আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বরোগের মহাচিকিৎসক!



সর্বরোগের মহাচিকিৎসক! ঢাকা শহরের অলিগলিসহ আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে বাস টার্মিনাল বা লঞ্চ-ফেরি ঘাটে এক ধরনের চিকিৎসক দেখতে পাওয়া যায়। তারা হলেন সর্বরোগের মহাচিকিৎসক। এমনটিও দেখা যায় যে, যার মাথার চুল পড়ে টাক হয়ে গেছে সে চুল ওঠার মহৌষধ বিক্রি করছে, দাঁত পড়া লোকে বিক্রি করছে দাঁতের মহৌষধ, রোগাকিষ্ট কবিরাজটি বিক্রি করছে ওষুধ এবং নিশ্চয়তা দিচ্ছে চির যৌবনের ও চির সুস্থতার। এদের ফুটপাতের দোকানের সামনে দাঁড়ায়নি এরকম লোক পাওয়া দুষ্কর। এদের কাছে থাকে নানা গাছের ফুল-ফল, ছাল-বাকল, নানা মৃত প্রাণীর চামড়া, ঠোঁট-হাড়, গোড়, এমনকি সামুদ্রিক মৃত প্রাণীর কঙ্কালসহ মরুভূমির বাতাস খাওয়া প্রাণী সান্ডা, তাদেরই বর্ণনামতে।

এছাড়াও শত প্রকারের তাবিজ-কবজ। এইসব কবিরাজের কাছে থাকে বিভিন্ন রকম ফটোগ্রাফ, তা দিয়ে তারা পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। তাছাড়াও এই কবিরাজদের প্রধান হাতিয়ার হলো তাদের কথা বলার ভঙ্গি, নানা উপমা, সকল রোগ সম্পর্কে সবজান্তা ভাব। সাধারণ পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার এক দারুণ শক্তি আছে এই পথের চিকিৎসক কবিরাজদের। এই কবিরাজদের প্রধান রোগী হলো সমাজের নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র মানুষেরা।

তারা কবিরাজকে ঘিরে বসে থাকে আর কান পেতে শোনে কবিরাজের অমিয় বাণী। অনেক সময় তারা কথা বলার সময় আল্লাহ-রাসুলের প্রসঙ্গ এনে নানা গাছ-গাছালির ছাল-বাকলের উপকারিতার কথা এমনভাবে ব্যাখ্যা করে যে রোগীরা সহজেই তাদের প্রতি বিশ্বাস আনে। কিনে নেয় নানা তাবিজ-কবজ, মালিশ, গাছের ছাল ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এমন কোনো রোগই নেই, যার নিরাময়ব্যবস্থা তাদের কাছে নেই। দীর্ঘমেয়াদী বাত, কাশি, জ্বর, আমাশয়, কলেরা থেকে শুরু করে ক্যান্সার ও টিউমারসহ নানা রোগের নিরাময় ব্যবস্থা আছে তাদের কাছে।

টাকা বা ব্যবসার জন্য নয় বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তারা এ চিকিৎসা করছে। । এমন কথা তারা বলে বেড়ায়। আবার অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের হাতে গণধোলাইর শিকারও হয় ঐ সর্বরোগের মহাচিকিৎসকরা। এইসব প্রতারক চক্র প্রতারণার ব্যবসা করে যাচ্ছে দিনের পর দিন সমাজের সচেতন মানুষসহ প্রশাসনের চোখের সামনেই।

হাতিয়ে নিচ্ছে তারা হাজার হাজার টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষেরা। কোনো প্রতিকার নেই। এইসব কাজ করে গুটি কয়েক লোক হয়তো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর অসহায় লোকগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভালো চিকিৎসকদের ধারে কাছে যেতে পারে না।

তাই তারা সহজেই সুস্থতার আশায় প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এরা রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সরকারি অনুমতিপত্র বেসরকারি নানা সনদপত্র প্রদর্শন করে থাকে। এইসব সনদ এরা কোথা থেকে এবং কিভাবে সংগ্রহ করে, এছাড়া তাদের প্রস্তুতকৃত ওষুধের গুণগত মান ও ওষুধের প্রস্তুত ও বিপণনের অনুমতি তারা কোথায় পায় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার। পরিশেষে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ এই যে, নিম্নআয়ের অসহায় মানুষেরা যেন ঐ প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে আর ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।