আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজিমপুরে লাশের মিছিল

ফুলের সৌরভে সুরভিত কলমের কণ্ঠস্বর

জুম্মার নামাজের পর পুরান ঢাকা থেকে একের পর এক লাশ আসতে শুরু করেছে আজিমপুর কবরস্থানে। নাজিমউদ্দিন সড়ক দিয়ে শুক্রবার বাদ জুম্মা ট্রাকে করে স্বজনরা নিয়ে আসছে এসব লাশ। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। লাশগুলো রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকার বৃহস্পতিবার রাতের আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারানোদের। বৃষ্টির কারণে আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফনকাজে বিলম্ব হয়।

এ সময় লাশগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মারা গেছে ৯৭ জন। আহত দেড় শতাধিক মানুষের অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের স্মরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। শুক্রবার আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি এ ঘোষণা দেন।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর বেগুনবাড়িতে ভবন ধসে ২৫ জনের প্রাণহানির ঘটনার রেশ না কাটতেই বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকার আগামাসি লেনের কায়েতটুলির সাপ মন্দির রোডে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ওই আগুনের সূত্রপাত বলে দমকল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, আগুন চোখের পলকে আশপাশের অন্তত ৫-৬টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী বলেছে, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য রান্নার সময় ঘটনাস্থলে ট্রান্সফরমারটি বিস্ফোরিত হয়। আশপাশের কাগজের দোকান, জুতা ও প??াস্টিক সামগ্রীর কারখানার দাহ্য পদার্থে আগুন লেগে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৩/১- এর পাঁচতলা ভবনটি।

জেলা প্রশাসক মহিবুল হক গতরাতে সাংবাদিকদের জানান, নিহত সবার দাফন আজিমপুর কবরস্থানে করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে বিয়ের পানচিনি অনুষ্ঠানটি ছিল হবু কনের বাড়িতে। বড় বোনকে নিয়ে হবু কনে গেছেন পার্লারে। হবু বর তখনো আসেননি। বরের মা ও কনের মাসহ আত্মীয়স্বজনে গিজগিজ করছে নবাব কাটরার ৪৩/১ বাড়িটির তিন তলা।

এরই মধ্যে আগুন। মিলিয়ে গেলো সব আনন্দ। মুহুর্তেই হবু বর ও কনের মায়েরাসহ দুই পরিবারের কমপক্ষে ১৩ জনের জীবনপ্রদীপ নিভে গেলো। এখনো নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক অবু নাইম মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের বাড়ি থেকেই বেশিরভাগ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিয়ের কথাবার্তা চলছিল বেশ কয়েকদিন থেকেই। বৃহস্পতিবার পানচিনির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সন্ধ্যার পর থেকেই নবাব কাটরার এই বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসতে থাকেন। হবু বর জামিল উদ্দিনের ১৮/১০ হোসেনি দালান শিয়া গলির বাসা থেকে মা শাহজাদি বেগম, ভাই শিমুল, শিমুলের ছেলে কুমাইল, মামি নাজনীন, খালা হাবিবা, জামিল উদ্দিনের দোকানের কর্মচারি জসিমসহ বেশ কয়েকজন আসেন কনের বাড়িতে। বরের আত্মীয়স্বজনকে অভ্যর্থনা জানাতে বাড়ির মূল গেটে ছিলেন কনের ছোট ভাই ফয়সল। পাঁচতলা এই বাড়িটির নীচ তলার পুরোটাই রাসায়নিক পদার্থের গুদাম।

"একটি বিকট শব্দ, এর পরেই ছোটাছুটি। তাকিয়ে দেখি, রাসায়নিকের গুদামে আগুন আর আগুন। কোনো কিছু বুঝার আগেই পুরো বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তোড়ে বাসার ভেতর না ঢকুতে না পেরে নিরাপদ দুরত্বে চলে যাই। এসময় বাসার ভেতর থেকে চিৎকার আর আহাজারি কানে আসে," কান্না জড়িত কন্ঠে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন ফয়সল।

আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসে হবু বর জামিল উদ্দিন। সুন্দর সাজে হবু কনে রুনা। তারা ঘটনার সময় অন্যদের মতো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে পুড়তে থাকা ভবনটির দিকে। এক পর্যায়ে এই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর উদ্ধার করা হয় বরের মা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, মামি, খালা দোকান কর্মচারির লাশ। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় কনের মা ফাতেমা বেগম, খালাতো ভাই সিমেন, খালাতো বোন অনিকা, চাচাতো বোন জোৎসনা, জোৎসনা;র ছেলে মুকিত, দুই খালা সাজেদা ও মেহেরা।

শুক্রবার সকালে জামিল উদ্দিনের সমানে গিয়ে পরিচয় দেওয়ার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ প্রতিনিধিকেই প্রশ্ন করেন তিনি, "সাংবাদিক ভাই আপনিই বলেন আমি এখন কি করবো। " ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার রাতেই সাংবাদিকদের বলেছেন, এই ভবনটি থেকে এই ১৩ জন ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নীচ তলায় রাসায়নিকের গুদাম থাকায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ফলে ক্ষতির পরিমানটি এই ভবনেই বেশী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।