আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভ্রকে পাইরেটেড বলার কারণ বিশ্লেষণ ও একটি দাবী

সবকিছু অন্ধকার হতে শুরু , অন্ধকারেই শেষ...

নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকে এই লেখা শেয়ার করা হলো, .... সত্য জানার অধিকার সবার থাকা উচিত মূল লেখা : http://www.sachalayatan.com/guest_writer/3156 খুব গুরুতর একটা অভিযোগ করেছেন মোস্তফা জব্বার। তিনি বলেছেন, "অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন সেলের ওয়েবসাইট হ্যাক হলে তার দায় থেকেও ইউএনডিপিকে ছাড় দেয়া যায় না। " সামারাইজ করে বলা যায় এখানে তার পয়েন্ট হল: ১) সরকারী ওয়েবসাইট গঠনে পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার হয়েছে যা পুরো ব্যাপারটিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। ২) অভ্র একটি পাইরেটেড সফটওয়ার।

সাম্প্রতিককালে সংগঠিত হ্যাকিং গুলিতে এইসব সফটওয়ারের ভূমিকা রয়েছে। ৩) যেখানে বিজয়ের মত একটি সফটওয়ার গর্ভমেন্ট টাকা দিয়ে কিনতে পারতো সেখানে অভ্রের মত ফ্রি একটা সফটওয়ার বেছে নিয়ে সরকার চরম নির্বুদ্ধিতা দেখিয়েছে। ৪) ইউএনডিপি'র মত প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় এরকম অবৈধ/পাইরেটেড জিনিসকে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। মোটামুটি এই হল জব্বার কাগু'র পয়েন্ট। এখন আসুন ওর কথাকে বিশ্লেষণ করি এবং কোন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই।

প্রথমেই জানতে হবে হ্যাকিং কি কি ভাবে হয়। সহজভাবে বলতে গেলে হ্যাকিং ২ভাবে হতে পারে: (১) কোড হ্যাক && (২) সার্ভার হ্যাক। কোড হ্যাক হল কোন প্রোগ্রামের এমন একটি স্টেট আবিস্কার করে সেটাকে ব্যবহার করা যেই স্টেটটির উপস্থিতি কাঙ্ক্ষিত ছিল না। যেমন: আপনি একটি ব্যাংকিং সফটওয়ার এমনভাবে বানালেন যে যখন ব্যবহারকারী অনুরোধ করে x পরিমাণ টাকা তোলার জন্যে আপনি অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স থেকে x পরিমাণ টাকা বিয়োগ করে দিবেন। অর্থাৎ সূত্রটি হল: নতুন ব্যালেন্স= পুরাতন ব্যালেন্স - x টাকা.......... কিন্তু কেউ আবিস্কার করে ফেললো ব্যবহারকারী যখন x এর ভ্যালু ইনপুট দিচ্ছেন তখন তিনি চাইলে নেগেটিভ ভ্যালু ইনপুট দিতে পারেন।

ফলে সেক্ষেত্রে সূত্রটি হয়ে যাচ্ছে: নতুন ব্যালেন্স= পুরাতন ব্যালেন্স - (-x) টাকা অথবা, নতুন ব্যালেন্স= পুরাতন ব্যালেন্স + x টাকা (মানে টাকা কাটার বদলে উল্টো যোগ হয়ে যাচ্ছে) এটা হল হ্যাকিং কারণ আপনি একটি সফটওয়ারের কোন ভুল বের করেছেন ও সেটার ব্যবহার করতে পেরেছেন। সার্ভার হ্যাক হল যেই ওয়েব সার্ভারে কোন ওয়েব সাইটের ফাইলগুলি থাকে সেই ওয়েব সার্ভারে প্রবেশ করে সেই ফাইলগুলি পাল্টে দেয়া। মানে ধরুন, আপনার ভিসতা'য় পাসওয়ার্ড দেয়া থাকলেও আমি কোনভাবে আপনার মাই কম্পিউটার ওপেন করতে পারলাম............ সার্ভার হ্যাক অনেকটাই এরকম......... পাইরেটেড সফটওয়ার মানে, কোন সফটওয়ার তার অরিজিনাল ভেন্ডর কিংবা স্বত্তাধিকারীর অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করা অথবা যেভাবে সেই সফটওয়ারটি ব্যবহার করার জন্যে সেটি ইনস্টল বা ক্রয়ের সময় আপনি ভেন্ডর কিংবা স্বত্তাধিকারীর সাথে চুক্তি করেছেন তা ব্যতীত অন্যভাবে ব্যবহার করা। সহজ একটা উদাহরণ হল: উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম......... কারণ এর লাইসেন্সে বলা আছে একটি সিডি শুধু একটি পিসিতেই ব্যবহার করা যাবে কিন্তু একটি সিডি বহুবার বহুজন ব্যবহার করেন ফলে সবগুলি কপি পাইরেটেড হয়ে যায়। ব্যস, এবার কাগুর দাবীর ব্যবচ্ছেদ করা যাক।

