বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
চৈত্র মাস বলেই আজকাল সকালের দিকে জানালা দিয়ে ঢোকা রোদের আলোয় ঘরজুড়ে আলোর মেলা বসে। ঘরটা তখন হলুদ রঙের ঝলমলে আলোয় ভরে ওঠে । বহুদিন হল এ শহর থেকে প্রজাপতিরা লুপ্ত হয়ে গেছে, নইলে প্রজাপতিরা ঠিকই এ ঘরের আলোর মেলায় ঢুকত ।
হঠাৎ চৈত্রের বাতাসে ওদের হলদে ডানাগুলো হেলে পড়ত।
সকালের দিকে চোখ বুজে জানালার দিকে মুখ করে একটা চেয়ারে বসে থাকেন আবু জাফর। তার শৈশব জুড়ে হলুদ রঙের প্রচুর প্রজাপতি ছিল; সে প্রজাপতির দলও আজও তার স্বপ্নে জীবন্ত হয়ে ওঠে। কখনও জাগরণ মুহূর্তে তিনি জানালার দিকে তাকান। তার মুখে চোখে তখন চৈত্রের রোদের তাপ লাগে।
চোখ বুজে থাকা সত্ত্বেও আলোর হলুদ আভা টের পান। সেই সঙ্গে পান অনাগত আমের মুকুলের কড়া গন্ধ । দোতলার জানালা ঘেঁষে একটা আম গাছ দাঁড়িয়ে। সে গাছে এখন অনাগত মুকুলের সমারোহ। আর ... সকালবেলার কাকেদের ঐক্যতান।
হঠাৎ ঘরের সুগন্ধ বদলে যায়। আবু জাফর টের পেলেন তার স্ত্রী ঘরে ঢুকেছে। মমতাজের শরীরে এক ধরনের ভারি মিষ্টি গন্ধ লেপা থাকে-যে মিষ্টি গন্ধ টির অস্তিত্ব আবু জাফর আজ থেকে বাইশ বছর আগেই টের পেয়েছিলেন। মমতাজ কাছে এলে অন্যসব গন্ধ ছাপিয়ে কেবলই মমতাজের শরীরে মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে আজ থেকে বাইশ বছর আগে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভেবেছিলেন ।
তা আবু জাফর সৌভাগ্য শালী ঠিকই; পাস করে বিদেশি অষুধ কোম্পানীতে ভালো চাকরি পেলেন, লক্ষ্মী স্ত্রী পেলেন, পর পর তিন ছেলের বাবা হলেন। কিন্তু ... জীবন যে এমন ছলনা করবে কে জানত। আজকাল মমতাজের মায়াভরা মুখটিও ঝাপসা লাগে ... চারিপাশের সব কেমন আবছা হয় আসছে ...
মমতাজ বলল, বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন ।
আবু জাফর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মমতাজকে আজ বাড়িঅলা ডেকেছিলেন।
আবু জাফর ক্ষীন উদ্বেগ বোধ করেন। তিন মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি। এমন হওয়ার কথা ছিল না। বছর তিনেক আগেও মধ্যপ্রাচ্যে ভালো চাকরি ছিল। ফার্মাসিস্ট।
ভালো বেতন ছিল। তখন অনেককে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন। এখন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ড্রপটা কই?
ড্রয়ারে দেখ।
দেখি-
তিনি চোখ খোলেন।
চোখের পাতা আঠা আঠা হয়ে থাকে। ঠান্ডা বিন্দু গড়িয়ে পড়ে, ছড়িয়ে যায়। আরাম লাগে। না পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে যান নি তিনি। তারপরও মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি টা থাকল না।
প্রাইভেট ফার্ম। ম্যাজেনমেন্ট বলল, ফার্মাসিস্ট এর চোখ ভালো হতে হয়। অণুবীক্ষণযন্ত্রে কত কী দেখতে হয়। আপনি বরং দেশে ফিরে যান। আমরা এককালীন থোক টাকা দিয়ে দিচ্ছি।
মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার আগেই এ বাড়িতেই ছিলেন। বাড়িঅলা ভালো মানুষ। তখন ভাড়া আটকাত না। এককালীন থোক টাকা কবে শেষ। বেশির ভাগ টাকা বেরিয়ে গেল চিকিৎসায়।
ড. আহমেদ নিজাম বললেন, আপনার কেসটা রেয়ার। এক কাজ করুন। আপনি বরং একবার কিউবা যান। ওরা অনেক উন্নতি করেছে এ ফিল্ডে।
তাই কি হয়।
কিউবা গেলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে। ছেলেদের পড়াশোনা আছে ...
