♠ ব্লগার ইমন জুবায়ের ♠ মেঘের আড়ালে থাকা একটি নক্ষত্রের নাম
ছন্নছাড়া প্রথম পর্ব
প্রথম পর্বের পর
ঘামতে ঘামতেই বলে দেয় সে;
আমি যে ছন্নছাড়া সেটা কি জানেন? চাল নেই চুলো নেই। মাথা গোজার ঠাঁই নেই। রুমকির মা কথার মাঝখান থেকে বলে উঠলো নেই, হয়ে যাবে।
নিশীথ সেটা বুঝতে পেরেছে কিভাবে হবে। সে খুব ভালো করে জানে ঘর জামাই হলেই হয়ে যাবে সেটার সহজ সমাধান।
কিন্তু তার পক্ষে সেটা সম্ভব নয় সেটা বলতেও অস্বস্থি।
চার.
সাত সকালে কোকিল ডাকছে।
নেরুদা এসে বললো নিশীথ কোকিল ডাকছে,কি মিষ্টি সে সুর। নিশীথ উদাস হয়ে বললো তো কি করবো এখন ? নেরুদা উৎসাহ বাড়িয়ে বললো কোকিল ডাকলে নাকি বিয়ে হয় !! নিশীথ চমকে উঠে বললো বিয়ে হয় এ কথা কে বলেছে আপনাকে ? কোন কবি যেন তার এক বইয়ে লিখেছিলো। কিন্তু মনে আসছে না বলেই, উঠে দাড়লো নেরুদা।
কথা আরো কিছুদূর গিয়ে ডালপালা মেলতো, কিন্তু গেট খোলার আওয়াজে সেটা থমকে গেল।
গেট পেরিয়ে চুমকী ঢুকছে।
নিশীথ মনে মনে বলে উঠলো এই রে সেরেছে। সাত সকালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে চুমকীর মুখে। নিশীথ না দেখার ভান করে উত্তরে দিকের সেলফের বইয়ে হাত বোলাতে গিয়ে গেয়ে উঠলো ..হে ক্ষণিকের অতিথী, এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া......
পেছন থেকে আপনাকে চাহিয়া বলে, দাড়ালো চুমকি।
চুমকি পাশের সোফায় বসে বললো নেরু দা আপনি একটু বাইরে যান তো আমার একটু কথা আছে। নেরুদা মুখে ভাবনার আকাশ ফুটিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।
নিশীথ জানে আজ চুমকী তাকে ঝাড়বে তাই হাই-হ্যালো প্রসঙ্গটা এড়িয়ে চুপ মেরে গেলো। চুমকী নিশীথের সামনে এসে বললো আপনার সমস্যটা কোথায় বলুন তো ? নিশীথের কথা মুখ থেকে কথা আসলো, আসলে চুমকী সত্যি বলতে কি আমার বিয়ে করবার ইচ্ছে নেই।
-কেন আপনি কি নপুংসক নাকি?
কথা শুনে হকচকিয়ে যায় নিশীথ, এভাবে বলছেন কেন? ওর ঝাঝালো উত্তর, তো কিভাবে বলবো।
আমি তো ছন্নছাড়া; বলে থেমে যায় নিশীথ।
বিয়ের আগে সবাই কমবেশি ছন্নছাড়া থাকে। ঘর সংসার হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি তো আছি; ছন্নছাড়া ভাব গুচিয়ে দেব আপনার, একটানে কথা বলে দেয় চুমকি। নিশীথ বলে উঠে, বিয়ে জিনিসটা একটা ফালতু ব্যাপার; তাছাড়া বিয়ে করে গাধা’রা আমি গাধা হতে পারবো না।
হাত উচিঁয়ে চুমকী বলে আপনাকে গাধাই হতে হবে।
চুমকী কথার স্রোতে ভাসিয়ে দেয় নিশীথ কে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেমে যায় নিশীথের এই কথায়; আমি কোন মেয়ের সাথে এডজাস্ট হতে পারিনা।
পাঁচ
পরদিন বেরুতে যাবে বাড়ীওলা ডেকে বললো নিশীথ শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে
করছো ? ও সিড়ি থেকে নামতে নামতে বললো আপনার কি মনে হয়; আমার গাধা হবার শখ জেগেছে। থমকে গিয়ে বাড়ীওলা বলল কি বলছো যারা বিয়ে করে তারা কি তবে গাধা হয়ে যায়; ক্ষাণিকটা তাই হয়, বলে নিশীথ সোজা,হেটে গিয়ে রাস্তায় নামলো।
নিশীথ বুঝতে পেরেছে শনি-রবি সবক’টাই ঘাড়ে চেপেছে। মোড়ের দোকানের রাশেদভাই বলল; নিশীথ তোমার যে বিয়ে; একটি বার ও তো বললে না। হতবাক হবার আর বাকী থাকেনা ওর। পাশ ফিরে জিজ্ঞেস করে খবরটা কে দিলো আপনাকে। কে আর দেবে তুমি মাষ্টার এ পাড়ায়; তুমি বিয়ে করছো সেটা শুনতে কি আর কারু বাকী আছে।
বিরক্তি মুখে নিশীথ বলে ফেলে মরজ্বালা; এরই মধ্যে খবরটা চাউর হয়ে গিয়েছে; অথচ ও কিন্তু বিয়ে করবে কি-না তাই বলেনি। ফান ফুটের সামনে আসার পর যখন প্রেশের বড়কর্তা বললেন নিশীথ বিয়ে করছো ভালোকথা বিয়ের কার্ডটা কিন্তু আমায় ছাপতে দিও। এ খবর তিনি কিভাবে জানলেন প্রশ্ন করতেই গড়গড় করে প্রেশের বড়কর্তা জানালেন,
