আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিলিকন ভ্যালির স্কুল পড়ুয়া সিইওদের গল্প

সাধারণ মানুষ, কিন্তু এই দেশে সাধারণের দাম নেই

মিজ ডায়ান কেং এখনও হাইস্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেননি। বয়স মাত্রই ১৮। কিন্তু টেক বিশ্বে মুগ্ধতা ছড়িয়ে এই বয়সেই নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি সানফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত ওয়েব ২.০ এক্সপোতেই চালু করলেন নিজের কোম্পানি MyWeboo.com। জানা গেছে, এটি তার মালিকানাধীন তৃতীয় কোম্পানি।

বলা হচ্ছে, এইটিই সিলিকন ভ্যালির রূপ। বিশ্বের এ প্রযুক্তি রাজধানী সবসময়েই সমৃদ্ধ হয়েছে এমন সব উদ্যোক্তার হাতে যারা গণ্ডি ভাঙ্গা খ্যাপাটের দল। ডায়ান কেংসহ বর্তমান সময়ের এমন সব আত্মবিশ্বাসী কিশোর-তরুণ সিইওদের খবর জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। জানা গেছে, ডায়ান কেংয়ের মাইওয়েবুডটকম নামের ইন্টারনেটভিত্তিক এ কোম্পানিটি টিনএজারদের জন্যই কাজ করছে। এ সাইটটি ব্যবহার করে তারা একইসঙ্গে ডিজিটাল লাইফ আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের জীবনের সঙ্গে বাস্তব জীবনের খাপ খাওয়াতে পারবে।

ফেসবুক আর মাইস্পেসের যুগে নিজ বয়সের কিশোর-তরুণ প্রজন্মের প্রয়োজনকে টার্গেট করেই ব্যবসা ফেঁদেছেন মিজ কেং। কেং তার প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্রই ১৫ বছর বয়সে। এ সময় তিনি টি শার্টের স্ক্রিন প্রিন্ট ব্যবসা শুরু করেন। তারপর তিনি টিন মার্কেটিং কনসাল্টিং ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। পওে অবশ্য তিনি এ ব্যবসাটি বন্ধ করেছিলেন।

কারণ ‘এ ব্যবসায় পয়সা কম’। দ্বিতীয় ব্যবসায় তিনি নিজেকে সব কাজে ঠিকমতো ছড়িয়ে দিতে পারছিলেন না। এজন্য তাকে প্রচুর সময়ও ব্যয় করতে হতো। তাই ওই ব্যবসা থেকেও তিনি সরে আসেন। কেবল কেং নন, সিলিকন ভ্যালিতে এর আগেও অনেক তরুণ উদ্যক্তা আছেন।

এর মধ্যে একজন হলেন গুরবক্স চাহাল। তিনি স্যান হোসে শহরে ক্লিক এজেন্ট নামের অনলাইন অ্যাড কোম্পানি তৈরি করেন। এসময় তার বয়স ছিলো মাত্রই ১৬। এর ২ বছর পরই তিনি কোম্পানিটি বিক্রি করে দেন ৪০ মিলিয়ন ডলারে। এরপর তিনি ব্লু লিথিয়াম নামে আরেকটি অ্যাড নেটওয়ার্ক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

২৫ বছর বয়সে যখন তিনি সেটা বিক্রি করে দেন তখন এর দাম পেয়েছিলেন ৩০০ মিলিয়ন ডলার। সিলিকন ভ্যালির আরো একজন তরুণ উদ্যোক্তা ক্রিস্টোফার টেইট। তার বয়স এখন মাত্র ২২। এখন তিনি জাপানের টোকিওতে বসে ইন্টারনেটভিত্তিক কোম্পানির পোর্টফোলিও এর দেখাশোনার ব্যবসা করেন। এখন আর তার ফটো শেয়ারিং সাইট জুমার্স-এর দৈনন্দিন কাজটিও দেখতে হয় না।