এখন কয়টা বাজে। বাড়িটা এই সকালে সুনসান করছে। আবু জাফরের তিন ছেলের সবাই পড়ছে। ছোটটি এবার ক্লাস টেনে উঠল।
বড় দুটি প্রাইভেট ইউনিভারসিটি পড়ছে। তারা হাত খরচের টাকা যোগাতে টিউশনি করছে-তবে মূল টাকাটা আবু জাফরকেই দিতে হয়। সেই মূলে টান পড়েছে অনেক আগেই ...
কলিং বেল বাজল।
মর্জিনা এল মনে হয়।
খবর কাগজ গুটিয়ে মমতাজ উঠে চলে গেল।
ঘরে রইল কেবল অনাগত মুকুলের কড়া ঘ্রান আর বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্বেগ। ঘরটায় মমতাজের শরীরের সুগন্ধ আর নেই। জানালা দিয়ে ঢোকা ঘরের রোদ অনেকটা সরে গেছে। আবু জাফর তবু পায়ের কাছে তাপ টের পান। নিচের গলিতে রিকশার টুংটাং।
রিকশা চলে গেলে গলি আবার নির্জন। আজকাল বোধশক্তি প্রখর হয়ে উঠছে। অনেক দূর থেকে বিড়ালের পায়ের শব্দও যেন শুনতে পান। আজকাল রাতে ঘুম হয় না তেমন। তখন জেগে নানারকম শব্দ শোনেন।
কত বিচিত্র রকম শব্দ। অন্ধত্বের কাছাকাছি না-এলে হয়তো-বা শোনা যায় না ...মাথার ওপর ফুল স্পীডে পাখা ঘুরছে। এক্ষুনি কারেন্ট চলে যাবে। দশটা বাজল কি? কাল সারারাত কারেন্ট ছিল না। ... চৈত্রের শেষ দিকে দেশে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ।
খরতাপে পুড়ছে সারাদেশ। এসব অবশ্য আবু জাফরের সমস্যা নয়। বাড়িওয়ালা বলছেন বাড়ি ছেড়ে দিতে। কোথাও যাওয়ার নেই। কুমিল্লার জায়গা-জমি মেজ ভাই ভোগ দখল করছেন।
( আবু জাফরের বড় ভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। ) মাস কয়েক আগে মমতাজকে নিয়ে গিয়েছিলেন বরুড়া। চোখে রোদ লাগানো নিষেধ-তা সত্ত্বেও বাসে চেপে গিয়েছিলেন- যদি পৈত্রিক সম্পত্তি বেচে কিছু টাকা পাওয়া যায়। তিন ভাইয়ের ভাগে পাঁচ কানি করে সম্পত্তি। মেজ ভাই মিজান মির্দা অতি ধুরন্ধর লোক।
সব জমি বর্গা দিয়ে রেখেছেন। জমি বিক্রির কথা উঠতেই মেজ ভাই মিজান মির্দা বললেন, হায়, হায় কস কি জাফর... বাপ-দাদার জমি বেইচবি? বাপ-দাদার মানইজ্জ্বত আছে না, মির্দা বাড়ির ইজ্জ্বত আছে না ...জমি বেচবি শুইনা লোকে কইব কি? বরুড়া থেকে ভগ্ন মনোরথে ফিরে এসেছেন। বরুড়ায় এখন কানি কত করে - তাও জানা যায়নি। না, কুমিল্লায় পৈত্রিক ভিটায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না। গত মাসে মেজ ভাই একবার ঢাকায় এসেছিলেন।
আলগা দরদ দেখিয়ে বললেন, লও, যা হইবার হইছে। লও আমাদের লগে থাকবা চল। আবু জাফর রাজী হননি। মেজ ভাইকে দুদিন বাড়িতে রেখে যত্নআত্বি করে বিদায় করেছেন। আজ আদর করে ডেকে নেবে- দু’দিন পর এমন তিক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন যেন পৈত্রিক ভিটায় থাকা না যায়।
আবু জাফর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি ছাপা লুঙ্গি আর সাদা ফতুয়া পরে আছেন। ফরসা ভরাট মুখে ঘাম জমেছে। মুখ ভরতি কাঁচাপাকা দাড়ি। দীর্ঘ স্বাস্থবান শরীর- দেখলেই বোঝা যায় এ মানুষটির শরীরে পুরোপুরি বাঙালি রক্ত বইছে না; পশ্চিমা মুসলমানী রক্তের মিশেল আছে।
আবু জাফরের মাথায় টুপি, হাতে তসবিহ্ । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও আজকাল সারাক্ষণই জিকির করেন। ছাত্রজীবনে তেমন রিলিজিয়াস ছিলেন না। মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি হওয়ার পরই ধর্মেকর্মে মতি ফিরেছিল। তারপর সে বিশ্বাস দিনদিন আরও গভীর হয়ে ওঠে।
