আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউটোরিয়াল : কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? - ০৫

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
পর্ব - ০৪ পর্ব - ০৬ মন-ভোলানো দর্শক থেকে মগজ খাটানোর দর্শক : আরও জ্ঞানের নেশা আরও কিছু ব্যবহারিক শট : এস্টাবলিশিং শট : কোন ঘটনা কোথায় ঘটছে সেটা বোঝানোর জন্য যে শট বা শটগুলো নেয়া হয় সেটা এস্টাবলিশিং শট। এই শট বা শটগুলো সাধারণত আউটডোর হয়। এক্সট্রিম লং শট বা লংশট ব্যবহার করে এক বা একাধিক শট গ্রহণ করা হয়। সাধারণত কোন গল্পের শুরুতে বা দৃশ্যের শুরুতে এস্টাবলিশিং শট নেয়া হয়। রি-এস্টাবলিশিং শট : কোথায় ঘটনাটি ঘটছে সেটা দৃশ্য শেষে আবারও দর্শককে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য রি-এস্টাবলিশিং শট ব্যবহৃত হয়।

মূলত এস্টাবলিশিং শট ও রি-এস্টাবলিশিং শট একই রকম ও একই উদ্দেশ্যে গৃহীত। সাধারণত বড় কোন ঘটনার ক্ষেত্রে দর্শক ঘটনাটি কোথায় ঘটছে সেটা ভুলে যেতে পারে বা ভুলে যায়। সে ক্ষেত্রে দৃশ্যের শেষে রি-এস্টাবলিশিং শট ব্যবহৃত হয়। ছোট দৃশ্যের ক্ষেত্রে রি-এস্টাবলিশিং শট ব্যবহার করা দরকার নাই। মাস্টার শট : ইনডোর দৃশ্যের শুরুতে বা শেষে পুরো সেটের একটি শট নেয়া হয়, এটি মাস্টার শট।

এই শটে ওই দৃশ্যের সকল চরিত্রকে দেখা যায়। মাস্টার শট কেবল একটি শট হয়। ধারাবাহিকতায় কোন সমস্যা এড়ানোর জন্য মাস্টার শট নেয়া হয়। মাস্টার শট কখনও এক্সট্রিম লং শট হয় না, লং শট বা মিড শট হয়। ওভার দ্যা শোল্ডার শট বা ও.এস শট : দু’জন ব্যক্তির কথোপকথনের সময় একজনের ঘাড়ের উপর দিয়ে অপর জনের মুখের উপর যে শট নেয়া হয় সেটাই ওভার দ্যা শোল্ডার শট বা ও.এস শট।

সাধারণ দু’জন মানুষ মুখোমুখি কথা বলতে এই শট ব্যবহৃত হয়। কথোপকথনের দৃশ্য ধারণের জন্য বহুল ব্যবহৃত শট এটি। রি-একশন শট : সাধারণত কোন সংলাপ দৃশ্যে কোন সংলাপের প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য যে শট নেয়া হয়, তাকে রি-একশট শট বলে। যে ব্যক্তিটি কথা শুনছে এবং প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তার উপরে ক্যামেরা ধরে এই শট নেয়া হয়। পয়েন্ট অফ ভিউ শট বা পিওভি শট : কোন চরিত্র কী দেখছে সেটা বোঝানোর জন্য যে শট নেয়া হয় সেটাই পয়েন্ট অফ ভিউ শট বা পিওভি শট।

সাধারণ কোন চরিত্র কোন দিনে তাকানোর পর এই শট ব্যবহার করা হয়। এতে করে বোঝা যায় ওই চরিত্রটি কী কী দেখছে বা কাকে দেখছে। ইনসার্ট : দুটি ভিন্নধর্মী শটের মধ্যে একটি বিশেষ শট ব্যবহার করলে তাকে ইনসার্ট বলে। যেমন : কোন ব্যক্তি ঘুমাচ্ছে এবং তার পাশে কোন ব্যক্তি বসে আছে। এই দুটি শটের মাঝখানে দেয়ালে ঝোলানো একটি ঘড়ির শট।