»»»»»»»»»»»»»» অভ্র যদি পাইরেটেড হয়ে থাকে তাহলে এর অরিজিনাল কোন ভেন্ডর কিংবা স্বত্তাধিকারী রয়েছেন। কিন্তু এর কোন অরিজিনাল ভেন্ডর কিংবা স্বত্তাধিকারী নেই। উদারহরণ স্বরূপ বলা যায় ফ্লক ব্রাউজারটির কথা। এটি ফায়ারফক্সের কোড ব্যবহার করে বানানো হয়েছে কিন্তু ফায়ারফক্সের যেসকল কোড ব্যবহার করা হয়েছে তার স্বত্তাধিকারী তারা দাবী করেনি। এখন তাহলে প্রশ্ন অভ্র কি তাহলে এমন কোন সফটওয়ার থেকে বানানো ??? উত্তর: না, এটি একদম ইউনিক, ফায়ারফক্সের মত।

একেবারে যাকে বলে "বিল্ট ফ্রম স্ক্র‌্যাচ", আমাদের দেশের সফটওয়ার শিল্পের গর্ব এমন ইউনিক একটি সফটওয়ার। সুতরাং এই লজিকে একে পাইরেটেড বলা নির্বোধ ও হীন মনের পরিচায়ক। »»»»»»»»»»»»»» এবার দেখা যাক অভ্রের লাইসেন্স কি বলছে এবং সেটি পাইরেটেড কিনা। অভ্রের লাইসেন্সের ক্লজ অনুসারে: ■ আপনি এটি ফ্রি-তে ব্যবহার করতে পারবেন ■ আপনি এটি যেকাউকে ডিস্ট্রিবিউট করতে পারবেন, মানে আপনার পিসি থেকে অভ্র একজিকিউটেবল ফাইলটা আরেকজন কপি করে নিয়ে যেতে পারবে এবং এক্ষেত্রে অভ্রের একজিকিউটেবল ফাইলটার যে ২টি কপি তৈরী হবে তার দু'টোই ভ্যালিড। আলাদা করে অনুমতির প্রয়োজন নেই কপি করার মাধ্যমে তৈরী হওয়া নতুন একজিকিউটেবলটার।

■ আপনি এই সফটওয়ারটি'র ক্রিয়েটরদের নাম পাল্টাতে পারবেন না। ■ সকল ক্ষেত্রে অভ্রের লাইসেন্স নোটিশটি অপরিবর্তিত রাখতে হবে। ফলে নির্বাচন কমিশন যেখান থেকেই অভ্র সফটওয়ারটি পাক না কেন তারা সেটির ব্যবহার করলে সেটি কোনভাবেই অনুমতি ছাড়া ব্যবহৃত সফটওয়ার হয়নি কারণ তারা এটিকে নিজের বলে দাবী করেনি, অভ্র যেহেতু এর সকল একজিকিউটেবল ভার্সনকে ভ্যালিড বলে দিয়েছে সুতরাং নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত সফটওয়ারটিও ভ্যালিড, অবশ্যই পাইরেটেড কপি নয়। »»»»»»»»»»»»»»»»»» বাকি থাকলো হ্যাকিং এর সাথে এর সংশ্লিষ্টতা। উপরে বলেছি কি কি ভাবে হ্যাকিং হতে পারে।

