আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -আমি গতকালকে একটা হুইল চেয়ার কিনে এনেছি ।
আমি এই একটা লাইন বলেই চুপ করে রইলাম । আসলে অহিনের মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করছি । অহিন চায়ের কাপে সবে মাত্র চুমুক দিতেছিল থেমে গেল ।
-কি বললেন ?
আমি একটু হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
-শুনো নাই ?
অহিন হাসলো না । আমি ওর সামনে গিয়ে বসলাম । ওর হুইল চেয়ারের দুই হাতলে হাত রেখে বললাম
-এটাই তো আমাদের মাঝে বাধা । তাই না ? আমিও যদি এইটা ব্যবহার করি তখন তো আর আমাদের মাঝে আর কোন বৈষম্য থাকার কথা না তাই না ?
-দেখুন এটা কিন্তু ...
আমি অহিনের কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম
-জানো আমি ঠিক করেছি আমার বাম পা টা ভেঙ্গে ফেলবো । তারপর হুইল চেয়ারে করে তোমার সাথে ডেটিংয়ে যাবো ।
এটা ভাল হবে না বল ! একবার কল্পনা করে দেখো তো ?
-স্টপ । ইজ দিস জোক টু ইউ ?
আমি অহিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোমার তাই মনে হচ্ছে ? আমি জোক করতেছি ?
-দেখুন আপনি স্রেফ পাগল হয়ে গেছেন । স্রেফ পাগল ।
-হুম । আমি পাগল হয়ে গেছি ।
তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছি । আর পাগলে কি করে কে জানে !
আমি আসলেই অহিনের জন্য পাগল হয়ে গেছি । ভাবতে অবাক লাগে কয়দিন আগেও আমার জীবনে অহিনের নাম নিশানা ছিল না আর এখন অহিন ছাড়া অন্য কোন কথা আমি ভাবতেই পারছি না ।
আমার এখনও মনে আছে প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিল কেমন মন মরা হয়ে বসেছিল ওদের বাগানটার ভিতর । সম্পর্কে রায়হানের ছোট বোন ।
রায়হান আমার কলিগ । একদিন ওদের বাসায় গিয়েই অহিনকে দেখি । বড় বাগানটার পাশে একটা বেঞ্চে অহিন বসেছিল । পাশে একটা হুইল চেয়ার রাখা ।
অহিনের মুখটা কেমন বিষন্ন ছিল ।
আমার রায়হানকে ফোন করে বলার কথা ছিল আমি এসেছি কিন্তু আমি ঐ বেঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলাম ।
-হ্যালো ।
মেয়েটি কিছু একটা ভাবছিল আমার কথায় বাস্তবে ফিরে এল ।
-হ্যালো ।
-এটা রায়হানদের বাসা না ?
-জি ।
আপনি অপু ভাইয়া ? ভাইয়া বলছিল আপনি আসবেন ।
আমি বেঞ্চে বসলাম ।
-তুমি অহিন ?
-জি । তোমাদের বাসাটা অনেক সুন্দর । ঢাকা শহরে এমন বড় বাগানওয়ালা বাড়িতো দেখাই যায় না ।
অহিন একটু হাসলো । আমি কেবল অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মানুষ এতো মায়াময় হাসি কিভাবে হাসতে পারে !
অহিন কিছু বলছিল কিন্তু আমি ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে রইলাম । আর কিছু আমার মনেছিল না ।
ঐ দিন রায়হানের সাথে দেখা না করেই আমি বাসায় চলে এলাম ।
কোন একটা কিছু খুব ভাল লাগলে বা কোন কিছুর উপর তীব্র আকর্ষন সৃষ্টি হলে তত্ক্ষণিক সেটার থেকে দুরে চলে যেতে হয় । চোখের সামনে থেকে চলে গেলেই মনের সামনে থেকে চলে যাবে । কিন্তু অহিনের ভুত মাথায় চেপে রইল । বারবার ওর মায়াময় হাসিটা ভাসছিল ।
পরদিন অফিসে রায়হানের সাথে দেখা হলে ও অনেক কথা জানতে চাইল ।
একটা কথাই আমি কেন গতকাল ওর বাসায় গিয়েও ওর সাথে দেখা না করেই চলে এলাম । কতবার ফোন দিয়েছে ও কেন আমি ধরি নি এই রকম কত প্রশ্ন । আমি কেবল উত্তরে বললাম
-আমি তোমার বোনকে বিয়ে করতে চাই ।
কিভাবে কথাটা বললাম কে জানে তবে বলে দিলাম । রায়হান কিছুক্ষন আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইল ।
আমি আবার বললাম
-আমি অহিনকে বিয়ে করতে চাই ।
-তুমি ঠিক আছো ?
-হুম ।
-অপু । সত্যিই তুমি জানো তুমি কি বলছো ?
আমি জানি । আমি জানি ।
-আপনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চান ?
অহিনের কথাটার জবাব আমি চট করে দিতে পারলাম না । কেবল তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । ওকে নিয়ে ওদের বাগানে ঘুরছিলাম । এমন সময় ও কথাটা বলল । অহিন আবার বলল কথাটা ।
-আমি জানি না ।
-করুনা হচ্ছে ? বন্ধুর বোন প্রতিবন্ধি ? কেউ বিয়ে করবে না ! কেউ .....
