আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আউটসোর্সিং : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

www.cameraman-blog.com/

একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমাদের ৪ তলায় এক ভদ্রলোক থাকেন পরিবার নিয়ে। ২ ছেলে ১ মেয়ে আর স্ত্রী। স্ত্রী চাকরী করেন কোন একটা ট্রেডিং হাউজে। শুরু থেকেই দেখছি ভদ্রলোক কোথাও তেমন একটা যান না, একমাত্র বাজার করা আর বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়া ছাড়া।

সারাদিন বাসাতেই থাকেন, পারফেক্ট হাউজ হাজবেন্ড আর কি। কিছুদিন আগে জানলাম তিনি কম্পিউটারে কি যেন কাজ করেন। একদিন সিড়িতে দেখা হওয়ার পরপরই জিজ্ঞাসা করলাম সে কথা। হেসে বাসায় যাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন। সূযোগ বুঝে একদিন চলে গেলাম ৪ তলায়।

ভদ্রলোকই দরজা খূলে দিলেন। ঘরে ঢুকেই দেখি একপাশে দু'টো ডেস্কটপ কম্পিউটার, যার একটাতে বসে কাজ করছে এক তরুণ। আরেকটাতে মনে হলো ভদ্রলোক কাজ করছিলেন। কুশল বিনিময়ের পর ভদ্রলোকই প্রথম বললেন অটোক্যাড জানি কিনা। না বলতেই বললেন তিনি অটোক্যাডে কাজ করেন।

তরুণটিও অটোক্যাডে কাজ করছিলো। জানলাম কোন এক প্রবাসী এসব কাজ যোগাড় করেন। হাতে আকা নকশা, মাপ দেয়া থাকে। আমার প্রতিবেশী স্ক্যান করা ছবি দেখে অটোক্যাডে ফুটিয়ে তুলেন নকশাটা। শেষ হলে সেটা পাঠিয়ে দেন আবার।

প্রবাসী ভদ্রলোকই এর পারিশ্রমিক পান। তিনি ২০% রেখে বাকিটা পাঠিয়ে দেন ঢাকায়। এভাবেই চলছে। সেদিন ভদ্রলোকের সাথে অনেকক্ষণ আলাপ করেছিলাম। তিনি বললেন দু'টো সমস্যার কথা।

প্রথমটি আমাদের ইন্টারনেট ব্যান্ডওয়াইডথ। স্ক্যান করা কপির সাইজ মাঝে মাঝে এতো বেশী থাকে যে সবগুলো ডাউনলোড করতে গেলে হয়তো দিনের বেশীরভাগ সময় চলে যায়। এর উপর আছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। আর দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো পেমেন্ট। কার্যকরী কোন ব্যবস্থা না থাকায়, তিনি নিজে কাজ জোগাড় করে পেমেন্ট নিতে পারছেন না।

নির্ভর করতে হচ্ছে অন্যের উপর। ভদ্রলোকের সাথে আলাপের পর আমি কয়েকদিন নেটে আউটসোর্সিং কাজ নিয়ে খোজাখূজি করলাম। কম্পিউটারে ন্যুনতম দক্ষ এরকম লোকের জন্য করার মতো অনেক কাজই আছে। যেমন - ১. রিয়েল এষ্টেটের জন্য বিভিন্ন ফ্রি এড সাইটে এড (বিজ্ঞাপন) সাবমিট করা। কি লিখতে হবে সেটা কোম্পানিই বলে দেবে।

স্কিল - কপি-পেষ্ট করা, এড সাবমিট, ইমেইল ভেরিফাই করা ইত্যাদি। মজুরী - ঘন্টায় ৫ ডলার সর্বোচ্চ। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা কাজ করতে হবে। এই কাজটির জন্য বিড হয়েছে ঘন্টায় ২.২৫ ডলার সর্বনিম্ন। ২. বিভিন্ন সোর্স থেকে ইমেইল এড্রেস কালেক্ট করে সবাইকে একটা পূর্বনির্ধারিত ইমেইল পাঠাতে হবে।

