তারা ভরা রাতের নিষাচর...
আমাদের দেশে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় কম। দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরও দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতেই যেন সিদ্ধহস্ত সবাই। সরকারের জরুরি ভিত্তিতে স্বল্পতম সময়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ (কুইক রেন্টাল) কেনার জন্য যুক্তরাজ্যের কোম্পানি এগ্রিকোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর যেন সেরকমই একটি উদাহরন। দরপত্র ছাড়াই সম্পাদিত এই চুক্তি অনুযায়ী, এগ্রিকোর কাছ থেকে প্রতিটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হবে। এর একটি কেন্দ্র বসবে খুলনায়।
এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ২২ জুন থেকে। অপর কেন্দ্রটি বসবে ঘোড়াশালে। এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ২৮ জুলাই থেকে।
চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি জ্বালানি সরবরাহ করবে, জমি দেবে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে সঞ্চালনের (ইভাকুয়েশন) সুযোগ সৃষ্টি করবে। উল্লিখিত দু’টি কেন্দ্র থেকে প্রথম মাস থেকে ২৭তম মাস পর্যন্ত বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হবে প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ৩৯ পয়সা দরে।
২৮ থেকে ৩৬তম মাস পর্যন্ত বিদ্যুতের দর হবে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা হারে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর, গত জানুয়ারি মাসেই এগ্রিকো সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল এ ধরনের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের, কিন্তু সরকার তখন বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। এখন বিশেষ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সরকারি ক্রয় আইনের (পিপিআর) লঙ্ঘিত হলে আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। তবে পিপিআরে ‘সরকার চাইলে বিশেষ পরিস্থিতিতে, জরুরি অবস্থায় সরাসরি ক্রয় করতে পারে’ বলে বিধান রয়েছে উল্লেখ করে একটি সূত্র জানায়, সরকার ইচ্ছা করলে এই বিধানও প্রয়োগ করতে পারে।
অবশ্য এই বিষয়টি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে। তারপর প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উত্থাপন করা হবে। এরপর ক্রয় কমিটির অনুমোদন নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।
তীব্র বিদ্যুত্ সঙ্কটকে পুঁজি করে বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে ফ্রি-স্টাইলে চলছে বিদ্যুত্ খাত। সমঝোতা হচ্ছে রাতারাতি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম টেন্ডার ছাড়া বিদ্যুত্ কেন্দ্র বসানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের নভেম্বরে সরকার ৮টি রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জন্য দরপত্র আহবান করে। সে দরপত্রে সাড়াও মেলে। দর পাওয়া যায় প্রতিযোগিতামূলক। ৮টির মধ্যে ৫টি স্থাপনের ব্যাপারে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।
কিন্তু বাকি ৩টি এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলে আছে। ওই তিনটি রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের দরপত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত্ ৭ টাকা ৪০ পয়সা দরে দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এখন আইন লঙ্ঘন করে বিনা দরপত্রে বিদ্যুত্ কেন্দ্র বসানোর প্রয়োজন পড়তো না। তেমনি বিদ্যুত্ পাওয়া যেত অর্ধেক দামে। বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সময়মত কার্যাদেশ দিলে ওইসব কেন্দ্রও জুনের আগে উত্পাদনে যেত।
সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায় দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির সম্মুখিন আমাদের বিদ্যুত খাত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।