টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার পাড়ে বালু ব্যবসা নিয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মহাজোট সরকারের ১৫ মাসে ওই সিন্ডিকেট অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। আর এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় এমপির ছেলে। মোটা অঙ্কের অবৈধ এ ব্যবসার জন্য সরকারের রাজস্ব খাতে কানাকড়িও দিতে হয়নি। প্রতিদিন শত শত বালুভর্তি ট্রাক চলাচল করায় হুমকির মধ্যে পড়েছে দেশের অন্যতম স্থাপনা যমুনা সেতুর রক্ষা গাইড বাঁধটি।
সাধারণ মানুষের ফসলি জমি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলেও প্রতিবাদের সাহস কেউ দেখান না। সম্প্রতি বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে ভূঞাপুরে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি মামলা, স্মারকলিপি প্রদান, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিনুল হক, নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোতালেব সরকার, নিকরাইল ইউনিয়নের সভাপতি হাবিল তালুকদার, স্থানীয় এমপির ভাতিজা খন্দকার আনোয়ারুজ্জামানসহ কয়েকজন ওই বালু সিন্ডিকেটের নেপথ্য নায়ক। তারা কয়েকটি বালুমহাল থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বালু এনে ভূঞাপুর থেকে ট্রাক ভর্তি করে বিক্রি জন্য নিয়ে যায়।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বালু বিক্রি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আওয়ামী লীগের বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রুমেলের হাতে।
এ সিন্ডিকেট ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, মাটিকাটা, পলসিয়া এবং যমুনা সেতুর কাছে নিকরাইল ইউনিয়নের পাথাইলকান্দি গ্রামে গড়ে তোলে বালুর ব্যবসা। এসব জায়গায় ড্রেজার দিয়েও বালু উত্তোলন শুরু করে তারা। বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ ট্রাক বালু ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য চলে যায়। প্রতি ট্রাকে লাভ হয় এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। তাদের দেয়া হিসাবমতে, মহাজোট সরকারের ১৫ মাসে আওয়ামী লীগের এ সিন্ডিকেট প্রায় ১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাও জড়িত। সিন্ডিকেটের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এমপির ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রুমেল পান মোট লাভের ৩০ ভাগ। ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ পান ১৫ ভাগ, এমপির ভাতিজা খন্দকার আনোয়ারুজ্জামান পান ১০ ভাগ। অবশিষ্ট লাভের অংশ সিন্ডিকেটের অপর সদস্যরা গ্রেড অনুসারে ভাগবাটোয়ারা করেন। এছাড়াও ভূঞাপুর থানায় দিতে হয় সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচল করায় সাধারণ মানুষের ফসলি জমি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি যমুনা সেতু রক্ষা গাইড বাঁধটিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব যমুনা নদীতে বাঁশের বেড়ার বাঁধ পরিদর্শনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন প্রশাসনের কাছেও প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার আবেদন করলেও লাভ হয়নি। এ ব্যাপারে এমপিপুত্র খন্দকার মশিউজ্জামান রুমেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সামসুল হক মাসুদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বালু সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
তবে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বালু সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে প্রতি সপ্তাহে থানায় টাকা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। সম্প্রতি বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভূঞাপুরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। গত ৩০ এপ্রিল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ভাইভূটিয়া সোনার বাংলা কন্সট্রাকশনের নবনির্মিত কাঠামো পরিদর্শনে যাওয়ার সময় স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার গাড়িবহরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় দলীয় অপর নেতা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি শওকত রেজা, মাসুদুল হক মাসুদ ও ফিরোজ চৌধুরীসহ ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন ভূঞাপুর থানায়।
যুবলীগের পক্ষ থেকেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ২২ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়। এছাড়াও উভয়পক্ষ শহরে পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এসব ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।