আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর সাফল্যের কাহিনী (উভয় হাতের কবজি নেই)



মানুষের মানচিত্র: শারীরিক প্রতিবন্ধী শেখ আলী হোসেনের সংসার চলে ভ্যান চালিয়ে আজমাল হোসেন মামুন বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারে সচারচর চোখে পড়ে শেখ আলী হোসেন (৫৫) নামে একজন ভ্যানচালক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে। যাকে এক নামে সবাই আলী ভাই হিসেবে চিনে। উভয় হাতের কবজি না থাকার পরও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। মাঝে মধ্যে পলস্নী গীতি গাইতে থাকে। তার প্রতিবন্ধিতার সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, ৩২ বছর বয়সে বাবার সাথে মরিচ ক্ষেতে নিড়ানীর কাজ করছিলো।

হঠাৎ কারো পুতে রাখা বোমা বাস্ট হয়ে তার উভয় হাতের কবজি উড়ে যায় এবং বাম চোখের দৃষ্টি শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। দীর্ঘ ১০ মাস খুলনা সদর হাসপাতাল, বাগের হাট সদর হাসপাতাল, শ্রীমনি বাদামতলা চক্ষু হাসপাতাল এবং ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে। বাগেরহাট সদর উপজেলার এম এম আওয়াল নামের এক সমাজ সেবক তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন। প্রতিবন্ধিতার শিকার হওয়ার পর তার প্রথম বউ ২ মাসের ১ টি ছেলে শিশু রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিয়ে করে।

দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভের এক কন্যা সমত্মানও রয়েছে। মাত্র দু বছর আগে জীবিকার তাগিদে কোন কাজ না করে খুলনা শহরে ভিক্ষা করেছে বহুদিন। কিমত্মু ২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) নামে এক জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা সিডর আক্রামত্ম বাগেরহাটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের লক্ষে ‘উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-উদ্যোগ (পিএসআইডি)’ এপ্রোচ বাসত্মবায়নের কাজ শুরম্ন করে। সংগঠনটি প্রথমে এক জরীপ চালায়। জরিপের মাধ্যমে শত শত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে তাকেও সণাক্ত করা হয়।

ফলে সে বাগেরহাট পিএসআইডি-সেন্টারের অধীনে তৃণমূল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের সদস্য হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আত্ম প্রত্যয়ে বলিয়ান হয়। ফলে ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে ভ্যান চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাঁর পর একদিন শুরম্ন করে ভ্যান চালানো। অনেকে বিষয়টি দেখে তাঁকে নিয়ে হাঁসি-ঠাট্টা আরম্ভ করে।

প্রথমে কয়েকমাস তার কষ্ট হয়েছে। অনেকে ভ্যানে ওঠতে চাইতো না। সাধারণ মানুষ মনে করতো উভয় হাতের কবজি নেই বলে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আসেত্ম আসেত্ম সে সমস্যা নেই। এখন মানুষ আগ্রহ করে তার ভ্যানে মাল বোঝাই করে দেয়।

ভ্যান চালিয়ে সে মাসিক প্রায় ৪ হাজার টাকা আয় করে। পাশাপাশি ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কৃষি ফসল আবাদ করছে। এলাকাবাসী জানায়, শেখ আলী হোসেন খুব সাহসী। উভয় হাতের কবজি না থাকলে গাছে ওঠে ডাব পাড়তে পারে, নদীতে সাঁতার কাটতে পারে। সে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।

স্থানীয়ভাবে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে লোক সংগীত পরিবেশন করে। সরকারিভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তবে যতই দুঃখে থাক গান ছাড়া তাঁর চলে না। ভ্যান চালানোর পর যখন গাছের নিচে বা দোকানে বিশ্রাম নেয় তখন কেউ গান গাইতে বললেই মনের টানে গাইতে শুরম্ন করে। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন উন্নয়নকর্মী বিপিকেএস কমপ্লেক্স, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।