উত্তর এলে সেখান থেকে নাম, কোম্পানি, ইমেইল, ফোন নং একটা স্প্রেডশিটে এন্ট্রি করতে হবে। স্কিল - ইমেইল কালেক্ট, ইমেইল করা, স্প্রেডশিট ইত্যাদি। এটার মজুরিও আগেরটার মতোই। এরকম হাজারো কাজ ছড়িয়ে আছে নেটে। নেট স্পিড, পেমেন্ট সহ নানাবিধ কারণে আমরা কাজগুলো করতে পারছি না।

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাইছে। অথচ সমস্যাগুলি সমাধান করলে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় বিরাট অবদান রাখতে পারতো। শেষ করি সদ্য সমাপ্ত ডিজিটাল ইনোভেশন ফেয়ার এর একটি সেমিনারের কাহিনী দিয়ে। সেমিনারের শিরোনাম ডেভেলপিং এ পজিটিভ ইমেজ অফ বাংলাদেশ। দেশকে কি ভাবে এবং কেন একটি ব্র্যান্ড হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে হবে মূল উপজীব্য সেটাই।

বক্তা অনেক কথাই বললেন কিন্তু ভাল ইমেজের জন্য যে ঘরের ভিতরের সূযোগ-সুবিধাগুলি নিশ্চিত করতে হয় সেটা নিয়ে তেমন কিছু বললেন না। নীতিনির্ধারকরা মাঝে মধ্যে অদ্ভূত সব কাজ করেন। দেশের ব্যান্ডওয়াইডথ এর ৭০% নাকি ব্যবহার হচ্ছে না। আর বাস্তবতা হচ্ছে উচ্চমূল্যের কারণে আমরা সাধারণ ব্যবহারকারীরা এটা পাচ্ছি না। ফলাফল - ব্যান্ডওয়াইডথ রফতানীর আজগুবি ধারণা।

আশার কথা হলো প্রচুর সীমাবদ্ধতা সত্বেও বাংলাদেশের তরুণরা কিন্তু বসে নেই। তারা তাদের মতো করেই কাজ করে চলেছে। আজ প্রথম আলো'র কম্পিউটার প্রতিদিন বিভাগে একটা প্রতিবেদন এসেছে এই নিয়ে। এদেশের ই এক তরুণ গত ২ বছরে ২২ হাজার ডলার উপার্জন করেছে আউটসোর্সিং এর কাজ করে। আরো একটা আশার কথা শোনাই।

বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন ট্রানজাকশনের অনুমতি দিয়েছে। পেমেন্ট গেটওয়ে স্থাপন সহ আনুষঙ্গিক কাজ ও শুরু হয়েছে। এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে হয়তো আমরা এর সুফল পাব। সেই সেমিনারে সজীব ওয়াজেদ জয় জানালেন এ বছরের শেষে হয়তো ব্যান্ডওয়াইডথ নিয়ে সমস্যাও সমাধান করা যাবে। আমার কথা হলো ব্যান্ডওয়াইডথ নিয়ে তো সরকার লসেই আছে।

তাহলে লসেই আমাদের ব্যান্ডওয়াইথ দেয়া হোক। তাতে গ্রস লস কিছুটা তো কমবে। আর সব কিছু থেকে সরাসরি লাভ করতে হবে সরকারকে তা কেন। প্যাসিভ ইনকাম বলেও তো একটা কথা আছে। সরকার হয়তো লসে ব্যান্ডওয়াইডথ বিক্রি করবে, কিন্তু তরুণরা হয়তো বিদেশ থেকে আউটসোর্সিং এর কাজ করে একটা বিশাল অংকের বৈদেশিক মূদ্রার যোগান দিতে পারে সরকারী কোষাগারে।

হয়তো সেদিন খূব বেশী দূরে না ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.