আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন
বছর পাঁচেক আগে;
কোন এক শীতকালীন ধোঁয়াটে সন্ধ্যায়,
পাড়ার চায়ের দোকানের নিয়মিত
উষ্ণ আড্ডায়, আমাদের অগ্রজ এবং
স্বঘোষিত কবি সহসা
সটান দাঁড়িয়ে,
বুক চিতিয়ে
চোখের পলক না ফেলে
দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা দিয়ে দিলেন,
"আর নয়,
আর লেখব না..."
যুক্তিসঙ্গতভাবেই আমাদের সিগারেট এবং গোষ্ঠীসুখ
আস্বাদনে পড়ল তিক্ত দন্ডাঘাত।
বুদ্ধিমানেরা কন্ঠে আবেগ ফুটিয়ে,
গৎবাঁধা অভিযোগে অনুযোগ মিশিয়ে
বললাম,
"কেন কবি?
কেন??"
নির্বোধেরা নিয়মমাফিক মুঢ়তায়
তাঁকে চিমটি কাটলো কয়েকবার।
আড্ডার সবচে' পুরনো সদস্য এবং
প্রাগৈতিহাসিক ফসিল,
বারকয়েক দুলিয়ে মাথা, শব্দ ছেঁচে দিলেন বাণী,
"ঠিকই বলেছ নায়ক...
অন্ত্রের পীড়া বড়ই বেদনাদায়ক। "
এইরূপ আওয়াজ নেহায়েৎ রুটিনমাফিক।
তাই সকল মশ্করা শেষে ঠিকঠিক
চেপে ধরলাম সবাই।
কিন্তু কবি অনড় অটল;
মুখে আঁটকে তালা, অন্তরে বন্ধ জানালা
এবং কলমে কুলুপ এঁটে,
উনি নিশ্চুপ।
অবশেষে
কাজে দিল এই দুটো লাইন।
ফাঁদ পেতে আউড়ে দিলাম...
"কবিকে দিওনা দুঃখ,
তাহলে সে হাওয়ায় হাওয়ায় নীলিমায় গেঁথে দেবে দুঃখের অক্ষর। "
শোনামাত্র
হড়বড়িয়ে মুখ খুললেন কবি,
"দুঃখ কেউ দ্যায় নাই। "
"কি দিয়েছে তবে?"
খানিক থেমে কবি বলেন,
"সবাই আছে মুখোশ পরে;
তুমি, আমি, তারা সবাই
চোখে প্রলেপ এঁকে বাঁচি।
একবার মুখোশ খুলে দেখো।
সবকিছু পড়বে ভেঙ্গেচুরে......"
আমরা তুললাম কিছু হাই আলস্যে
এবং হপ্তা কয়েক পরে কবি
স্বরস্বতীর আশীর্বাদে গেলেন চলে পশ্চিমে।
...................................................
বছর পাঁচেক পরে;
হঠাৎ একদিন
এই শহরের এক ব্যস্ত রাস্তায় অস্থির সময় ও
নির্বোধ মানুষদের ভীড়ে দেখতে পেলাম তাঁকে।
চেহারা ঠিকরে বেরোচ্ছে আলো
আর পোষাকে টাকার স্পষ্ট গন্ধ।
উনার মধ্যমার দিকে চেয়ে বললাম,
"কেমন আছেন কবি?"
তিনি সবচে' সুখী বিষণ্ণ হাসি হেসে
বলেন, "আর কবি!
তা খবর কি তোমার?"
"এইতো এমন আছি;
এক আধটা কাব্য লিখে
নিত্য সুখেই বাঁচি।
"
শুনে হাসেন তিনি, মাথা নাড়েন মৃদু।
আমি খানিক দ্বিধায় বলি,
"এখনো কি লেখেন কবি?"
উনি ঘাড় হেলিয়ে ফেলেন দীর্ঘশ্বাস;
দুটো বিলবোর্ড দেখে নিয়ে মৃদুগলায়
বললেন,
"ডায়েরীর বাকি ছিয়াত্তর পৃষ্ঠা
শাদা রয়ে গেছে
গত পাঁচ বছরেও,
লেখা হয়নি কিছুই। "
ছবিঃ Carl Spitzweg এর The Poor Poet
"লেখকের কথাঃ এই কবিতাটা(!!) যাঁকে নিয়ে লিখেছি তিনি যদি শোনেন আমি আমার এই তারুণ্যের "মূল্যবান সময়" কাব্যচর্চায় ব্যয় করছি, তবে এই সম্ভাবনা প্রবল যে তিনি আমারে দড়ি ছেঁড়া ষাঁড়ের মতোন মাইল তিনেক দাবড়ে নিয়ে যাবেন। তাই চুপচাপ পরিচয়বিহীন এই কবিতাটা তাকে উৎসর্গ করি। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।