জ্ঞানই সকল শক্তির মূল উত্স
মহাশুন্য বিজয় এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের তিনটি আয়াতের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন. একটি আয়াতে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এক্ষেত্রে মানুষ কি সাফল্য অর্জন করতে পারে এবং পারবে। অপর দুটি আয়াতে সেই সময়ের মক্কার অবিশ্বাসীদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তারা যদি আকাশে উঠতে পারত তাহলে সেখানকার দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ত. এখানে এমন একটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যা ঐ অবিশ্বাসীদের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব ছিল না.
প্রথমত আয়াতটি হচ্ছে,
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانفُذُوا لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ
O company of jinn and men! If you have the power to escape across the bounds of the earth and the heavens, then escape! You shall not escape, for it requires great power.
হে জ্বিন ও মানবজাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পারো তবে অতিক্রম কর, কিন্তু তোমরা তা পারবে না শক্তি ব্যতিরকে.(সুরা আর রাহ মান-৩৩)
এ তরজমার কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রয়োজন. প্রথমত 'যদি' শব্দটি দ্বারা প্রস্তাবনার সফলতা কোন সম্ভব বা অসম্ভব অবস্থার নির্ভর করে তা বুঝায়. কিন্তু আরবী ভাষায় ঐ অবস্থার ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যঞ্জনা আনা সম্ভব যা অনেক বেশি সুষ্পষ্ট. সম্ভাবতা প্রকাশের জন্য إِذ (ইযা) , সম্পাদনযোগ্য কাজের জন্য إِن (ইন) এবং সম্পাদনের অযোগ্য কাজের জন্য َلَوْ (লাও) শব্দ প্রয়োগ করা হয়. আলোচ্য আয়াতে إِن (ইন) শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় কাজটি সম্পাদনযোগ্য বলে বুঝা যাচ্ছে. অর্থাৎ মানুষের পক্ষে আকাশ ও পৃথিবীর সীমানা অতিক্রম প্রকৃতপক্ষে সম্ভব.
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ জ্বিন ও মানব্জাতিকে সম্বোধন করেছেন কোন কাল্পনিক প্রাণীকে নয়.
তৃতীয়ত ক্রিয়াপদ نفُذُ (নাফাজা) ও তার পরে সন্মন্ধযুক্ত পদ مِن (মিন) তার তরজমা করা হয়েছে 'অতিক্রম করা'. কাজী মিরস্কির অভিধান অনুসারে পদটির অর্থ 'কোন বস্তুর ভিতরে প্রবেশ করে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসা' (যেমন তীর কোন বস্তুর একদিকে দিয়ে ঢুকে অপর দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়). সুতরাং গভীর অনুপ্রবেশ এবং অনুপ্রবিষ্ট এলাকার বাইরে যাওয়া বুঝা যাচ্ছে.
চতুর্থত, মানুষের ঐ কাজের জন্য যে শক্তির سُلْطَان (সুলতান) প্রয়োজন হবে তা সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে আসবে বলে মনে হয়. কারণ ঠিক পরের আয়াতে আল্লাহর রহমত উপলব্ধি করার আহ্বান করা হয়েছে.
সুতরাং মানুষ যে একদিন মহাশুন্য জয় করবে এ আয়াতে তার সুষ্পষ্ট আভাস রয়েছে. লক্ষণীয় যে, আয়াতে শুধু আকাশ জয় নয়, পৃথিবী অতিক্রম অর্থাৎ পাতাল জয়েরও আভাস আছে.
অপর দুটি আয়াত হচ্ছে সুরা হিজরের ১৪ ও ১৫ আয়াত. প্রসঙ্গ থেকে বুঝা যায় আল্লাহ এখানে মক্কার অবিশ্বাসীদের কথা বলেছেন-
لَقَالُوٓا۟ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَرُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌۭ مَّسْحُورُونَ
وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ فَظَلُّوا۟ فِيهِ يَعْرُجُونَ
If We were even to open for them a way to the heaven, and they could continually climb up to it in broad daylight; They would still have said; 'Surely our eyes have been dazzled; rather, we have been enchanted.
যদি তাদের জন্য আকাশের এক দুয়ার খুলে দেই এবং তারা দিনের বেলা তাতে আরোহণ করে, তবুও তারা বলবে আমাদের দৃষ্টি মোহাবিষ্ট হয়েছে, নতুবা আমরা এক যাদুগ্রস্থ সম্প্রদায়.
ঐ কথায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ হয়েছে. এমন দৃশ্য মানুষ যা কল্পনাও করেনি.
লক্ষ্য করা যেতে পারে, বাক্যটি 'যদি' আরবী َلَوْ (লাও), দিয়ে শুরু করা হয়েছে. অর্থাৎ বাক্যের প্রস্তাবনা এমন শর্তের অধীন করা হয়েছে যা পুরণ করা আয়াতের উল্লেখিত লোকদের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়.
মহাশুন্য বিজয় সম্পর্কিত আয়াতে আমরা দেখেছি, আল্লাহর দেয়া বুদ্ধিমত্তা ও আবিস্কার ক্ষমতার বলে মানুষ একদিন মহাশুন্য জয় করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে. কিন্তু এ আয়াতে এমন একটি দৃশ্যের কথা বলা হয়েছে যা সেই সময়ের মক্কার অবিশ্বাসী লোকেরা কখনই দেখতে পাবে না. কিন্তু এ দৃশ্য অন্যদের পক্ষে দেখা সম্ভব এবং দেখার পর তাদের (নভোচারী মানুষ) মনে যে অনুভূতির সৃষ্টি হবে এ আয়াতে তার বর্ণনা আছে- তাদের দৃষ্টি বিভ্রান্ত হবে, মাতাল অবস্থায় যেমন হয়, যাদুগ্রস্থ অবস্থায় যেমন হয়.
১৯৬১ সালে প্রথমবার নভোযানে মহাশুন্যে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে আসার পর থেকে নভোচারীগণ এ যাবত ঠিক ঐ অভিজ্ঞতাই লাভ করেছেন এবং অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা ঠিক ঐ কথাই বলেছেন; একথা এখন সর্বজনবিদিত যে, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপর থেকে দেখলে আকাশ আর নীল রঙ্গের দেখা যায় না. কারণ, বায়ুমন্ডলে সূর্য্যের আলো শুষে নেয়ার কারণে তার নীচের থেকে দেখলে আকাশের রং নীল দেখা যায়. পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পরে উঠে মানুষ আকাশকে কালো দেখতে পায় এবং বায়ুমন্ডল সূর্য্যের আলো শুষে নেয়ার কারণে পৃথিবীকে নীল রঙ্গের আবৃত্ত অবস্থায় দেখতে পায়. চাঁদের কোন বায়ুমন্ডল না থাকায় ঐ অবস্থায় কালো আকাশের পটভূমিতে চাঁদকে তার নিজস্ব রঙ্গেই দেখা যায়. নভোচারী মানুষের চোখে এ দৃশ্য সম্পুর্ণ অভিনব, অভূতপুর্ব.
এক্ষেত্রে আধুনিক কালের বিজ্ঞানের তথ্যের সাথে কুরআনের বর্ণনা মিলিয়ে দেখলে বিস্ময়ে অভিভূত ও হতবাক হয়ে যেতে হয়. সুতরাং কোরআনের বর্ণনা কোনমতেই ১৪০০ বছর আগের একজন মানুষের বর্ণনা হতে পারে না.
(তথ্যসুত্র-লা বাইবেল, লা কুরআন য়েট লা সাইন্স - ডাঃ মরিস বুকাইল)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।