জুম শট : জুম শব্দের অর্থ পরিবর্তন করা। ক্যামেরাকে না সরিয়ে লেন্সের মাধ্যমে বস্তুর দূরত্বকে বাড়ানো বা কমানোর মাধ্যমে যেই শট গৃহীত হয়, তাকে জুম শট বলে। যে লেন্সের মাধ্যমে এই শট নেয়া হয়, তাকে জুম লেন্স বলে। কোন বস্তুকে কাছে টেনে আনা বা বড় করে ফেলাকে বলা হয় জুম ইন। কোন বস্তুকে দূরে সরিয়ে ফেলা বা ছোট করে ফেলাকে বলে জুম আউট।

ক্রাব শট : কাকড়ার মতো ঘুরে ঘুরে শট নেয়াকে বলে ক্রাব শট। সাধারণত নাচের দৃশ্যে এই শট ব্যবহৃত হয়। দৃশ্যান্তর বা ট্রান্সিশন : একটা শট থেকে অন্য শটে যাওয়ার নানা প্রক্রিয়া আছে। এক শট শেষ হওয়ার পর অন্য শটে যাওয়ার এই প্রক্রিয়াকে বলে দৃশ্যান্তর বা ট্রান্সিশন। চলচ্চিত্র সম্পাদনার জন্য সফটওয়্যার তৈরি হওয়ার ফলে শত শত ট্রান্সিশন প্রক্রিয়া বের হয়েছে।

এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, এডিয়াস, এভিড এক্সপ্রেস বা ফাইনাল কাট প্রো ইত্যাদি এডিটিং সফটওয়্যারের সঙ্গে ট্রান্সিশনের নানা এফেক্ট দেয়া থাকে। এছাড়া এফেক্ট প্রয়োগ করার জন্য আলাদা সফটওয়্যারও আছে। যেমন : হলিউড এফএক্স। তাছাড়া ট্রান্সিশন এফেক্ট যোগ করার জন্য অহরহ তৈরি হচ্ছে নিত্য-নতুন প্লাগইন। ট্রান্সিশনের নানা প্রক্রিয়া আছে।

তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ, বহুল ব্যবহৃত ও সাধারণ প্রক্রিয়া হল কাট। কয়েকটা ট্রান্সিশন প্রক্রিয়া আলোচনা করা যাক : কাট : ট্রান্সিশনের প্রাচীন ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। একটা শট শেষে আরেকটি শট লাগানো হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একটা কাট পাওয়া যায়। কাট সাধারণত ২ প্রকার (ক) ম্যাচ কাট, (খ) জাম্প কাট। সাধারণত প্রতিটি কাটের পর পরবর্তী শটে ক্যামেরা ডিসটেন্স বদলে যায়।

এবার ম্যাচ কাট ও জাম্প কাট সম্পর্কে জানি। ম্যাচ কাট : প্রথম শটের একশনের ধারাবাহিকতা মিলিয়ে দ্বিতীয় শট জোড়া দিলে সেটাকে বলে ম্যাচ কাট। প্রথম শটের শেষ একশন ও পরবর্তী শটের শুরুর একশন যদি সম্পূর্ণ মিলে যায়, যদি দুটি শটে গতি ও সময় একই হয়, তবে শট দুটি জোড়া দিয়ে একশনটি সম্পূর্ণ করতে কোন অসুবিধা হয় না। জাম্প কাট : পাশাপাশি দুটি শটের একশন না মিললে তাকে জাম্প কাট বলা হয়। ডিজলভ : একটা শট মিলিয়ে গিয়ে ধীরে আরেকটি শটে গেলে সেটাকে বলে ডিজলভ।

একটি শট মিলিয়ে যেতে যেতে মসৃণভাবে পরের শট এসে পড়ে । এতে করে কয়েক মুহূর্তের জন্য কয়েকটি শটের ওভারল্যাপিং হয়। কাটের ক্ষেত্রে যেমন তীèতা পাওয়া যায়, ডিজলভের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় মসৃণতা। সময় ও স্থানের বিশেষ পরিবর্তন বোঝাতে ডিজলভ ব্যবহৃত হয়। সাধারণত স্বল্প সময়ের পার্থক্য বোঝাতে ডিজলভ ব্যবহৃত হয়।

