কালের স্রোত
সূত্র : শীর্ষ নিউজ ডটকম
প্রথম বাংলাদেশী এবং তৃতীয় বাঙ্গালি এম.এ মুহিতকে দিয়ে এভারেস্ট জয়ের প্রহর গুনছে বাংলাদেশ। আজ বেলা সোয়া বারোটায় জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ফাইটে নেপালের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন তিনি।
নেপালস্থ ওয়ার্ল্ড সামিট এক্সপ্লোরার প্রা: লি: ট্রেকিং এজেন্সীর মাধ্যমে ৭ জনের একটি গ্রুপের একমাত্র বাংলাদেশী তিনি। মুহিতের গাইড হিসেবে থাকবেন নিমা গ্যালজেন শেরপা যিনি ৪ বার এবং তার অনুজ পূর্বা তেনজিং শেরপা ৫ বার এভারেস্ট চূড়ায় পা রেখেছেন। এরা দুজনই প্রেম্বা দর্জির অনুজ।
যিনি ১৭৪টি দেশের পতাকার সাথে বাংলাদেশী পতাকা নিয়ে এভারেস্ট চূড়ায় পা রেখেছিলেন।
ছোটবেলাই থেকে প্রকৃতি প্রেমী মুহিত পাঠ্যপুস্তকে এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগের এভারেস্ট জয়ের কাহিনী পড়ে প্রথম রোমাঞ্চ অনুভব করেন। ৯৭ সালের অক্টোবরে ১০বন্ধুর সাথে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বন্ধুদের মধ্যে প্রথম ১৮শ ফুট উচ্চতায় উঠে পর্বতারোহন নেশায় মগ্ন হন তিনি। ২০০৩ সালে সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হকের কাছ থেকে ট্রেকিং ও ফটোগ্রাফীতে হাতে খড়ি নেন মুহিত। ইনাম আল হক তাকে স্বপ্ন দেখান হিমালয় জয়ের।
২০০৩ সালে ইনাম আল হকের নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং কাব। সদস্য হন মুহিত। ২০০৪ সালে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিং-এ অংশ নেন এবং দার্জিলিং এর হিমালায়ন মাউন্টেয়ারিং ইনিষ্টিটিউট এইচএমআই থেকে মৌলিক পর্বতারোহন এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালে উচ্চতর পর্বতারোহন প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন তিনি। এরপর জয় করতে থাকেন বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ। ২০০৭ সালের মে মাসে নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের চুলু ওয়েস্ট শৃঙ্গের ২১ হাজার ৫৯ এবং সেপ্টেম্বর মাসে মেরা পর্বতশৃঙ্গের ২১ হাজার ৮শ ৩০ ফুট, ২০০৮ সালের মে মাসে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মানাসলুর ২৬ হাজার ৭শ ৮০ ফুট এবং ২০০৯ সালে দলনেতা হিসেবে নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ চো ইয়ো জয় করেন।
এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোন বাংলাদেশী ২৬ হাজার ৯০৬ ফুট বা ৮ হাজার ২শ ১ মিটার পর্বতারোহীদের সম্মানজনক এলিট কাবে প্রবেশ করে।
এভারেস্ট অভিযানে পূর্ব মুহুর্তে শীর্ষ নিউজ ডটকমের সাথে আলাপচারিতায় মুহিত জানান, একটা পাহাড়ে ওঠার পর যে বোমাঞ্চ হয় তার সাথে আমি অন্য কিছুর তুলনা করতে পারি না। তিনি বলেন, আমি যখন কোনো পর্বতে উঠি আর ভাবি আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি তখন আমার মানসিক শক্তি বেড়ে যায়। পর্বতে উঠতে হলে শারিরীক শক্তির চেয়ে মানসিক শক্তিটাই বেশি দরকার। তবে পর্বতারোহন যেমন ঝুকিপূর্ণ তেমন ব্যয়বহুল।
অধিকাংশ নিজের অর্থ দিয়ে অভিযান সম্পন্ন করেছি। তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, বেসরকারী সংগঠন পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। এবারো ট্রান্সকম বেভারেজ লি. আকিজ গ্রুপ, সিটি ব্যাংক এন.এ এবং ইফাদ গ্রুপ এ অভিযানের খরচ ৩৮ হাজার ইউএস ডলারের যোগান দিচ্ছে। পাঁচ দিক দিয়ে ওঠা যায় এভারেস্টে। মুহিত উঠবেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথ এভারেস্টের নর্থ ফেইস (তিব্বত) দিয়ে।
স্বাস্থ্য ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৬০ দিনে এই অভিযান পূর্ণ করা সম্ভব।
মুহিত বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছি এটাই আমাকে বাড়তি প্রেরণা যোগাচ্ছে। পতাকার শক্তি যে অনেক বড় শক্তি এটা আমি সব সময় অনুভব করেছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেকিং এক প্রকার স্পোর্টস। বাংলাদেশে বিভিন্ন ফেডারেশন আছে।
তাই ট্রেকিং বিষয়ে ক্রীড়া সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম সেখান থেকে কাঙ্খিত সাড়া পায় নি। তিনি বলেন, ট্রেকিং- এ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে বাংলাদেশের যুব সমাজ মাদকের রোমাঞ্চ ছেড়ে পর্বতারোহনের রোমাঞ্চে ফিরে আসতো।
এম. এ মুহিত ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার গঙ্গারাম গ্রামে, তিনি ৮৫ সনে পুরান ঢাকার প্রগ্রেজ স্কুল থেকে এস.এস.সি, ৮৭ সনে নটরডেম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ঢকা সিটি কলেজ থেকে ৮৯ সনে বি.কম পাশ করেন। বাবা মো. আনোয়ার হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগম। ৪ভাই এবং ৩ বোনের মধ্যে ভাইদের মধ্যে তিনি বড়।
বর্তমানে মুহিত প্যারাগণ গ্রুপের প্যারাগণ প্লাস্ট ফাইবার লি. এর মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।