পাঁচ গানম্যান পাঠিয়ে আল-আরাফাহ ব্যাংকের এমডিকে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান। অসহায় এমডি এমএ সামাদ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মানববর্ম তৈরি করে অপহরণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালান। প্রতিমন্ত্রীর তদবির রক্ষা না করায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এ ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল ১১টায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান আল-আরাফাহ ব্যাংকের এমডি এমএ সামাদ শেখকে টেলিফোন করে ব্যাংকটির রাজশাহী শাখার সিনিয়র অফিসার আলাউদ্দিন আল আজাদকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলেন।
প্রতিমন্ত্রীর প্রস্তাবের জবাবে এমডি জানান, আল আজাদের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন মাসের নোটিশ দেয়া হয়েছে। একথা শুনে প্রতিমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, আল-আরাফাহ ব্যাংক জেএমবি’র মদতদাতা ও অস্ত্রদাতা। তুই রাজাকার। তিনি এমডিকে অশ্রাব্য গালি দিয়ে বলেন, তুই জেএমবি, রাজাকার, আলবদর।
উত্তেজিত প্রতিমন্ত্রী একপর্যায়ে বলেন, তোর এতবড় সাহস, একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় তা জানিস না? কয়েক মিনিটের মধ্যে বুঝবি আমি মন্ত্রী না কী। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তুই আওয়ামী লীগের কর্মীকে ব্যাংক থেকে বের করে দিয়েছিস। তখন এমডি বলেন, আপনি প্রতিমন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদ। আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না। এতে প্রতিমন্ত্রী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, তোকে এখনই তুলে নিয়ে আসব।
আমি গানম্যান পাঠালাম।
সূত্র জানায়, এমন পরিস্থিতিতে এমডি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে মানববর্ম তৈরি করেন।
প্রতিমন্ত্রী ফোন করার আধঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রীর গানম্যান, এপিএস ও ড্রাইভারসহ পাঁচ ব্যক্তি এমডির অনুমোদন না নিয়েই মতিঝিলের পিপলস ইন্স্যুরেন্স ভবনে আল আরাফাহ ব্যাংকের হেড অফিসে এমডির কক্ষে ঢুকে পড়ে। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তারা এমডিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ফিরে আসার সময় শাসিয়ে বলে, এ ঘটনা কোনোভাবেই যেন মিডিয়ায় না আসে।
এ ব্যাপারে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবু্বুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আসলে ঘটনাটা সে রকম নয়। তাকে আমি টেলিফোন করেছি এটা সত্য। তবে তাকে আমার কাছে হেয়ালি মনে হয়েছে। আমি তাকে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, বাড়িঘর নেই। তখন আমি তাকে বলি এটা কিভাবে সম্ভব? বাড়িঘর না থাকলে বাংলাদেশে চাকরি করছেন কিভাবে? সবারই তো একটি ঠিকানা থাকে।
পরে আমার পরিচয় দিতেই তিনি বলেন, এই নামে কোনো প্রতিমন্ত্রী আছে কিনা তাদের জানা নেই। তারপর আমি তাকে বলেছি, যারা বাংলাদেশে বসবাস করে এবং সচেতন তারা জানার কথা।
প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, আলাউদ্দিন আল আজাদকে তিনি চিনেন না। তবে আলাউদ্দিন আল আজাদ তার কাছে এসে কান্নাকাটি করলে তিনি আল আরাফাহ ব্যাংকের এমডিকে ফোন করেন। ফোন করার পর আল আজাদ ও পিএকে এমডির কাছে পাঠান।
তার ভিজিটিং কার্ড পড়ে এমডি ফোন করে বলেন, অনেকেই এরকম ফোন করে বিধায় আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করবেন। এমডি ওই দুই ব্যক্তিকে আপ্যায়ন করে বিদায় করেন এবং বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ১৫ মার্চ আল-আরাফা ব্যাংকের চাকরিবিধি অনুযায়ী আলাউদ্দিন আল আজাদের চাকরি শেষ হচ্ছে। এরমধ্যে তার চাকরি রক্ষার জন্য নানামহল থেকে ব্যাংকে তদবির এলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি।
সবশেষে তিনি শরণাপন্ন হন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মোঃ মাহবুবুর রহমান তালুকদারের।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।