেশপ্রেমিক জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদের নিকট তা ম্লান হতে বাধ্য। মনে রাখতে হবে, সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। মিথ্যা আর ষড়যন্ত্র কখনই স্থায়ী হয় না হওয়া সম্ভব নয়।
উপ-সম্পাদকীয় দৈনিক সংগ্রাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।