কিন্তু তিনি এই কোম্পানি শুরু করেছিলেন আরো ৫ বছর আগে মাত্র ১৬ বছরেই। আরেক তরুণ উদ্যোক্তা অর্জুন মেহতা। ২০০৬ সালে সিক্স গ্রেডের ছাত্র ছিলেন তিনি। সান হোসের একটি গ্যারেজে ভার্চুয়াল পণ্যের বাজার ‘প্লেস্প্যান ইনকর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তিনি সেখানে কী ভাবে বিভিন্ন আইটেম বিক্রি করা যায় সেটারই চেষ্টা করেছিলেন।

আর এভাবেই তিনি অনলাইন গেমের বিষয়টি ধরে ফেলেন। তারপর নিজেই দাঁড় করান একটি সাইট এবং এর দায়িত্ব তুলে দেন তার বাবার হাতে। অর্জুন মেহতা এখন এইট গ্রেডে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কোম্পানির দায়িত্ব পালন করছেন তার বাবা। গুরবক্স চাহাল জানান তার শ্রমের কথা।

‘আমি আসলে এই কোম্পানিটি দাঁড় করাতে গিয়ে আমার জীবনের সুন্দর সময়টি উৎসর্গ করেছি। দুটি বছর আমার গেছে স্রেফ কোম্পানিটিকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে। এ সময় আমি থেকেছি- ঘুমিয়েছি অফিসেই। ’ স্কুল থেকে ড্রপআউট হলেও ¯^প্নের কোম্পানি তাকে বিমুখ করেনি। তবে সবার কপাল চাহালের মতো নয়।

অনেক কোম্পানিই শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখে না। আর এটি ওই সব উদ্যোক্তার জন্য নিয়ে আসে জীবনের কঠিন শিক্ষা, যে শিক্ষকের নাম হলো বাস্তবতা। রিসার্চ ফার্ম ইউনুডলডটকমের কাজ হলো নতুন কোম্পানিগুলোর উত্থান-পতনের দিকে নজর রাখা। তাদের এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে গড়ে ৩৫ বছর বয়সে কোম্পানি চালু করলে যতোটা সাফল্য আসে, ২৫ বছর বয়সে চালু করলে সে সাফল্যের হারটি কমে আসে প্রায় ২৭ ভাগ। ডায়ান কেং অবশ্য সুবিধাপ্রাপ্তদের দলেই।

বাবার কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক বিনিয়োগের জন্য পেয়েছিলেন ১ লাখ ডলার। আর সিলিকন ভ্যালির কাছাকাছি থাকার সুযোগে তিনি তার অভিজ্ঞতা ভাণ্ডারটিও বাড়িয়ে নিতে পারছেন। তবে সবাই যে এমন সুবিধা নিয়েই এগোয় তা নয়। ডায়ানের স্কুলেই অন্তত ১০ জন উদ্যোক্তা আছেন, যারা সাফল্যের সঙ্গেই একক উদ্যোগে নিজেদের প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। জানা গেছে, ডায়ান কেং কুপারটিনো’স মন্টা ভিস্তা হাই স্কুলের ছাত্রী।

প্রতিদিন সকালে নিয়মিত ক্লাসে হাজিরা দেন তিনি, এমনকি স্কুলের ব্যাডমিন্টন কোর্টে তাকে খেলতেও দেখা যায়। মিজ কেং জানিয়েছেন, ‘আমার বয়স, আমার জেন্ডার বা অভিজ্ঞতার ঘাটতি আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আমি সব বাধা পেরিয়ে কোম্পানির জন্য যা করতে চাই তা করবোই’। ডায়ান কেংয়ের এই দৃঢ়তাই সম্ভবত সিলিকন ভ্যালির চরিত্র। ডায়ানের স্কুলে বিজনেস টিচার কার্ল স্মিড এ দৃঢ়তারই জয়গান গেয়েছেন।

তার মতে এই তরুণ উদ্যোক্তারা যদি ব্যর্থও হন তারপরও তরুণ হিসেবেই তা গ্রহণযোগ্য’।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।