এ-মন একবারই ছুঁয়ে যেতে পারে কেউ...
টি এম আহমেদ কায়সার নব্বইয়ের কবি। শুধু কবি অভিধায় তাঁকে বেঁধে রাখা যায় না; কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,নিবন্ধ, অনুবাদ, গান লিখে তাঁর সময়কে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। একসময় ফিল্মের নেশায়ও ঝেঁকে বসেছিল। যার ফলশ্রুতিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন চোখ ফিল্ম সোসাইটি। তিনি মূলত লিটলম্যাগে লিখতেন, প্যারাডাইম নামে একটি ছোটকাগজ (যৌথ)সম্পাদনা করতেন।
সে সময় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় উল্লেখযোগ্য ছোটকাগজ- একবিংশ, নিসর্গ, লিরিক, জীবনানন্দ, সূনৃত, বিকাশ, ভিন্নায়ণ, গ্রন্থি, অর্কেষ্টা, ফিনিক, ঘাস, খোয়াব, ঋতি হৃদিসহ তখনকার সব ছোটকাগজে। রাসায়নিক প্রকৌশলের ছাত্র টি এম আহমেদ কায়সার নানাবিধ একাডেমিক চাপের কারণে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিয়াশীল সাহিত্য রচনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
শূন্য দশকের কবি সৈয়দ আফসারের কাছে কবি টি এম আহমেদ কায়সারের গল্প শুনেছি বহুবার এবং উনার বেশ কয়েকটি কবিতা পড়ারও সৌভাগ্য হয়েছে আমার। যদিও কবি ইদানিং তেমন একটা লিখেন না এরপরও যে কবিতাগুলো পড়েছি প্রায় সব ক'টি কবিতাই আমার খুব ভালো লেগেছে । আজ ২রা জুন, প্রিয়কবি টি এম আহমেদ কায়সার-এর জন্মদিন।
জন্মদিনে কবিকে একমুঠো সোনালি শুভেচ্ছাসহ অনেক-অনেক ভালোবাসা জানাচ্ছি এবং এই দিনটি তাঁর জীবনে ফিরে আসুক আরো শতবার ...।
________________________টি এম আহমেদ কায়সারের দু'টি কবিতা
ফেরা
খোঁপায় এঁটেছো দেহ; অলকে বেঁধেছো হাত
ময়ঙ্ক আঁখির শর হেনেছো এ-বুকে
কামের কোদণ্ড ভুরু এবার কি ছোঁয়াবে দুচোখে?
কেনো যে ফেরাতে চাও? আমার তো রক্তে সখি
আবাল মাটির ডাক; অনন্ত গুহাব্রত, আমূল সন্ন্যাস
ঘুমন্ত নদী ও চন্দ্র, উড্ডীণ বালিহাঁস হাতছানি দেয় নিরবধি
জোছনায় নয় শোনো; অন্ধকারে মুখ ঢেকে রাখি
তবু বাধো লোকালয়ে; ওখানে কি পাবে সখি ডালে ডালে পাতার প্রপাত?
ওখানে কি পাবে নদী নির্জনে বয়ে গেছে ধু-ধু?
ওখানে কি পাবে ছায়া কেঁপে উঠে কলোচ্ছল জলে?
ডেকে যায় বুনো-অশ্ব; লিলুয়া পবন ধীরে কড়া নেড়ে যায়
পালাতে গেলেই বিঁধে তোমার নোঙ্গর
ঝরে রক্ত পথে পথে; ওড়ে ঘুড়ি গাঢ় বেদনায়
সভ্যতা ছিড়িবো দ্রোহে; আদিম অরণ্যমূলে ফিরে যেতে চাই
পাথরে পাথর ঠুকে পরিশুদ্ধ হতে চাই পুনঃ
তোমার বিনম্র ওষ্ঠে পাপিষ্ঠ রক্তের ধুলো মুছে নিতে চাই
ক্রমশ পারদ-স্তর ঢেকেছে এ শরীরের দ্যুতি
...প্রেমে ও বৈরাগ্যে খুঁজি গৌতমের প্রত্ন-প্রতীতী
ঘুম
ভাবছি, এই ভাঙা চোয়াল আর কুজো কাঁধ নিয়ে
আর ঘর থেকে বাইরে বেরোব না
টেলিফোনের তার কেটে দেবো
বরফ মাড়ানো জুতোগুলো কালো বিন-ব্যাগে ভরে
রাস্তায় স্ক্র্যাপভ্যানে রেখে আসবো
আমার চিবুকে যে বাজপাখির ছায়া দেখে এক উদ্ভ্রান্ত কিশোরী
সহসা আঁতকে উঠেছিলো
ভাবছি, বরং সেই ছায়ার সাথে তলোয়ার হাতে
নেমে পড়বো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
আর আমার রক্তের অন্ধকার থেকে ঝাঁক-ঝাঁক বুনো-শালিখ উড়ে যেতে দেখে মনে পড়ে কলাশাস্ত্রে এক অভিজ্ঞ রমণী আমাকে শিখিয়ে ছিলেন পাখি ধরার দুর্দান্ত কৌশল তার কথা ভেবে ভেবে কি আমি গোপনে কিছু কাশফুল বিসর্জন দেবো এখোন?
ভাবছি আর বাইরে বেরুবো না
বাতিগুলি নিভিয়ে দেবো অলক্ষ্যে
আর দূর বরফ পাহাড় থেকে বিটোভেন যে ভূজঙ্গ তীরগুলো ছুঁড়ে দেন নিঃশব্দে
হৃতপিণ্ডে সেই তীরগুলোর দগদগে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে
আমি বরং ঘুমোতে যাবো; নিভৃতে ঘুমিয়ে যাবো গভীর রাত্তিরে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।