ওয়াইপ : কোন একটি শট এক পাশ থেকে মুছতে মুছতে আরেকটি শট এলে তাকে ওয়াইপ বলে। পর্দার উপর আড়াআড়াভাবে একটি রেখা চলে যাওয়ার মাধ্যমে আগের শট মুছে গিয়ে নতুন শট ফুটে ওঠে। আগে ওয়েস্টার্ন মুভিতে এই ট্রান্সিশন বহুল ব্যবহার হতো। বর্তমানে এই ট্রান্সিশনের ব্যবহার কম। তবে কমেডি ছবিতে এর ব্যবহার এখনও চোখে পড়ে।

ফেড আউট ও ফেড ইন : একটা শট শেষ হওয়ার পর পর্দা কালো হয়ে যাওয়াকে বলে ফেড আউট এবং কালো পর্দা থেকে ধীরে ধীরে শটে ফিরে আসাকে বলে ফেড ইন। ফলে একটি শট শেষ হয়ে যাওয়ার পর পর্দা কালো করে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে তারপর অন্য শট শুরু হলে তাকে বলে ফেড আউট ও ফেড ইন। একটি দৃশ্য শেষ হয়ে অন্য জায়গায় অন্য কোন দৃশ্য শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে ফেড ইন ও ফেড আউট ব্যবহৃত হয়। এতে স্থান ও সময় পরিবর্তন করে গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করা যায়। স্পেশাল এফেক্ট : একটি ফিল্ম বা ভিডিওচিত্র ক্যামেরার সাহায্য ধারণ করার পর বিভিন্ন দৃষ্টিবিভ্রম, কৌশল বা ট্রানজিশনাল কৌশলকে এক কথায় স্পেশাল এফেক্ট বলে।

এর মধ্যে শব্দগ্রহণের যে কৌশল প্রয়োগ করা হয়, তাকে বলে সাউন্ড এফেক্ট। ক্যামেরার স্বাভাবিক চিত্রগ্রহণের বাইরে যে কোন কৌশল স্পেশাল এফেক্টের মধ্যে পড়ে। যেমন : সুপার ইম্পোজ, ক্রোমা, মাস্ক শট, মাল্টিপল স্ক্রিন ইত্যাদি। যে সব দৃশ্য অভিনয়ের আয়ত্বের বাইরে, সে সব দৃশ্য চলচ্চিত্রে দেখানোর জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করা হয়। এই সব কৌশলকেও আমরা স্পেশাল এফেক্ট বলি।

স্পেশাল এফেক্ট মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। যেমন : আলোকচিত্রের কৌশল ও যান্ত্রিক কৌশল। ক্যামেরা ব্যবহারের কৌশল এবং সম্পাদনাকালে আলোকচিত্র বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে আলোকচিত্রের কৌশল প্রয়োগ করা হয়। আলোকচিত্রের কৌশলের বাইরে যা কিছু কৌশল আছে, সবই যান্ত্রিক কৌশল। যেমন : ইমেজ রিপ্লেসমেন্ট, খেলনা বা মিনিয়েচার, ব্যাক বা ফ্রন্ট প্রজেকশন ইত্যাদি।

স্পেশাল এফেক্টের সাধারণ কিছু বিষয় আলোচনা করা যাক : সুপার ইম্পোজ : একটা শটের উপর আরেকটা শট মিলিয়ে দুটি চিত্র এক করে ফেলাকে বলা হয় সুপার ইম্পোজ। একটা লোক একটা দৈত্যের হাতের উপর দাঁড়িয়ে আছে - এই রকম দৃশ্য দেখাতে সুপার ইম্পোজ কৌশল ব্যবহৃত হয়। সফটওয়্যার দিয়ে খুবই সহজেই সুপার ইম্পোজ করা যায়। ক্রোমা : একটি নীল পর্দার সামনে চরিত্রগুলোকে অভিনয় করিয়ে পরে পেছনের পর্দাটি সরিয়ে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড জুড়ে দেয়াকে বলে ক্রোমা। ভিডিও ক্যামেরায় ধারণকৃত চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সম্পাদনার সফটওয়্যার দিয়ে খুব সহজেই ক্রোমা করা যায়।