আজকাল এমন ভাবে জিকির করেন যেন আল্লাহতালা ফেরেস্তা পাঠাবেনই। দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবেন কিংবা ... অশেষ রহমত বর্ষন করবেন।
হ্যাঁ, সে রকম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বৈ কী।
আবু জাফরের শ্বশুরের বয়স হলেও আজও বেঁচে আছেন। চাকরি জীবনে মোহম্মদপুর দোতলা বাড়ি করেছেন সৈয়দ ইসমাইল লতিফ।
বড় মেয়ের দুর্দশার কথা জানেন। আরও দুটি তলা বাড়ানোর জন্য হাউস বিল্ডিংয়ে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সৈয়দ ইসমাইল লতিফ তিন মেয়ে এক ছেলে। মমতাজ বড়, বড় কন্যার জন্য অসম্ভব টান। তাছাড়া এ দেশের আইনে মেয়েরা বাবার সম্পত্তি পায়।
তিন তলা কমপ্লিট হলে একটা ফ্ল্যাটে উঠে চলে যেতে পারবেন। বাড়িঅলার সঙ্গে শীতল যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে না। এইটুকু না মালিক ... তোমার আরও আরও করুণার বর্ষন লাগবে মালিক ...এত অল্পে পাড়ি দেওয়া যাবে না অন্ধ দিন ও রাত ...আমি তোমার করুণার অপেক্ষায় রয়েছি মালিক ...বাড়িওয়ালা যথেষ্ট ভদ্র, এখনও অনেক মোলায়েম আচরণ করেন। তারপরও যখন বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন তখন তো আর থাকা যায় না ...কিন্তু, কোথাও যাওয়ার নেই মালিক।
আবু জাফর টের পেলেন চোখে আরাম লাগছে।
চোখের ড্রপটা আরাম দেয়। অল্প ঘুমও পায়। দিনের বেলায় ঘুমানোর পক্ষপাতী তিনি নন। আজকাল যখনক্ষণ জেগে থাকেন দোজাহানের মালিকের কাছে প্রার্থনায় ডুবে থাকেন।
মমতাজ ফিরে এসে আরেকটি দুঃসংবাদ দেয়।
মর্জিনা আর সামনে মাস থেকে কাজ করবে না বলল।
কেন?
দেশে চলে যাবে বলল। ওর বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
ও। আবু জাফর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মেয়েটি ভালো ছিল। ঠিক কর্মাশিয়াল না, আন্তরিক। ‘মামা’, ‘মামা’ করে। মমতাজ বাড়ি না-থাকলে পরম যত্নে চোখের ড্রপ দিয়ে দেয়। একটা মেয়ের অভাব বোধ করেন আবু জাফর।
আবার ভাবেন মেয়ে নেই ভালো হয়েছে। এই দুর্যোগে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে থাকত। ...মর্জিনা চলে যাচ্ছে। আবু জাফর শিউরে উঠলেন। এ বাড়ির পাট কি চুকল।
... মনে মনে বেহেস্তের ফেরেস্তার আগমনের প্রতীক্ষা করছেন।
মমতাজ বলল, বাবা যদি বাড়িটা এরই মধ্যে শেষ করে ফেলেন তো মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলবে। বাড়িঅলা যতই ভালো হোক -অভদ্র আচরণ না করলেও শীতল আচরণ করলে কার ভালো লাগে।
হুমম। আবু জাফরের দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে পড়ে ।
মমতাজ বলে, তিন তলা কমপ্লিট হলে একটা ফ্ল্যাটে উঠে চলে যেতে পারতাম।
আবু জাফর চুপ করে থাকেন। তিনি জানেন অত সহজ না। মমতাজের একটাই ভাই। আতিক-বড় একটা প্রাইভেট ফার্মে আছে; আতিকের বউ জিনাত, জিনাত ডাক্তার।
ভারি অহঙ্কারী জিনাত । অহঙ্কারী আর জেদি। দিনরাত বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়িকে কথায় কথায় শাঁশায়। মোহম্মদপুরের বাড়িটা একাই দখল করার পায়তাঁরা করছে। আতিক একটা ভাম ...
