এই দেশটা আমার, আপনার, আপনাদের সবার, আসুন দেশটাকা ভালবাসি।
'হার্ট অ্যাটাক' মানেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু। আর মৃত্যু না হলেও হাসপাতাল-ডাক্তার করে দৌড়ঝাঁপ, তারপর আবারও অ্যাটাকের আতঙ্ক নিয়ে মৃতপ্রায় বেঁচে থাকা। তবে গত ছয় মাসে ১৯০ বার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে আছেন চট্টগ্রামের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুন নবী। অধিকাংশ সময় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে রাতে ঘুমের মধ্যে।
তবে কোনোবারই তিনি টের পাননি। সব আক্রমণই সামলেছে এক টাকার মুদ্রার আকারের ছোট্ট একটি যন্ত্র। নাম ইমপ্লান্টেবল কারডিউভারটার ডেফিব্রিলেটর (এআইসিডি)। সংক্ষেপে যাকে বলা হচ্ছে 'কম্বো ডিভাইস'।
চার সন্তানের জনক ৬৫ বছর বয়সী হৃদরোগী আব্দুন নবী এখন দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানহাটে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, থাকেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। এর আগেও দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। একবার অ্যানজিওপ্লাস্টি, আরেকবার বাইপাস সার্জারি করতে হয়।
গত বছর ১৪ আগস্ট কলকাতার এ্যাপোলো গ্লেনঈগলস হাসপাতালে আব্দুন নবীর বুকে বাম পাশে চামড়ার নিচে বাংলাদেশি মুদ্রা এক টাকার সমান ছোট্ট একটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আধুনিক এই চিকিৎসা যন্ত্রটি স্থাপনে আনুমানিক ১৬ লাখ টাকা খরচ হয়।
দক্ষ হাতে সূক্ষ্মভাবে জীবন রক্ষাকারী এই দামি ডিভাইসটি মাত্র আধা ঘণ্টায় লাগিয়ে দেন এ্যাপোলো গ্লেনঈগলস হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রবিন চক্রবর্তী। ৫৪ বছর বয়সী ভারতীয় এই চিকিৎসক ১৯৯৮ সালে লন্ডনে প্রথম এ ধরনের আধুনিক ডিভাইসের সফল স্থাপন করেছিলেন। তখন কম্বো ডিভাইসের আয়তন ছিল আরো বড়। বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন তা ছোট হয়ে এসেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমন্ত্রণে বিনামূল্যে রোগী দেখতে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আসেন ডা. রবিন চক্রবর্তী।
তিনি গতকাল শুক্রবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। নবীর শরীরে এই ডিভাইস স্থাপনের পর এটি সফলভাবে কাজ করছে দেখে ডাক্তার হিসেবে আমি খুবই আনন্দিত। ' তিনি আরো বলেন, 'কার্ডিয়াক হার্ট অ্যাটাক মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। অর্থাৎ গত ছয় মাসে ১৯০ বার মৃত্যু হতো তাঁর। হৃদকম্পনের মাত্রা দ্রুত বাড়তে বাড়তে যখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন এক পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে থামিয়ে দেয় এই ডিভাইস।
' বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট হলে যেভাবে 'ফিউজ' কেটে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে, কম্বো ডিভাইসের কাজ অনেকটা সে রকমের।
কম্বো ডিভাইস প্রতিস্থাপনের ছয় মাস পর গত সপ্তাহে নিয়মিত চেকআপ করাতে কলকাতায় যান ব্যবসায়ী নবী। গত বুধবার যখন ডা. রবিন চক্রবর্তী তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন তখন কম্পিউটারে ধরা পড়ে ১৯০ বার হার্ট অ্যাটাকের এই তথ্য। সর্বশেষ তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয় কলকাতায় যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি। নবী এখনো কলকাতায় অবস্থান করছেন।
এমটিএস গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান আব্দুন নবীর সঙ্গে গতকাল দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'চিকিৎসকরা বলেছেন আমার ১৯০ বার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। কিন্তু আমি টের পাইনি। কম্বো ডিভাইস লাগানোর পর এখন আমি সুস্থ আছি। আগামীকাল (শনিবার) দেশে ফিরে আসব। '
ডা. রবিন চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে জানান, কম্বো ডিভাইস শরীরে স্থাপনের পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে রোগী, বিমানেও চড়তে পারবে। একটানা সাত বছর কাজ করবে ব্যাটারিচালিত ডিভাইসটি। যার শরীরে স্থাপন করা হবে সে রোগী কোনো কারণে অসুবিধা অনুভব করলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভারতে অবস্থিত সার্ভিস সেন্টারে তাৎক্ষণিভাবে যোগাযোগ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক হয়ে যাবে। এর জন্য রোগীকে বুকের বাম পাশে যেখানে ডিভাইসটি স্থাপন করা হয়েছে তার ওপর চেপে ধরতে হবে ওই মোবাইল ফোন সেটটি, আরেকটি ফোনে পুনরায় সার্ভিস সেন্টারে ফোন করে একে একে অসুবিধার কথা জানাতে হবে। চিকিৎসকরা যন্ত্রের ত্রুটি দূরনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সারিয়ে দেবেন।
(সংবাদটি দৈনিক কালের কন্ঠ থেকে নেওয়া)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।