‘খনা’
রচনা:সামিনা লুৎফা নিত্রা
নির্দেশনা:মোহাম্মদ আলী হায়দার
বটতলা প্রযোজনা-৩
প্রদর্শনীর তারিখ:২৯/০৪/১০
১. যেভাবে রাজনৈতিক ডাক দিয়ে নাটকটি শুরু হয়েছিল,কিন্তু নাটকের আগাগোড়া দেখানো হয়েছে প্রেম। প্রেম ছিল এখানে খুব স্পষ্ট-লিলাবতী(খনা)’র সাথে তার স্বামীর প্রেম,কৃষক শ্রেনীর সাথে লিলাবতী’র প্রেম বা তাদের প্রতি খনা’র মমতা,সবই ছিলখুব স্পষ্ট এবং নাটকের অনেক অংশ জুড়েই। অভাবটা ছিল এই প্রেম বা মমতা যেভাবে জন্ম নিল তার বর্ননার। প্রেম যেমন এখানে বৃহৎ অংশ জুড়ে ছিল,রাজনীতি বা কৃষি নিয়ে কৃষকের জ্ঞানের উপস্থাপন ছিল খুব অল্প অংশ জুড়ে।
কথাগুলো একারনেই বললাম যে,নাটকটি শুরু করার আগে “বটতলা’র পক্ষ থেকে এবং মামুনুর রশিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য শুনে নাটকটি সম্পর্কে একটি অন্য রকম প্রত্যাশা জন্মেছিল।
মামুনুর রশিদ তার বক্তব্যে অরগানিক কৃষি পদ্ধতি প্রত্যাক্ষানের ডাক দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন এই নাটকটি বাংলার কৃষি নিয়ে গবেষনার একটি ফসল। অন্যদিকে বটতলার পক্ষথেকে যে বক্তব্য শুনেছিলাম তাতে মনে হয়েছিল,কৃষক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকার ফলে যে জ্ঞান লাভ করে তার উপস্থাপন ঘটবে নাটকটিতে। কিন্তু নাটক জুড়ে সেই বিষয় গুলো খুব কমই ছিল।
কৃষি উৎপাদন যে একদল গন্ডমূর্খ লোকের কাজ না,এটা যে একদল গবেষকের কাজ- এই সত্যের উপস্থাপনা দেখতে চেয়েছিলাম এই নাটকে। কলা’র ফলন নিয়ে যে বচন আমরা এই নাটকে দেখি,এই ধরনের অনেক বচনেরই সংযোজন থাকা জরুরি ছিল।
তাহলে বোঝা যেত অক্ষর জ্ঞানহীন ঐসব মেহনতি মানুষগুলো কতবিশাল জ্ঞানের অধিকারী।
আমার কাছে মনে হয়েছে নাটকটি খনা’র জীবনের কয়েকটি খন্ডচিত্র মাত্র।
২. Supporting character গুলোর দূর্বল অভিনয়ের জন্য নাটক থেকে বারবার দূরেসরে যাচ্ছিলাম। ধন্যবাদ জানায় সামিনা লুৎফা নিত্রার অসাধারন অভিনয়ের জন্য। এত সুন্দর ভাবে খনা চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন যে খনার বচন শুনলে বা বলতে গেলেই যেকারও মনে তাঁর মুখটি ভেসে উঠবে আমি নিশ্চিত।
৩.নাটকটির একটি কোরিওগ্রাফি(খনা এবং তার স্বামীর প্রেম)ছাড়া বাকীসবগুলো কোরিওগ্রাফি খুব সাধারন মানের মনে হয়েছে। একটি কোরিও মনে হয়েছে খুবই অপ্রয়োজনীয়(যখন গনক তার ছেলেকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার বর্ননা করছিল তখন দুই বা তিন সারিতে সাদা কাপড় মোড়া কিছু পারফরমার মঞ্চের ভেতর দিয়ে চলে যায়। তখন আবার ব্লাক টিউবও ব্যবহার করা হয়। )
৪. মঞ্চ এক কথায় অসাধারন ছিল। সেট ডিজাইনারকে ধন্যবাদ।
৫.কোন কোন সময় মনে হয়েছে music এর কারনে নাটক তার প্রান হারাচ্ছে।
৬.নাটকে ২বার ব্লাক টিউব ব্যবহার করা হয়। ব্লাক টিউবের ব্যবহার কতটুকু প্রয়োজন ছিল তা এখনও বুঝতে পারছি না।
স্টুডিও থিয়েটার হল-এ এই প্রথম আমার নাটক দেখা। একটা কথায় বারবার মনে হয়েছে নাটকটি স্টুডিও থিয়েটার হল-এ করার ফলে দর্শক সহজেই নাটকটির ভিতর ঢুকতে পেরেছে।
মনে হয়েছে স্টুডিও থিয়েটার দর্শককে আরওবেশি কাছে টানতে পারে।
একটি ধারনা:
সম্ভবত এই নাটকের এটিছিল তৃতীয় প্রদর্শনী। পরের প্রদর্শনীগুলোতে নাটকটিতে বেশকিছু পরিবর্তন হতে পারে বা পরিবর্তনটা জরুরী। সেটা যদি স্ক্রিপ্টের ক্ষেত্রে হয় তা হবে দর্শকদের জন্য চরম প্রাপ্তি।
পুনশ্চ: “তীর্থঙ্কর” দেখার অভিজ্ঞতা এবং একই সাথে তৃপ্তি আমাকে সামিনা লুৎফা নিত্রা’র “খনা”-র দিকে টেনে নিয়েছিল কিন্তু এবার আর তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারলাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।