যাক, ওসব পরের কথা।
আপাতত তিন মাসের ভাড়া শোধ করতে হবে। তিন চৌদ্দ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা এখুনি লাগবে। টিঙ্কুর সেমিষ্টারের ফিটা এ মাসেই দিতে হবে। মমতাজ টাকাটা সংসারের খরচ ছাঁটাই করে এত কষ্ট করে জমাল। এখন বাড়ি ভাড়া দিই না টিঙ্কুর সেমিষ্টারের ফি দিই ...এমন দিশেহারা অবস্থা।
কলিং বেল বাজল।
কে এল এ সময়ে? দুধঅলার তো আসার কথা না, গতমাসে তাকে বিদায় করা হয়েছে। পেপারঅলা কি? মর্জিনা রান্নাঘরে বাসন মাজতে বসেছে। ওর এঁটো হাত। মমতাজ উঠে যান।
আবু জাফর অপেক্ষা করেন। ঘরের ভিতরে এখন গভীর ছায়া। কেবল জানালার কাছে চৈত্রের ঝকঝকে রোদ। রোদলাগা আমপাতা ; নিচে গলি। রিকশার টুংটাং শব্দ।
রিকশাটা চলে যেতেই আবার গভীর নির্জনতা।
ফ্রক পরা ছোট্ট একটি মেয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছে। না, এই দৃশ্যটা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। অথচ তার মনে হচ্ছে রোদময় গলিতে ফ্রক পরা ছোট্ট একটি মেয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছে। কাছেই অঙ্কুর নামে একটি ছোটদের কিন্ডারগার্ডেন।
সে স্কুলের রোদেলা প্রাঙ্গন ঘিরে উড়ছে অনেক হলুদ প্রজাপতি। স্কুলের চারিদিকে চারতলা-পাঁচতলা দালান। এসব দরদালান আর তার ভিতরের জনমানুষের সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক? আমি কি এসবের সঙ্গে সর্ম্পকিত? যদি তাই হয় তো আমার নিজেকে এত দূরের মনে হয় কেন? রোদময় একটা শহরে আমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। কই, আমার পাশে এসে কেউ তো দাঁড়াচ্ছে না? তিন মাসের বাড়িভাড়া বাকি পড়ল। এখন ...
মমতাজ ফিরে এসে বলল, দেখ কে এসেছে।
কে?
মিঠু।
মিঠু? কোন মিঠু?
আহা, রোকেয়ার ছেলে মিঠু। তোমার ফুপাতো বোন রোকেয়া, কেন তোমার মনে নেই?
ও হ্যাঁ, মনে আছে । মিঠু এসেছে?
হ্যাঁ।
এস, বাবা, এস।
মামা ভালো আছেন? ঝকঝকে তরুণ কন্ঠ। মিঠুর মুখটা মনে করার চেষ্টা করলেন। অনেকদিন আগে দেখেছেন। মনে পড়ল না।
টের পেলেন- একজন কেউ সালাম করল।
কড়া অপরিচিত পারফিউমের গন্ধে ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মমতাজের শরীরের মিষ্টি গন্ধ বুঝি ম্লান হয়ে এল।
বস বাবা, বস।
চেয়ার টানার শব্দ হল। মিঠু মনে হয় বসল।
মর্জিনা! মর্জিনা! আমাদের চা দে তো। খানিকটা উচুঁ গলায় মমতাজকে বলতে শুনলেন।
জানত তো মিঠু জাপানে থাকে, ওসাকায়। ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়।
ও।
আবু জাফরের মনে পড়ল জাপান যাওয়ার আগে মিঠুর মা রোকেয়া এসে ২ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। রোকেয়ারা তখন নাখালপাড়ায় থাকত, রোকেয়ার স্বামীর কিডনি বিকল হয়েছিল ...আর লিভার সিরোসি ... রোকেয়া গত বছর মারা গেছে ... রোকেয়ার স্বামী মিঠুর বাবাও বেশি দিন বাঁচেন নি।
মিঠু বেশিক্ষণ বসল না। তাড়া আছে, কোন্ সেমিনার না সিম্পোজিয়ামে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বিষয়ে ‘স্পিচ’ দেবে। চা খেয়ে যাওয়ার আগে বলল, মামা এটা রাখেন।
কি রে মিঠু?
মিঠু চুপ করে থাকে।
আবু জাফর টের পেলেন তার হাতে মিঠু কি একটা গুঁজে দিয়েছে। একটা খাম মনে হল।
মিঠু চলে যাওয়ার পর মমতাজ বলল, ২ লাখই আছে । কী ভালো ছেলে দেখ!
আবু জাফর শ্বাস টানলেন।
হাতের তসবিহ্টা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেন। বিড়বিড় করে বলেন, এইটুকু না মালিক ... আমার জীবনের ডুবন্ত নৌকা উদ্ধার করতে তোমার আরও আরও করুণার বর্ষন লাগবে মালিক ...এত অল্প করুণায় এইসব অন্ধ দিন ও রাত পাড়ি দেওয়া যাবে না মালিক...আমি তোমার করুণার অপেক্ষায় রয়েছি মালিক ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।