আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : জাদুকর



ভাইজান। আমি পাশে তাকালাম। একটা ছোট লাইট জ্বলছে সামনে সেই আলোতেই পাশে বসা লোকটিকে দেখলাম। ভাইজান, শুনছেন? বলেন একটু চাপবেন? ক্যান? দুইজনের সিটেতো আরামেই আছি। আপনিও তো মনে হয় কষ্টে নেই।

সমস্যা কী? না তেমন সমস্যা না। আমার সাথে তো আরেকজন আছে। সে বসবে। অনেকক্ষণ হাওয়ায় ভাসতেছে। শরীরে কত্ত কুলোয় বলেন।

বয়সতো কম হলো না। দুইশ তেষট্টিতে পড়ল। কী বলছেন এসব? কার বয়স? কে হাওয়ায় ভাসতেছে? আমার সঙ্গে জ্বীন। আমি জীবনে অনেক পাগল দেখেছি। কিন্তু এই নাইট কোচেও, এই এয়ারকন্ডিশনড্ লাক্সারীয়াস বাসেও যে পাগল থাকতে পারে ভেবে বিরক্তই হলাম।

ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। ২. আমার দীর্ঘ ঘুমের সুযোগ নিয়ে লোকটা আমাকে বেশ চাপিয়ে ফেলেছে। বিরক্তি নিয়ে তাকালাম, এই যে ভাইজান? জ্বি, জনাব? আমার নাম আরব আলী। আরব সাহেব, এটা কোন কথা হলো? অযথা ভূয়া ভাব নিয়ে একজনকে কষ্ট দিয়ে আপনি বেশী জায়গা দখল করে আছেন? কথাটা বলে আমি তার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। কিন্তু কোন লাভ হয়েছে মনে হলোনা।

তার চোখে মুখে ভয়ের সামান্য ছাপ পাওয়া গেলো না। উল্টো নূরানী হাসি দিকে তাকিয়ে বলল, একটু কষ্ট করেন। আমি সামনেই নেমে যাবো। আমি একটু নরম হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, সত্যিই কি আপনার পাশে জ্বীন টিন আছে? বিশ্বাস হয় না, জনাব? না।

কঠিন গলায় উত্তর দিলাম। আরব আলী, মিষ্টার জ্বীন সম্রাট অন্যপাশে ফিরে বিড়বিড় করে যেন কি সব বললেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললেন, স্যারের গায়ে হাত দিয়ে সালাম করো। আমি অবাক দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কী হচ্ছে? কে সালাম করবে? জ্বীনটা নাকি? আমি আরব আলীর দিকে তাকিয়ে বললাম, কী করছেন আরব সাহেব? কী বলছেন এসব? আমার ভেতর শুকিয়ে আসছে। আরব আলী বলল, ভয় পাবার দরকার নেই।

জ্বীন আপনাকে ছোঁবেনা। সে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আপনি নাকি মানুষটা ভালো না। আপনার পকেটে পিস্তল আছে। আপনি আজ একজনকে খুন করেছেন।

পুলিশ আপনাকে খুঁজছে। কথাগুলো শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। চারদিকে তাকালাম, কেউ কি এসব কথা শুনেছে? হালকা আলোয় সব স্পষ্ট বোঝা গেলো না। আমি আরব আলীর দিকে তাকালাম, সে কি পুলিশের লোক? আমি কড়া দৃষ্টিতে আরব আলীকে আগা-গোড়া দেখলাম। যা হবার হবে ভেবে আরব আলীর শার্টের কলার চেপে ধরলাম, আরেকবার এই শব্দ উচ্চারণ করলে সারা জীবনের জন্য শব্দ করা বন্ধ করে দেবো।

শালা। একদম চোপ। আরব আলী নিস্প্রভ। বোঝা গেল, ভয় পায়নি একটুও। রাগে আমার হাতে পা কাঁপছে।

চুপ করে রইলাম। অনেকণ কেটে গেলো। আমার চোখ ভারী হয়ে আসছে। আমি চেষ্টা চালাচ্ছি জেগে থাকার। না ঘুমানোর।

৩. চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। বাসের ভেতরের সব লাইট জ্বলে উঠেছে। যাত্রীরা কথা বলছে। কেউ কেউ সিটের উপর দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। গাড়ীটা থেমে আছে।

আমি এক নজরে পুরো বাসে চোখ বুলালাম। কেন থেমে আছে? কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম। আমার পাশের সিটে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। আজব ঘটনা। আমি একবারও ল্য করিনি আমার পাশের সিটে এক অসম্ভব সুন্দর মেয়ে বসে আছে।