যেমন : এক দু’জন মানুষ নীল পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলল। পরে এডিটিং করে পেছনের নীল পর্দা ফেলে দেয়া হল। নীল পর্দার জায়গায় জুড়ে দেয়া হল একটি রাস্তা। মাস্ক শট : বাইনোকুলার বা ফুটো দিয়ে কিছু দেখা হচ্ছে এই বিভ্রম তৈরির জন্য এই কৌশল প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত ক্যামেরা লেন্সের সামনে প্রয়োজনীয় আকারের ঢাকনা পরিয়ে বা এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ম্যাট লাগিয়ে এই এফেক্ট দেয়া হয়।

মাল্টিপল স্ক্রিন : দু’জন ব্যক্তি ফোনে কথা বলার সময় অনেক সময় দু’জনকে দেখাতে মাল্টিপল স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে দুটি আলাদা শটকে এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে মাল্টিপল স্ক্রিন বানানো হয়। তার মানে হল, পর্দায় একই সঙ্গে দুটি স্থানের দুটি শটকে পাশাপাশি জুড়ে দেয়াকে বলা হয় মাল্টিপল স্ক্রিন। গ্লাস শট : কোন সেটের একটি অংশ কাচের উপর এঁকে সেটাকে ক্যামেরা সামনে স্থাপন করে এমনভাবে গৃহীত শট যাতে করে পুরো সেটের একটি বিভ্রম তৈরি হয়। যেমন : কোন এক তলা বাড়ির সামনে অভিনয়ের সময় উপরের তলাগুলি কাচের মধ্যে এঁকে তারপর ক্যামেরার সামনে এমনভাবে রাখা হয়, যাতে করে বাড়িটি বহুতল মনে হয়।

খেলনা বা ক্ষুদ্র মডেল : বড় কোন জিনিস ব্যবহার যখন ব্যয়সাপে ও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার মতো অনুরূপ ক্ষুদ্র মডেল তৈরি করে নেয়া হয়। এই ক্ষুদ্র মডেল ব্যবহার করে বিমান ধ্বংস, জাহাজ ডুবি, শহর ধ্বংস, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদি দেখানো হয়। যেমন : টাইটানিক ছবিতে জাহাজ দুর্ঘটনার ছবি তোলার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র মডেল ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যাক প্রজেকশন : স্টুডিওতে কোন বিশেষ ধরনের পর্দার পেছন থেকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দৃশ্য চালু করা হয় এবং তার সামনে অভিনয় করা হয়। সাধারণত কোন অভিনেতাকে লোকেশনে না নিয়ে গিয়ে সেই স্থান দেখাতে এই কৌশল ব্যবহৃত হয়।

যেমন : স্টুডিওতে স্থির গাড়িতে চড়া অভিনেতার পেছনে চলমান সড়কের ছবি প্রদর্শিত করে একটি চলমান গাড়ির বিভ্রম তৈরি করা সম্ভব। এই কৌশল এক সময়ে প্রচুর ব্যবহৃত হত। ফ্রিজ : চলমান দৃশ্যকে স্থির চিত্রে পরিণত করার পদ্ধতিতে ফ্রিজ বলে। ফ্রিজকে স্টপ মোশন নামেও অভিহিত করা হয়। ফিল্মের ক্ষেত্রে একই ফ্রেমকে বার বার এক্সপোজ করে এটা করা হয়।

ভিডিও চিত্রে সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা যায়। (অফ টপিক : আমার লেখা "কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? " নামের একটি অপ্রকাশিত বই থেকে লেখাটি দেয়া। এই পোস্টটি অনেক বড় হয়ে গেল বলে দুঃখিত। ) পর্ব - ০৪ পর্ব - ০৬
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.