আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
সাম্রাজ্যবাদি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি শেভরন পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা করেছিল, সেই মামলার রায়ে বাংলাদেশ জিতেছে। অর্থাৎ পেট্রোবাংলার জয় হয়েছে। দীর্ঘদিন একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল, আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে সাম্রাজ্যবাদি বহুজাতিক কোম্পানি জিতবে। প্রায় একই ধরনের কথা অনেকে বলেছেন।
আগের সরকার এই মামলাটি পাশ কাটিয়ে যেতে চেয়েছে বলে অভিযোগ। আর তাই প্রথম দিকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে কোনো যুক্তিতর্কই উপস্থাপন করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে এই মামলার আইনজীবী বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন এক পক্ষের যুক্তি শুনে রায় দিলে রাষ্ট্রের প্রতি অবিচার করা হবে বলে দৃঢ় মত ব্যক্ত করলে বিষয়টি আর সেদিকে এগোতে পারেনি। এ বিজয় আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ এই প্রথম আন্তর্জাতিক আদালতে আনীত কোনো মামলায় জয়ী হলো।
এটি দেশের ভাবমূর্তির জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ জন্য মামলা পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী হিসেবে ড. কামাল হোসেন বিশেষভাবে অভিনন্দনযোগ্য।
শেভরন বাংলাদেশের বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে সরকারের কাছে বিক্রি করে। চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস বাজারজাত করতে সরকারের পাইপলাইন ব্যবহার করা হচ্ছে। জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের জন্য সরকারকে তাদের ৪ শতাংশ হুইলিং চার্জ দেওয়ার কথা থাকলেও শেভরন তা অস্বীকার করে ২০০৬ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক আদালতে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে মামলা করে। এই মামলা মোকাবিলায় পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।
অবশেষে মামলাটি আদালত খারিজ করে শেভরনকে কমপক্ষে সাত হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশকে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি শুধু স্বস্তির বিষয়ই নয়, আনন্দেরও বটে। আনন্দের বলছি এ জন্য যে বিদেশি কোম্পানিগুলো গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশকে ঠকিয়ে থাকে। তারা অতিরিক্ত মুনাফাসহ কস্ট রিকভারির নামে লুটের নানা কৌশলে বাংলাদেশকে চরম ক্ষতিগ্রস্তও করছে বটে। শেভরনের দায়ের করা মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আশাবাদি হতে উৎসাহিত করছে।
১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া ব্লো-আউটে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে অক্সিডেন্টাল কোম্পানির অবহেলা-অদক্ষতা-অব্যবস্থাপনা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। ১৩ বছর পূর্ণ হলেও অক্সিডেন্টালের উত্তরসুরি শেভরন এখনো মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আমার সত্যিই আশ্চর্য লাগে, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে শেভরন বাংলাদেশে টিকে আছে কীভাবে? হয়তো তারা তাদের সঙ্গে পেয়েছে এ দেশের কতিপয় অসাধু, দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাবানকে।
শেভরনের দায়ের করা মামলাটি চলে চার বছর এবং তিন দফা শুনানি শেষে ১৮ মে ২০১০ ওই আদালত পেট্রোবাংলার পক্ষে রায় দেন। এর সঙ্গে সঙ্গে বিবিয়ানা ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের হুইলিং চার্জ সংক্রান্ত জটিলতা দূর হয়ে গেল।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পেট্রোবাংলা ও শেভরনের মধ্যে সম্পাদিত উৎপাদন-অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) আলোকেই আন্তর্জাতিক আদালত রায়টি দিয়েছেন, তা খুব সহজেই বোধগম্য। আমরা অবশ্যই মনে করতে পারি, এ রায় কেবল বাংলাদেশের স্বার্থই সুরক্ষিত করেনি, সার্বিক জ্বালানি খাতে ইতিবাচক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাবও ফেলবে। এর মধ্য দিয়ে মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ আদায় করাসহ বিরোধপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী। তবে মূল দলিলপত্রে ত্রুটি থাকলে শুধু আত্মবিশ্বাস কোনো কাজে আসবে না। তেল-গ্যাস উৎপাদন-অংশীদারিত্ব চুক্তিগুলোর স্বচ্ছতা ও জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করা চাই।
শেভরনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি রয়েছে, এ চুক্তির বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। এই চুক্তিটি বাতিলের জন্য জনগণের জোরালো দাবি রয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন অক্সিডেন্টালের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মৌলভীবাজারের গ্যাসক্ষেত্র মাগুরছড়ায় বিস্ফোরণ ঘটে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় বিপুল। তদন্তে ওই বিস্ফোরণের জন্য অক্সিডেন্টালের অবহেলা ও অদক্ষতাকে সরাসরি দায়ী করা হলেও বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ম. তামিম মজুদকৃত গ্যাসের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেননি। ওই বিস্ফোরণে পুরো গ্যাসফিল্ড বিনষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা কেন করা হলো না, এ রহস্য উন্মোচনে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়াসহ অবশ্যই রাষ্ট্রবাদী মামলা করা দরকার।
ধারাবাহিক-১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।