আমি তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা একটু অস্বস্তীবোধ করছে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। অন্যপাশে তাকালাম। ৪. আরব আলী গভীর ঘুমে আছন্ন। আমার শরীর ঘেষে ঘুমিয়ে আছে।

নাক ডাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তার পাশে বেশ খানিকটা জায়গাও আছে। আমি হাত ঘুরিয়ে দেখলাম জ্বীনটিন ধরা যায় কিনা? লাভ হলো না। হঠাৎ গাড়ীর দরজা খুলতেই সে দিকে তাকালাম। একি? চেক পোষ্ট? এসি বাসের ভেতরেও আমার শরীর মুহুর্তেই ঘেমে একাকার।

কী করবো এখন? পকেটে হাত ঢুকাবো? ঢুকিয়েও কি কোন লাভ হবে? জিনিসটা ফেলার জায়গা নেই। শরীর কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আসছে। পিস্তলটা সরানোর জায়গা নেই। একের পর এক চেক শেষ করে পুলিশ দ্রুত এগিয়ে আসছে। আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম।

ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই মেয়েটা আর পাঁচ মিনিট পরই হয়তো আমাকে ঘৃণা করবে। পুলিশ আমার এসে সামনে দাঁড়ালো। আমি হাত তুলে দাঁড়ালাম। চিৎকার করে আল্লাহকে ডাকতে ইচ্ছে করছে।

পুলিশ আমার শার্টের উপর হাত বুলিয়ে নিচে নামাচ্ছে। ধীরে ধীরে হাত আমার কোমরের অংশ চেক করে প্যান্টের পকেটের উপর আসলো। আমি পুলিশের চেহারার দিকে তাকিয়ে অপো করছি। কখন তার মুখভঙ্গি চেঞ্জ হয়! অবাক ঘটনা ঘটল। সে ভাবলেশহীনভাবে আমায় বসতে বলে আরবকে ডাকল।

তাকে চেক করে পেছনে চলে গেলো। আমি স্তদ্ধ হয়ে বসে রইলাম। পুলিশ চেক শেষ করে নেমে গেলো। আমি পকেটে হাত ঢোকালাম। সেকি! আমার পিস্তল কোথায়? দুই পকেটেই খোঁজলাম।

নেই। আমি কি কোথাও ফেলে এসেছি? অস্থির লাগছে। এতো দামী। এতো ছোট। এটা হারালে বিশাল ক্ষতি।

আমি নড়চড়হীন বসে রইলাম। বাস চলতে শুরু করল। বাসের লাইটগুলো বন্ধ হয়ে গেলো এক এক করে। ভাইজান। হালকা আলোয় আমি আরব আলীর দিকে তাকালাম, নেন আপনার পিস্তল।

আমি আঁতকে উঠলাম। আরব আলী এই প্রায় অন্ধকার বাসে আমার হাত দুটোতে পিস্তলটা গুঁজে দিয়ে বলল, ভাইজান এসব ছেড়ে দেন। আমি অন্ধকারেই বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলতে চাইলাম, আপনি...? কিছু বলার আগেই আরব আলী বলল, আমার জ্বীন পিস্তলটা সরিয়েছে। সে কেন জানি আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছে। সে আপনার পা ছুঁতে চায়নি, এজন্য আপনি নাকি কষ্ট পেয়েছেন।

সে কারনে অনুতপ্ত। সেও বলেছে আপনাকে এগুলো ছেড়ে দিতে। ছেড়ে দেন এসব। আর একটু চাপেন আমি সামনে নেমে যাবো। আমি সিট থেকে নেমে আরব আলীকে সাইড দিলাম।

সে অন্ধকারেই সিট থেকে বের হয়ে ড্রাইভারকে লাইট জ্বালাতে বলল। বাসের লাইট জ্বলতেই আরব আলি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কিছু মনে করবেন না ভাইজান, জ্বীনটা এবার আপনার পা ছুয়ে সালাম করতে চায়। আমি চুপ করে রইলাম। আরব আলী এবার হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালো, ভাইজান যাই। আমি কিছু বলতে পারলাম না।

সে হাটতে হাটতে গাড়ীর দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। শেষবারের মতো আমার দিকে তাকালো। আমিও আরব আলীর দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ চমকে উঠলাম। কোমল এক স্পর্শ আমার পা দুটো ছুঁয়ে গেলো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.