আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জহির রায়হান হত্যাকাণ্ডের বিচার কবে হবে?---২

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

http://www.biplobiderkotha.com শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্বময় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ১৫ দিন পর ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃতী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ঘোষণা দেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের পেছনে নীলনকশা উদ্ঘাটনসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক গোপন ঘটনার নথিপত্র, প্রামাণ্য দলিল তার কাছে আছে, যা প্রকাশ করলে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রীসভায় ঠাঁই নেয়া অনেক নেতার কুকীর্তি ফাঁস হয়ে পড়বে। আগামী ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এই প্রেসক্লাবে ফিল্ম শো প্রমাণ করে দেবে কার কি চরিত্র ছিল? জহির রায়হান আসলে কি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তা অসম্পূর্ণ থাকলেও নেতৃস্থানীয় আওয়ামী লীগরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে আওয়ামী লীগের হাত ছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম অধ্যাপক ড. নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউ মার্কেটে যেতে রাস্তা পার হতেই বাঁ হাতে একটা পেট্রোল পাম্প আছে। ওটার নাম আমরা দিয়েছিলাম জয় বাংলা পাম্প।

স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এখানে আমাদের অনেক সংবাদ আদান-প্রদান হতো। নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একদিন খুব গম্ভীর মুখে ডাক্তার বললেন, চৌধুরী সাহেব আমাদের বিপদে ফেলবেন? বললাম-কেন চৌধুরী? বললেন-তোমার ভ্রাতা মুনীর চৌধুরী। আজ আমাদের চারটি ছেলে আমাকে পাম্পের পিছনে ডেকে বললো-এখনও সময় আছে, স্যারকে চলে যেতে বলেন, না হলে আমরা ওর মুখ বেঁধে নিয়ে যাবো। যথাস্থানে খবর পৌঁছানো হলো। মুনীর কিছুটা শংকিত হয়েছিলেন এবং সব সময়ে বিভাগীয় পিয়ন লুৎফরকে সঙ্গে নিয়ে চলতেন।

(সূত্রঃ '৭১-এর ছাবিবশে মার্চের এ্যালবাম: স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা, নীলিমা ইব্রাহীম, দৈনিক আজকের কাগজ, ১২ চৈত্র ১৪০০) মুক্তিযোদ্ধারা নবেম্বর মাসে মুনীর চৌধুরীকে মুখ বেঁধে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, কারণ তিনি পাক বাহিনীর পক্ষে ছিলেন। পাক বাহিনীর রাজাকার আল-বদর আল-সামস কখনও তাদের পক্ষের লোককে হত্যা করতে পারে না। অথচ কয়েকদিন পরেই মুনীর চৌধুরীকে হত্যা করা হলো। হত্যাকারী কারা? হত্যাকারী কারা এ সম্পর্কে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ পরিষ্কার বলে গেছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ এমপি মরহুম এম এ মোহাইমেন লিখেছেন, ১৬ ডিসেম্বর ভোরবেলা শুনতে পেলাম ঐদিন দুপুরের পরে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল নিয়াজী তার সমস্ত সৈন্যবাহিনী নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

শুনে ছুটে গেলাম আট নং থিয়েটার রোডে তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ভাবলাম তিনি হয়তো এতক্ষণে ঢাকায় চলে গেছেন অথবা যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু গিয়ে দেখলাম তাজউদ্দীন সাহেব স্বাভাবিক পোশাকে বসে আছেন। তিনি কখন যাবেন জিজ্ঞাসা করায় বললেন তিনি যাবেন না। শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম।

এতদিন পর দেশ স্বাধীন হচ্ছে, শত্রুবাহিনী আত্মসমর্পণ করছে, এ সময় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে থাকবেন না ব্যাপারটা আমার মোটেও বোধগম্য হলো না। কারণ জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, শেখ মনি ও মুজিব বাহিনীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তো আপনার জানা আছে। সৈন্যবাহিনী ও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছি এই মুহূর্তে ঢাকায় অরাজক অবস্থা চলছে। ঠিক এ সময়ে ঢাকার কোন জনসমাবেশের মধ্যে আমার উপস্থিত থাকা মোটেই নিরাপদ নহে। জনতার ভিড়ের মধ্যে মুজিব বাহিনীর লোকেরা যে কোন মুহূর্তে আমাকে গুলী করে হত্যা করতে পারে, কিন্তু দোষ চাপিয়ে দেবে আল-বদর, আল-শামসের উপর এবং লোকেরাও সেটা বিশ্বাস করবে।

তাই আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছে ঢাকার অবস্থা মোটামুটি তাদের আয়ত্তে আসলে তারা আমাকে জানাবে এবং আমি আশা করি দু'একদিনের মধ্যেই আমি যেতে পারবো। ' (সূত্র ঃ ঢাকা-আগরতলা-মুজিবনগর, এম এ মোহাইমেন, পাইওনীয়ার পাবলিকেশনস, ঢাকা, পৃ. ১৬০-১৬১)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.