এই লেখাটি পরিচিত ভুল বই লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ মালেক এর লেখা বই থেকে সংগৃহিত।
হাদীস সম্পর্কে:
মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী:
যে বিষয়ে তোমার প্রকৃত জ্ঞান নেই , সেই বিষয়ে তুমি মন্তব্য করিও না। - সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩৬
আর ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। ... ... ...। সাবধান যালেমদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।
- সুরা হুদ, আয়াত ১৮।
জাল রেওয়ায়েত বর্ণনা করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর সতর্কবাণীঃ
প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুকে রাসুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বলে দাবী করা ইসলামে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ বলে সাব্যস্ত। এ ব্যাপারেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে জাহান্নামের হুঁশিয়ারী পর্যন্ত এসেছে।
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ইরশাদ করেন,“কেউ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে(সত্যমিথ্যা যাচাই ছাড়া) সবই বর্ণনা কওে”। Ñ সহীহ মুসলিম ১/৮, হাদীস ৫; সুনানে আবু দাউদ ২/৬৮১,হাদীস ৪৯৮২।
নবী পাক(দঃ) বলেন,“যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে এমন কথা বলবে যা আমি বলিনি , সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়”। -সহীহ বুখারী ১/২১,হাদীস ১০৯
নবী পাক (দঃ) “আমার উপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করার মতো নয়। যে আমার উপর মিথ্যারোপ, সে যেন জাহন্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। - সহীহ বুখারী ১/১৭২,হাদীস ১২৯১;সহীহ মুসলিম ১/৭,হাদীস ৪।
অন্য হাদীসে আছে, রাসুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার নামে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ভয় কর।
তোমরা যা নিশ্চিত জান (যে তা আমার হাদীস) শুধু তাই বর্ণনা কর। যে ব্যাক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে , সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয় এবং যে ব্যাক্তি নিজের মর্জি মত মনগড়া তাফসীর করবে, সেও যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। - জামে তিরমিযী ২/১২৩,হাদীস ২৯৫১( তাফসীর অধ্যায়ের শুরুভাগে)
সুতরাং প্রমাণিত হল হাদীস বলার পূর্বে এ কথা জেনে নেওয়া জরুরী যে , এটি বাস্তবেও হাদীসে নববী কি না। এ ব্যাপারে অসতর্কতা নবীর উপর মিথ্যারোপ করার শামিল, যার পরিণাম জাহান্নাম। অতএব হাদীস বর্ণনায় অবলম্বন করা ফরয।
একটি ভুল ঘটনাঃ
হযরত জাবির (রাঃ) একবার নবী করীম(সাঃ) দাওয়াত করেন। মেহমান দারির জন্য একটি বকরী জবাই করেন। বকরী জবাইয়ের সময় হযরত জাবির (রাঃ) এর দুই শিশুছেলে দাড়িয়ে দেখছিল । হযরত জাবির (রাঃ) বকরী নিয়ে চলে গেলে দুভাই মিলে বকরী জবাই খেলা শুরু করল এবং এক ভাই আরেক ভাইকে শুইয়ে বকরীর মত জবাই করে দিল। এরপর সেও ভয়ে মারা গেল।
নবী করীম (সাঃ) কষ্ট পাবেন ভেবে হযরত জাবির (রাঃ) ধৈর্য্যরে সাথে ছেলে দুটির লাশ ঘরের কুঠুরিতে নিয়ে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখলেন। নবী করীম (সাঃ) খেতে বসে জাবির (রাঃ) কে বললেন, তোমার ছেলে দুটিকে ডাক। তিনি বললেন ওরা ঘুমাচ্ছে। তখন নবী পাক (সাঃ) বুঝতে পেরে ওঠে গিয়ে কম্বল উচু করে ডাকলেন , হে জাবিরের দুই ছেলে ওঠে এস। তখন ভোরের পাখির মত ছেলে দুটি ওঠে এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কোলায় ঝাঁপিয়ে পড়ল।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বাচ্চা দুটিকে নিয়ে খেতে বসলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হযরত জাবির (রাঃ) অভিভূত হয়ে গেলেন । তার চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
উল্লেখিত ঘটনাটি ভুল। লোকমুখে বহুল প্রচলিত হলেও এর কো দালীলিক ভিত্তি নেই।
[মাসিক আল কাউসার,ফেব্র“য়ারী-২০০৫,পৃষ্ঠা -৩৯।
একটি ভুল ঘটনাঃ
ঈদের সকাল। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কলিজার টুকরা হাসান-হুসাইল মা ফাতেমার কাছে ঈদের নতুন জামার জন্য কান্নাকাটি করছেন । আশেপাশের সমবয়সী অনেকে নতুন জামা পরে হাসি ফুর্তি করছে,কিন্তু আমাদের নতুন জামা নাই কেন ? মা ফাতেমা কান্না গোপন করে তাদের সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। অগত্যা তাদেরকে বললেন, তোমরা গোসল করে এস, আমি তোমাদের নতুন জামার ব্যবস্থা করছি।
বলাবাহুল্য ব্যবস্থা করার মত তার কোন উপায়ই ছিলো না। পুণ্যবতী মা ফাতেমা দুই পুত্রকে গোসল করতে পাঠিয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে লুটিয়ে পড়লেন । বলতে লাগলেন , হে প্রভু! হাসান- হুসাইন গোসল করে এসে জামা চাইলে আমি তাদের কী জবাব দেব? তুমি কি চাও আজ ঈদের দিনে তাদের সামনে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হই এবং তারা মিসকীনের মত ঈদ করুক? আল্লাহ তায়ালা তৎক্ষণাৎ হযরত জিব্রীল (আঃ) কে দর্জির বেশে দুটি জামা দিয়ে মা ফাতেমার ঘরে পাঠালেন। দরজায় নক করার শব্দ শুনে মা ফাতেমা সিজদা থেকে মাথা তুললেন এবং দর্জির কাছ থেকে জামা দুটি গ্রহন করলেন। একটি জামা ছিল লাল আরেকটি জামা ছিল নীল।
শিশু হাসান-হুসাইন ঘরে ফিরে নতুন জামা পেয়ে আনন্দে বিভোর হয়ে গেল । দুজনে জামা দুটি বুকে জড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘরের দিকে দৌড়াতে লাগল। ডাক দিল, নানা! এই দেখ আমদের ঈদের নতুন জামা! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জামা দুটি দেখে কেঁদে উঠলেন এবং লাল জামাটি হুসাইনকে ও নীল জামাটি হাসানকে পরিয়ে দিলেন, যা পরবর্তী সময়ে হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত ও হযরত হাসান (রাঃ) এর বিষপানের দিকে ইঙ্গীত ছিল।
এই ঘটনাটির কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এর চেয়ে অলৌকিক ব্যাপারও নবী পরিবারের সাথে ঘটতে পারে।
কিন্তু যে ঘটনা ঘটেনি বা ঘটেছে বলে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসুত্রে পাওয়া যায়না, সে ঘটনা প্রচার করার কোন সুযোগ নেই। [ মাসিক আল কাউসার,মার্চ-২০০৫, পৃষ্ঠা-৩৩] চলবে...........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।