আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোলায় শান্তিপূর্ন সুষ্টু নির্বাচন হয়েছে !!!!!!!????????


বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছে বিএনপি দলীয় প্রায় শতাধিক কর্মী। আহতদের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী মেজর হাফিজের নির্বাচনী এজেন্টও রয়েছেন। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকে দেখা গেছে কেন্দ্রের বাইরে, কেন্দ্রে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কে লাঠিসোটা নিয়ে পাহারা দিতে, যাতে বিএনপি সমর্থক-ভোটাররা কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে না পারে। হামলার শিকার অনেক বিএনপি কর্মী জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে তাদের এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে।

সর্বশেষ নিষেধ করেছে ভোটের আগের রাতে। তাদের নিষেধ অমান্য করে ভোট কেন্দ্রে আসার কারণে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। সকাল দশটা থেকেই হামলায় আহত বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রার্থী মেজর হাফিজের লালমোহন সদরের বাড়িতে আসতে থাকে। দুপুর পর্যন্ত বাড়িটি এক অস্থায়ী হাসপাতালে রূপ নেয়। সকাল দশটায় তজুমদ্দিনের ইন্দ্রনারায়ণপুর কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রে বিএনপি কর্মী মাকসুদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

এর পরপরই আওয়ামী লীগের কর্মীরা ধানের শীষের সব এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। বেলা ১২টার সময় তজুমদ্দিনের শম্ভুপুর ইউনিয়নের শিবপুর খাসের হাট প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদেরকে পিটিয়ে বের করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকে বিএনপির এজেন্ট বানিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। একই অবস্থা করা হয় শমভুপুরের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উত্তর কোড়ালমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কোড়ালমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধুলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। তজুমদ্দিনের সোনাপুর ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ সোনাপুর ইউনিয়নের সব কেন্দ্র দখল করে নেয় ঢাকা মহানগর যুবলীগের পল্লবী থানার নেতা মিঠু। সেখান থেকে বিএনপির কর্মী এবং ভোটারদেরকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়।

চর জহিরুদ্দীন কওমী মাদ্রাসা ও মেডিকেল সেন্টার, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সকাল দশটায় মেজর হাফিজের এজেন্টদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। এখানে বিএনপির ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আসতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাধা দেয়া হয়। এবং ভোট দিতে আসার অপরাধে বিএনপি কর্মী সাত্তার ও জয়নালকে পিটিয়ে শরীর থেঁতলে দেয়া হয়। তজুমদ্দিনের মধ্যচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলকুঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফজিলাতুন নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, চাঁদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসের হাট ভবানী রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল দশটা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার সব কেন্দ্র দখলে নিয়ে নেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এখানের আড়ালিয়া কেন্দ্রে বেলা ১২টায় বিএনপির নির্বাচনী সমন্বয়ক আমানউল্লাহ আমানের ওপর হামলা করে যুবলীগ ক্যাডাররা।

হামলার নেতৃত্ব দেয় তজুমদ্দিন উপজেলা যুবলীগের নেতা শহীদুল্লাহ কিরণ। তবে কিরণ হামলার কথা অস্বীকার করলেও কর্মীদের সঙ্গে আমানের হাতাহাতির কথা স্বীকার করেন। তজুমদ্দিনের চাঁচড়া ইউনিয়নের উত্তর চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যচাচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম চাঁচড়া সরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি কর্মীরা ভোট দিতে এলে তাদেরকে কেন্দ্রের বাইরে থেকেই তাড়িয়ে দেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রের সব এজেন্টকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে এনে ভাল খাবার দাবার দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা ইউনিয়নের চর জহিরউদ্দিন রেডক্রিসেন্ট সাইক্লোন সেন্টার, দিদার মাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে নয়টার ভেতরেই মেজর হাফিজের সব এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়।

সকাল ১২টার দিকে লালমোহনের ফরাশগঞ্জ সাতানী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে শান্তিপূর্ণভাবে। কেন্দ্রে কোন গোলযোগ নেই। শ’ খানেক পুরুষ ও মহিলা ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছু ভোটারকে দেখা যায় কেন্দ্রের অনেক দূরে দাঁড়ানো। কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে তারা জানায়, তারা বিএনপির ভোটার কিনু্ত ভোট দিতে যায়নি ভয়ে।

