রাজাকার ও তাদের বংশধরেরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ঠাই পাবে
রাবি চবি হত্যাকাণ্ড যুদ্ধপরাধের বিচার, শিবিরের গ্রুপিং নানা কারণে জামাত কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে এ কারণে তাদের আরেকটা ফ্রন্ট হিজবুতকে দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি করার জন্য মাঠে নামিয়েছে প্রথম আলোর আজকে এ সম্পর্কিত খবরটা দেখুন
২০১১ সালের মধ্যে দেশে নগরকেন্দ্রিক নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে হিযবুত তাহ্রীর। উগ্রপন্থী এ সংগঠনটি ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ নামে বিভিন্ন দেশে জিহাদ করতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী সংগ্রহ করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, একাধিক এনজিও, মানবাধিকার ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিযবুত তাহ্রীরকে নানাভাবে উৎসাহ বা সহযোগিতা দিচ্ছে।
নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনটির গোপন তৎপরতার নেতৃত্বদানকারী নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তারা এসব তথ্য পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, হিযবুত তাহ্রীরকে গোপনে সহযোগিতা বা উৎসাহদাতা এসব পেশাজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর ইতিমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা—এসবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, নিষিদ্ধ সংগঠনটির সঙ্গে এখনো যুক্ত আছে, এমন অন্তত ৭০০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এঁদের প্রায় সবাই বয়সে যুবক এবং সচ্ছল পরিবারের সন্তান।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত আড়াই মাসে হিযবুত তাহরীরের অর্ধশত নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে সংগঠনটির এ দেশে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও নেতা ওয়ায়েস মাহবুব ওরফে বাপ্পী, ফয়সাল খান, মাওলানা আবদুর রাকীব খান, কামরুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ গত রোববার ফয়সালকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে এসবির একটি দল।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল ও ওয়ায়েস মাহবুব পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০১১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শহরকেন্দ্রিক গণ-অসন্তোষ সৃষ্টির নামে বড় ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে তৎপরতা শুরু করে হিযবুত তাহ্রীর। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও পঁচাত্তারের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবসহ দেশি-বিদেশি এ রকম বিভিন্ন ঘটনার ওপর গবেষণা করে বাংলাদেশের উপযোগী পন্থা নির্ধারণ করা হয়। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী ও সামরিক সদস্যদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিতে প্রপাগাণ্ডাকে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তবে সংগঠনটিকে সরকার নিষিদ্ধ করায় তারা এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে এ দুই নেতা জানান।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হিযবুত তাহ্রীরকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তাই এই উগ্রপন্থী দলটিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য এসবির একটি দলকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে হিযবুত তাহরীরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। তিনি বলেন, এ সংগঠনটি মূলত শহরকেন্দ্রিক তৎপরতায় বিশ্বাসী। বিশেষ করে রাজধানীকে ঘিরে। তাঁরা সদস্যদের প্রথমে বিভিন্ন পাঠচক্রের মাধ্যমে মগজ ধোলাই করে এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষানীতি, ব্যবসানীতি ও অর্থনীতির ওপর একটা ধারণা দেয়।
হিযবুত তাহরীরের ঘোষণাপত্রে তারা গণতন্ত্র ও প্রচলিত নির্বাচন-ব্যবস্থাকে ‘কুফর’ আখ্যা দিয়ে একে বর্জনের ডাক দেয়। আবার তাদের ভাষায় ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা বা ইসলামি শাসন কায়েমের কথা বলে। তবে তারা সশস্ত্র বিপ্লবের কথা বলে না। তাহলে কী করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা হবে—এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে ফয়সাল খান গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বলেছেন, তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতন ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন ঠিকই। তাঁরা চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে জিহাদ বা সশস্ত্র পন্থা অবলম্বনে পিছ-পা হবেন না।
তবে এ কথা এখনই বলতে মানা আছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া নেতারা জানিয়েছেন, হিযবুত তাহরীরের লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, তাঁরা মূলত তাঁদের ভাষায় ‘বিশ্বব্যাপী জিহাদি আন্দোলনের’ জন্য কর্মী গড়ে তুলছেন। এ জন্য বিশ্বের কোন দেশে জিহাদি আন্দোলনের কী অবস্থা, সে সম্পর্কে পাঠচক্র, বই-পুস্তক ও ভিডিও সিডির মাধ্যমে কর্মীদের ধারণা দেওয়া হয়। এ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, গোলটেবিল আলোচনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় অন্য যেকোনো দলের তুলনায় এগিয়ে ছিল হিযবুত তাহ্রীর। আর তাদের এসব কর্মসূচির ১০ শতাংশ বাংলাদেশ ইস্যুতে।
বাকি সবই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে। আর এসব ইস্যু নির্ধারণ করে দেওয়া হয় সংগঠনটির আন্তর্জাতিক কমিটি থেকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা সংগঠনের বিভিন্ন ওয়েসসাইটে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোথায় থেকে বিশ্বব্যাপী সংগঠনটি নিয়ন্ত্রিত হয়, তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন এদের মূল কেন্দ্র।
তারা লন্ডনের সাংগঠনিক নাম দিয়েছে লন্ডনিস্তান। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উজবেকিস্তানের নামের আদলে লন্ডনিস্তান বলে তারা। এ ছাড়া সংগঠনটির এ দেশে তৎপরতার জন্য অর্থের উৎস এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি গোয়েন্দারা। তবে তারা একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও প্রকাশনা গড়ে তুলেছে, যার কয়েকটি এসবি শনাক্ত করে সিলগালা করে দিয়েছে। এ ছাড়া তাদের একটি কোচিং সেন্টার ও একটি মাদ্রাসা শনাক্ত করা হয়েছে বলে অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, নিষিদ্ধ হওয়ার পর প্রথম সারির নেতারা গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকায় ফয়সালসহ মধ্যম সারির তিনজন নেতা হিযবুত তাহরীরের গোপন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই তিনজনের মধ্যে ওয়ায়েস মাহবুব ওরফে বাপ্পীকে গত মাসে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অপরজন কাজী মোরশেদুল হক এখনো পলাতক। এ ছাড়া নারী শাখার প্রধানও ভীষণ তৎপর। তাঁকেও গোয়েন্দারা নজরদারিতে রেখেছে।
সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সরাসরি হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠনটির বিভিন্ন গোপন বৈঠক করার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক বলেন, তাঁরা এই বেআইনি সংগঠনের গোপন-প্রকাশ্য সব তৎপরতার ব্যাপারে নজরদারি বাড়িয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযানও অব্যাহত আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।