-চুপ । প্লিজ চুপ ।
-আপনি কারো করুনার পাত্র হতে চাই না ।
-আশ্চর্য আমি তোমাকে কেন করুনা করবো ?
আমি ওর হুইল চেয়ারের সামনে এলাম ।
-আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো । এখানে তুমি আসল সত্যটা জানতে পারবে ।
অহিন কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল । তারপর বলল
-দেখুন আমি নিজেই একজন বোঝা । আপনার যোগ্য না ।
এই দেখুন আপনি চাইলেই নিজের পায়ে দাড়াতে পারেন । আমি পারি না । আমাকে এই হুইলচেয়ারের সাহায্য নিতে হয় ।
-তারমানে কি আমিও যদি হুইল চেয়ারে চলাচল করতাম তাহলে তুমি আমার যোগ্য হতে ।
-দেখুন আপনি বাজে কথা বলছেন ।
-পাগল হয়ে গেছি ?
-হুম ।
-আমি বাজে কথাই বলছি । এবং দেখো আমি এই পাগলামীই করবো ।
অহিনদের বাসায় সবাই খুব খুশি ছিল আমার প্রস্তাবে । রায়হান যতটুকু আমাকে চেনে তাতে আমার কাছে তার বোনকে বিয়ে দিতে তার বিন্দু মাত্র আপত্তি থাকার কথা না ।
আমি প্রতিদিনই ওদের বাসায় যেতাম । রায়হানের সাথে গল্প করতাম । অহিনের বাবার সাথে আড্ডা দিতাম । ওদের পরিবারের সবাই মোটামুটি আমাকে এক্সেপ্ট করেনিয়েছিল ও বাড়ির জামাই হিসাবে । কেবল অহিন চুপ করে ছিল ।
আমার মনে হত অহিন আমাকে পছন্দ করে কিন্তু নিজের অক্ষমতার কারনে নিজেকে আমার অযোগ্য ভাবছে । প্রতিদিন ওকে নিয়ে বাগানে ঘুরতাম । প্রতিদিনই ওকে নানান ভাবে প্রোপোজ করতাম ।
আজকে তাই এই কথা বলেছি । বললাম যে আমি নিজেও ওর মত পা খোড়া করে হুইল চেয়ার ব্যবহার করবো ।
তখন নিশ্চই আর আমাদের মাঝে কোন বাধা থাকবে না ।
রাতে অহিন নিজ ফোন দিল ।
-হ্যালো ।
-কি খবর ? এতো রাতে ফোন দিলে যে ?
-আপনি বিকেল বেলা যা বললেন ..
-হুম ।
-আপনি ওটা করবেন না ।
কথা দেন করবেন না ।
-আরে কি বল ? আমি তো সব ঠিক করে রেখেছি । এখন থেকে আমরা দুজন একসাথে হুইলচেয়ারে ঘুরবো । একবার আমি তোমাকে ধাক্কা দিবো আর একবার তুমি দিবা ।
-দেখুন ফাজলামো করবেন না ।
-আরে শুনো না আমি ঠিক করে রেখেছি আমার হুইলচেয়ারে একটা মোটর লাগাবো । তাহলে ভাল হবে না বল ?
-অপু প্লিজ চুপ করেন ।
-কেন ? ভাল লাগছে না ?
-না । আমি ভাবতে পারছি না কেউ আমার জন্য এমন পাগলামো করবে । আমার মত একটা লেইম মেয়ের জন্য !
আমি অহিনকে ধমক দিয়ে উঠলাম ।
-কি বললে তুমি ? লেইম ?
-লেইমই তো !
-চুপ । আর একবার এই কথাটা বললে থাপ্পর খাবা !
কিছুক্ষন নিরবতা । তারপর অহিন বলল
-আমাকে কোন অধিকারে মারবেন আপনি ? এখনই আমার কথা আপনার সহ্য হচ্ছে না বিয়ের পর তো আরো হবে না ।
-আমার বউকে আমি মারবো !
-ইস ! বউ পেটাবেন ?আপনার নামে কেইস করে দিব !
আমি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম ।
অহিন কি বলল ? আমি খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বললাম
-কি বললে তুমি ?
-কেইস করে দিব ।
-তাই ?
-হুম ।
হঠাত্ মনটা ভাল গেল । খুব বেশি ভাল । আমি বললাম
-আমি এখনই আসছি ।
-এখন ? কেন ?
-তোমার মত চেঞ্জ হওয়ার আগেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই ।
-আমি কখন রাজি হলাম ?
-তোমার রাজি হওয়া লাগবে না । আমি আসছি ।
-প্লিজ এখন না ।
-না আমি কিছু শুনবো না । আমি আসছি ।
তোমাকে খুব দেখতে মন চাইছে । আমি এখনই আসছি ।
অহিন কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আচ্ছা ! আমি অপেক্ষায় আছি ।
আমি জলদি জামা কাপড় পরে নিলাম । যত দ্রুত অহিনের কাছে যাওয়া যায় !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।