আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থাইরয়েড সমাচার

“আমি পানি খেলেও মনে হয় শরীরে লেগে যায়!”, “গত এক বছর ধরে আমার ওজন কেবল বেড়েই চলেছে!”, “এত চেষ্টা করছি তবুও ওজন কমছে না কিছুতেই!”-- বাক্যগুলো কি পরিচিত? প্রায়শই কি এমন আলোচনা কানে আসে, নাকি আপনি নিজেই এ ধরনের সমস্যায় ভুক্তভোগী?
হাইপোথাইরয়েডিজম একবার হয়ে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে উপায় নেই। ওষুধ, পথ্য এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি তখন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক মেনে চলতে হয়। তবে কিছু সতর্কতা মেনে চললে থাইরয়েডের কার্যক্ষমতাকে সচল আর দক্ষ রাখা যায় সব সময়।
১. থাইরয়েডের বন্ধু কারা, জানেন কি? আয়োডিন আর সেলেনিয়াম। তবে জিংক, আয়রন আর কপারও থাইরয়েডকে সচলভাবে তার কাজ সম্পন্ন করে যেতে সহযোগিতা করে থাকে।

খাবারের মেন্যুতে সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, পালংশাক, ডিম রাখতে পারলে আয়োডিনের অভাব শরীরে হবে না। এ ছাড়া ওয়েস্টার সস দিয়ে তৈরি খাবার, রান্নায় রসুন আর তিলের ব্যবহারও আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে থাকে। সেলেনিয়াম খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হলেও শরীরে এর জোগান নিয়মিতভাবে চাই-ই চাই। টুনাফিশ, মুরগি ও গরুর মাংস, কলিজা, সয়াবিন এসব সেলেনিয়ামের ভালো উৎস।
২. কাচের বয়ামে চিনাবাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম, সামান্য কাজু এক সঙ্গে মিশিয়ে রাখুন।

নিয়ম করে সেখান থেকে প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খান। যদি হাতের কাছে পান তবে কুমড়ার দানা বা সূর্যমুখী ফুলের দানাও খেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ডাল বিশেষ করে মটর ও ছোলার ডাল খাবারের তালিকায় থাকলে আয়রন, কপার আর জিংকের চাহিদা পূরণ হয়ে যায় সহজেই। ডাল ও বাদামজাতীয় খাবার থাইরয়েডের কার্যক্ষমতাকে দারুণভাবে বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান।

একেক দিন একেক সময় খাবার খেলে শরীরের মেটাবলিজম ঠিকভাবে কাজ করে না। তাই সকালেই নাশতা, স্ন্যাকস, দুপুরের ও রাতের খাবার একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে খান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা সহজ হবে। মনে রাখবেন, হুটহুাট করে কোনো এক বেলার খাবার বাদ দেবেন না। অনেকক্ষণ শরীর খাবার থেকে বঞ্চিত থাকলে থাইরয়েডের ওপর চাপ পড়ে এবং এর কার্যক্ষমতা বাধার সম্মুখীন হয়।


৪. প্রতিবেলার খাবারের তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন রাখা দরকার। প্রাণিজ প্রোটিন কিংবা উদ্ভিজ প্রোটিনের যেকোনো উৎস থেকেই আমিষ নেওয়া যেতে পারে। সকালের নাশতায় ডিম অথবা দুধ, দুপুরে ও রাতের খাবারে ডাল, বীজ, মাছ বা মাংস রাখা জরুরি।
৫.  খাবারের তালিকায় প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবারও থাকতে হবে। যেন কয়েক ধরনের ফাইবারের সমন্বয় থাকে, সেটার দিকেও লক্ষ রাখা জরুরি।

শস্যজাতীয় খাবার থেকে যেমন ফাইবার নিতে হবে, ঠিক তেমনভাবেই সবজি ও ফলের ফাইবারও থাকতে হবে।
৬. খাবারের তালিকা থেকে যতটা সম্ভব গ্লুটেন (আটা বা ময়দাজাতীয় খাবার) বাদ দিন। গ্লুটেন বেশি আছে এমন খাবারের মধ্যে কেক, পাউরুটি, মাফিন, পেস্ট্রি, কাপকেক, বিস্কুটের গুঁড়া দিয়ে তৈরি খাবার, আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হটডগ, সসেজ, পিৎজা এগুলো পড়ে। এই ধরনের খাবার যত কম খাওয়া যায়, শরীরের জন্য ততই মঙ্গলজনক।
৭. এ ছাড়া কিছু সবজি আছে যেগুলো থাইরয়েডের কাজকে ধীর করে দেয়।

যেমন বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি। এই সবজিগুলোতে ‘গয়ট্রজেনস’ নামে এমন একটি উপাদান আছে যা থাইরয়েডের সমস্যাতে যারা ভুগছেন, তাদের জন্য একেবারেই বারণ। তবে একান্তই যদি এই সবজিগুলো খেতে হয়, তবে ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। আধা সেদ্ধ বা অল্প সেদ্ধ ফুলকপি, ব্রোকলি, বাঁধাকপি থাইরয়েডের রোগীর জন্য নয়।
সব কথার শেষ কথা, থাইরয়েড হরমোনকে বাধাহীনভাবে কাজ করতে দিতে চাইলে পুষ্টির নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায়, আমরা কিছুদিন খুব শক্তভাবে ‘ডায়েট’ করি, তারপর আবার হুট করে রিল্যাক্স হয়ে পড়ি। শুরু করে দিই ইচ্ছেমতো খাওয়াদাওয়া।
তারপর হঠাৎ ওজন মেশিনে চোখ পড়লেই আঁতকে উঠে শুরু করে দিই কঠোর ‘ডায়েট’। আমরা কখনোই খেয়াল করি না এই ‘ফিস্টিং’ আর ‘ফাস্টিং’-এর চক্র আমাদের শরীরের ওপর কি সাংঘাতিক চাপ ফেলে। ফলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজম পদ্ধতি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

যা হরমোনের নিয়মিত কাজকে বাধাগ্রস্থ করে।
আমাদের শরীরকে তার কাজ সুন্দরভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে জীবনযাত্রা ও খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে নিয়মিত হতে হবে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।