হ্যাকিং সম্পূর্ণভাবে সফটওয়ার/ওয়েব সাইটের কোডিং ও ওয়েবসাইট যেখানে হোস্ট করা হয়েছে তার অ্যাডমিনদের উপর নির্ভর করে। অভ্র শুধু বাংলা লিখার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে, ওয়েবসাইটের কোডিং অথবা হোস্টিংয়ের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই, শুধু এটা হ্যাকিংয়ে সহায়তা করেছে এটা যে বলে তাকে কোরবানীর ঈদে গাবতলীর হাটের সকল গরু+ছাগলকে দিয়ে লাত্থি দেয়া উচিত (নিজেকে আইটি'র লোক দাবী করা কোন মানুষ এতটা বলদ হতে পারে আমার ধারণাতেও ছিল না)। আরো সহজে বুঝাই, ধরুন আপনার কোন বন্ধু আপনার পিসি থেকে আপনার এম.এস. ওয়ার্ডে করা কোন ডকুমেন্ট বা অ্যাসাইনমেন্ট আপনাকে না বলে নিয়ে গেলো। এখন দোষটা কার ??? নিশ্চয়ই আপনার কারণ আপনি পিসি'র নিরাপত্তা ঠিক রাখতে পারেন নাই অথবা আপনার অপারেটিং সিস্টেমের কারণ সেটিতে পাসওয়ার্ড দেয়া থাকলেও হয়তোবা যেকোন ফাইল ওপেন করা যায়। ( এটা একধরণের হ্যাকিং)................... এখন আমাকে বলেন, কোনভাবে কি এম.এস. ওয়ার্ড-কে দায়ী করা যায় এই হ্যাকিংয়ের জন্য ??? ওটা দিয়ে আপনি লিখেছেন, ফাইলের সুরক্ষা করা কি সেটার কাজ ??? অভ্র দিয়ে বাংগালীরা বাংলা লিখেন, এখন বাংলা ভাষার কোন সাইট হ্যাক হলে সেটার দোষ অভ্রের কেন হবে ??? কেন এটাকে পাইরেটেড হবে ??? »»»»»»»»»»»»»»»» সবশেষ পয়েন্ট হল, বুঝতেই পারছেন বিজয় ব্যবহার না করাতে জব্বার নাখোশ হয়ে এই মন্তব্যটি করেছেন।

আমিও বুঝিনা মানুষ কেন বিজয় ব্যবহার করে ??? প্রিন্ট মিডিয়ায় যারা আছেন তারা চাইলে গিম্প দিয়েই ফটোশপের কাজগুলি করতে পারেন এমনটাই দেখছি এই লিংকে। যাইহোক, আমার মনে হয় কেউ যদি আগ্রহী হয়ে ফটোশপে ইউনিকোড সাপোর্টের প্লাগইন বানিয়ে ফেলতে পারেন তাহলেই হয়। এটা সম্ভব বলেই এই লিংকে দাবী করা হয়েছে, বিস্তারিত জানিনা জন্যে কমেন্ট করতে পারলাম না। ********** অনেক বড় হয়ে গেল লিখাটা, ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়েছি অবশ্যই এবং সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমি চেষ্টা করেছি জব্বার কাগু'র কথার ডিফেন্ড করতে।

মেহেদী ভাইয়ার উচিত এই ব্যাটাকে উকিল নোটিশ পাঠানো এই কথা বলার জন্যে। কাগু এই কথাগুলি এমন সব জায়গায় বলে যেখানে উপস্থিত কেউই এই কথার মাধ্যমে বলা মিথ্যাটা ধরতে সক্ষম না কিন্তু এদিকে "জব্বার কাগু বলেছেন বলে" সেই কথাটাকে ছড়িয়ে দিতে পুরাই এক পায়ে খাঁড়া। জব্বার কাগুর সাইটটা দেখেছেন ??? বিজয় ফন্টে বানানো তাই দেখতে পারিনাই। কবে যে সে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকেও পাইরেটেড কনসোর্টিয়াম বলে বিজয় ফন্ট ব্যবহার না করাতে। অনেকেই বলেছেন অভ্র'র জন্যে মেহেদী ভাইয়াকে একুশে পদক দেয়া হোক।

আমিও এই দাবীর সাথে একাত্মতা জানিয়ে পোস্ট শেষ করলাম। আমি মনে করি "মেহেদী ভাইয়া, অমি ভাইয়া, একুশে টিম"- এনাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর মত কোন শব্দই আমার কাছে নেই।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।