আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোদা মাটির গন্ধে



জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড উত্তাপে প্রকৃতি যখন নিজেই ক্লান্ত আর নিস্তেজ,উত্তপ্ত সূর্যের উত্তাপে তেলহীন কড়াইয়ের মতন পুড়ছে ধূমায়িত ভাবে তখন আপাদমস্তক ঘর্মক্লান্ত মানুষও অতিষ্ঠ সেই উত্তাপে। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে পীচঢালা রাস্তায় অফিস ফেরত বাসের প্রতীক্ষায় অথবা গিজগিজ করতে থাকা কটু ঘামের গন্ধে একজনের পিঠে পিঠ লাগিয়ে বাদুর ঝোলার মত ঝুলার সময় প্রচন্ড গরম থেকে রক্ষা পেতে হয়তো স্রষ্টার কাছে প্রত্যাশা এক চিলতে মেঘ,মেঘের ছায়া অতপর বৃষ্টির। হঠাৎ চলতে চলতে যখন সত্যি সত্যি দেখে পুব কিংবা দক্ষিন আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে ঠিক তখনই তার মনের কোণেও এক টুকরো মেঘ জমতে থাকে। হয়তো জানে আজ বাসায় ফিরতে দেরি হবে,ম্যানহোল বন্ধ হয়ে রাস্তায় পানি জমবে,দশটা রিক্সাকে বলে একটা যেতে রাজি হলেও দ্বিগুন ভাড়া দাবি করবে। তবুও পৃথিবীর উপর জেঁকে বসা ভেপসা গরম থেকে বাঁচতে পারবে বলে মনের কোণে এক চিলতে সুখানুভূতি ঝিলিক দিয়ে যায়।

অনুভূতির তীক্ষ্মতায় সে হয়তো অনুভব করে অনাগত বৃষ্টির কোমল আর মোহনীয় ছাট। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলে উন্মুক্ত আকাশের দিকে নিজের ভিতর আর বাহিরটাকে মেলে ধরে দ্বীধাহীন ভাবে আকন্ঠ ভিজতে থাকে আপাদমস্তক,অবরোধ আর প্রতিরক্ষার দেয়াল ভেঙ্গে ভিজে প্রকৃতির মতন নিজেও হতে চায় স্নিগ্ধ আর পরিশুদ্ধ। আর মনের কোণে বাজতে থাকে,বৃষ্টি মানে কর্ষিত মাঠ,উলট পালট হালট ঘালট...বৃষ্টি মানে গোলাপ ফোঁটার পরাগায়ণ...। জীবনের খেরুখাতা খুলে বসে আমিও হই স্মৃতি কাতুর। মনে পড়ে সেই জ্যৈষ্ঠের দুপুরে সব ভুলে উন্মত্ত বাতাসের উন্মত্ততায় আম কুডোনোর ধুম অথবা গ্রামের পুকুরে গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে বৃষ্টির সাথে নৃত্য।

অথবা সন্ধার আগেই ঘনিয়ে আসা সন্ধায় জানালার ধারে বসে বৃষ্টির ছলছল জলধারার সাথে নিজের মনের অনুভূতি গুলোকে ঐক্যতানে রাখা। আজও ইট,কাঠ আর পাথরের বদ্ধ নগরীতে বৃষ্টি আসে,যে বৃষ্টির তাল শুধু পাশের বাড়ীর ছাদে ছন্দ তুলে আর ম্যানহোল উপচে পড়ে রাস্তা ভাসিয়ে দেয়। এই ইট,কাঠ আর পাথরের নগরীতে নেই সেই সোদে মাটির গন্ধ,যে গন্ধে বাউল একতারা হাতে ঘরের টান ছেড়ে বৈরাগী সাজে। ভিজে চুপসে যাওয়া যুবুথুবু প্রকৃতিতে নেই ব্যাঙের ডাক,নেই পাখপাখালির ডানা ঝাপটানো কিচির মিচির কলতান। আছে শুধু দম বন্ধ হওয়া গুমোট বাতাস।

আছে চোখের দৃষ্টি সীমা প্রতিহত করা দালান যা কিনা অসীম আকাশকেও সংকীর্ণ করে দেয়। ছোট্ট মনের পরিধীটাকে আরও ক্ষুদ্র করে দেয়। তাইতো ঘর ছাড়া বাউলের মত এই বৃষ্টিতে আবার ইচ্ছে করে গ্রামের সেই মেঠো পথে হাটতে। সোদা মাটির গন্ধ নিয়ে খালি পায়ে কাদা লাগিয়ে ঘাসের গালিচায় প্রকৃতির স্পর্শ নিতে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।