আগের রাতেই তাদেরকে কঠোরভাবে ভোটকেন্দ্রে না যেতে বলা হয়েছে বলেই তারা কেন্দ্রে যায়নি। এখানে দেখা যায় ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের মুখগুলোতে জটলা পাকিয়ে বসে আছে বেশ কিছু যুবক। তাদের ভয়েই ওরা ভোট দিতে যায়নি। কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাইরে ঝামেলা হলে আমি কি করবো? কেন্দ্রে তো কোন ঝামেলা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছিল-ভোটারদেরকে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে তাদেরকে সহায়তা করবে র‌্যাব এবং আর্মড ফোর্স, কিন্তু লালমোহনের ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারা ওই ভোটারদেরকে সহায়তা করতে কাউকে দেখা যায়নি।

সকাল দশটার দিকে লালমোহনের চতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীরা মেজর হাফিজের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিলে এখানে এজেন্টরা মিলে র‌্যাব ও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ঘিরে প্রতিবাদ জানায় এবং মিছিল করে বিচার দাবি করে । এ সময় র‌্যাবের গাড়ি ও ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বক্তব্য না শোনার ভান করে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। বেলা ২টার দিকে লালমোহনের ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের ডা. আজহারউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় পুরো কেন্দ্রটি খাঁ খাঁ করছে কোন ভোটার নেই। কোন বুথে গিয়ে মেজর হাফিজের কোন এজেন্টকে পাওয়া গেল না। নৌকার এজেন্টরা জানালেন ওরা এসেছিল কিনু্ত চলে গেছে।

এখানে জানা গেল সকালের দিকে বিএনপির নেতা আনিসুল কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজ ইব্রাহিমকে থাপ্পড় মারে। এ নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টির পরই বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্র থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ভোটারদেরকে ধরে ধরে কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। ওই নেতা যাদেরকে ভোট দিতে নিয়ে যাচ্ছে তারা সবাই অল্পবয়স্ক, কেউ ভোটার নয়। তাদেরকে দিয়ে জালভোট দেয়ানো হচ্ছে।

এমন একজন ছেলেকে চ্যালেঞ্জ করলে দেখা যায় ১৩ বছরের এক ছেলেকে দিয়ে ৬০ বছরের মুজিবুল হকের ভোট দেয়ানো হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ছেলেটি কেন্দ্র ত্যাগ করে। ওই ভোটার নম্বরটি ৮৮৯। এ ব্যাপারে পুলিশকে ডেকেও কোন লাভ হলো না। অসহায় পুলিশ মুখ ফিরিয়ে নিলো।

সেখানে আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেল এমনভাবে বালকদের ভোট চলছে । গতকাল ভোট গ্রহণ চলাকালে লালমোহন উপজেলার ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের কিশোরগঞ্জ আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসার অপরাধে বিএনপি সমর্থিত আবুল কাশেমকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখানে হামলায় আরও আহত হয়েছে বজলু, আলাউদ্দিন, খোকন, লিটন, আনিস, আবদুল হাই মাসুদ, শাহীন, মোস্তফা, খালেক, রাবেয়া, ফরিদা ও আবদুল মোতালেব। সকাল ৯টায় লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী কেন্দ্রে হামলায় আহত হয় ৭ জন।

তাদের মধ্যে বিএনপি কর্মী কামালের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখানে দেখা যায় আহত কামালসহ অন্যদেরকে র‌্যাব তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালের সামনে এনে নামিয়ে দেয়। পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার মোজাম্মেল অভিযোগ করেন, তিনি ভোটার স্লিপ নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গেলে তার কাছ থেকে ভোটার স্লিপ কেড়ে নিয়ে কেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। সকাল সাড়ে দশটায় লালমোহন পৌরসভার মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মেজর হাফিজের কোন এজেন্ট নেই। তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রের বাইরে গেলে দেয়ালের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক চুপিসারে অভিযোগ করেন, তাকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। যুবকটি জানায়, সে মেজর হাফিজের এজেন্ট ছিল।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।