কাল বিকালে গলির মুখ থেকে চুমকী কে বেড়িয়ে যেতে দেখে; জিজ্ঞেস করতেই বলে দেয় যে, নিশীথের সাথে বিয়ের কথা বলতে এসেছিলো। তারপর এ কান ও-কান এই ভাবে ছড়িয়েছে।
এই রকম আকাশভাঙ্গা চিন্তা মাথায় নিয়ে পথ চলাটাও বিরক্তিকর সারা সন্ধেটা তিতা টাইপের স্বাদ নিয়ে ঘুড়ে বেড়িয়েছে ও।
মনে মনে বলে কি ঘটছে এ,সব । মা মেয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। বিয়ে না ছাই !! ঘরজামাই করে সারা জীবন গাধার মতো খাটাবে। সারা জীবন একটা মেয়ে ওর উপর কতৃত্ব করবে। ভাবতেই কিরকম জানি লাগে নিশীথের।
শেষ সন্ধ্যেয় একটা গানের কলি ভাজতে ভাজতে বাড়ির গেটে আসতেই নেরুদার সাথে দেখা। এই যে নিশীথ, ভেতরে যাও তোমার শাশুড়ী এসেছে। শাশুড়ী !! বিয়েই হয়নি । নিশীথ বুঝলো কপালে খারাবি আছে। এখন কি উল্টো পথে আবার চলে যাবে।
নাহ্ তা অশোভন।
শেষ পর্যন্ত ভেতরে গেল। শুধু শাশুড়ীই না সাথে রুমকীও। বাড়ীওলা খুব হেসে হেসে কথা বলছেন। ওর স্টুডেন্টরা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে; যেন হঠাৎ করে স্যারকে বোকারাম মনে হচ্ছে।
নিজের ঘরে এসে হতবাক হবার আর এক অধ্যায় দেখতে পেল নিশীথ; রুমকী বসে আছে।
রুমকী বলল নিশীথ দা তুমি নাকি বলেছো, বিয়ে করবে না। তোমার কি কোন গোপন প্রেম-ট্রেম আছে নাকি। নিশীথ বলল না। কি ,যে বলো না তুমি , ছন্নছাড়াদের আবার প্রেম হয় না,কি।
রুমকি ঝাঝ কন্ঠে বলে আজকাল সব হয়;সত্যি করে বল দেখি নিশীথ কানে হাত দিয়ে বলে না। আবার ক্ষেপে যায় রুমকী তাহলে বিয়ে করবে না কেন তুমি। দিদিকে ভালো লাগে না তোমার।
ওদের কে বোঝাবে ঘরজামাই হবার লোক এই ছন্নছাড়া নিশীথ নয়।
ছয়
মাস তিনেক পর চুমকী’র বিয়ের একটা নেমন্তন্ন কার্ড পেলো।
হয়তো নিশীথের ভেতরে একটা জেলাসী ভাব জাগাবার জন্য দেয়া; কিন্তু ছন্নছাড়াদের অতসব ভাবলে চলে না। টাকা থাকলে শেষ বয়সেও বিয়ে করা সম্ভব সেটা জানে ও; কিন্তু সময় চলে গেলে পথে পথে চিন্তাহীন ভাবে ছন্নছাড়াদের মতো ঘুড়ে বেড়ানো সম্ভব নয়।
চুমকীর মা আর রুমকী সেদিন চলে আসার পর বাড়ীওলা খুব করে বোঝালেও নিশীথ সেটা না বোঝার ভান করে থাকলো। সপ্তাখানেক পর আবার একদিন তাতেঁর শাড়ীর মার্কেটে দেখা। চুমকী বলে গেলে র্নিদ্বীধায় দেখুন আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে বলেই আমি বলেছিলাম; ছেলেদেরতো অহংকার খুব কম হয় জানতাম;কিন্তু আপনি তার উল্টো, আজ না হয় কাল; এই মনটা তো একজনকে দিতে হবে না,কি।
নিশীথ এই কথাটা নিয়ে পরে কদ্দিন খুব ভেবেছে সত্যি কি ও অহংকারী হয়ে গেছে; মেয়েটা এতো করে ওকে কাছে টানতে চাইছে আর ও কি,না ....
আর যাই হোক শেষ সিদ্ধান্ত থেকে নিশীথ সরে দাড়ালো না। বিয়ে তার আদৈ সম্ভব নয় যদ্দিন না মাথা গোজার ঠাঁই হয়। ছন্নছাড়াদের জীবনে সময়ের কাজ সময়ে হয়না। আর বিস্তর ভেবে চিন্তে সংসার ,বাচ্চাকাচ্চা না এতোসব ভেবে জীবনের এই রকম একা থাকার আনন্দটা মাটি করা ঠিক হবে বলে মনে হয় না নিশীথের।
তছাড়া জীবনের পথে এই বয়সেই, চিন্তাতরীতে উঠে পড়লে আরো যে কিছু বিস্ময় আছে বাকী তা সারা জীবনই অপূর্নই রয়ে যাবে যে।
তাই আরো পথ দিতে হবে পাড়ি ছন্নছাড়া হয়েই, বিয়ে করে গাধা হবার আরো কিছু দিন আছে বাকী তাই নিশীথ ছন্নছাড়াদের জয়গানে ভূলে গেলো তার জীবনেও ভালোবেসে এসেছিলো কোন এক নারী।
*****সমাপ্ত*******
আমি দু:খিত খুব দেরি করে ২য় ও শেষ পর্ব পোষ্ট দেবার জন্য
আমি দূর্যোগে আছি তাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।