আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘবতীকে, প্রিয়তমেষু - ২

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

মেঘবতীকে, প্রিয়তমেষু - ২ Click This Link Click This Link সুপ্রিয় মেঘবতী, তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা অনুযোগ করবো এমন দুঃসাহস আমার নেই। কারণ অভিমানীদের কখনোই অভিমান করার সুযোগ দিতে নেই। আর সত্যি বলতে কি তোমার অত সুন্দর চিঠির তেমন কোন যুৎসই জবাব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম- “কি লিখি তোমায়”! জবাব দিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও ভেবে নিওনা এতে আমার কোন অবহেলা কিংবা অবজ্ঞা ছিল। বরং ভেবে নিতে পারো এতোটা প্রজ্ঞা আমার নেই যা দিয়ে তোমার মূল্যায়ন করি।

আমার মন-মোহনা জুড়ে প্রশান্তির যে ব-দ্বীপ তার কোল জুড়ে দারুচিনির ছায়া না থাকলেও রয়েছে পলি মাটির সোঁদা গন্ধ আর রয়েছে সবুজ ঘাসের গালিচা। যদি কখনো সেখানে এসে বসো তবে টের পাবে দখিনা বাতাসের হিন্দোল যা স্নিগ্ধ, শীতল পরশ বুলিয়ে দিয়ে যাবে আনমনে, অগোচরে। যাব্বাবা! আমি কি কাব্য করছি নাকি? আমি মোটেও কাব্য করছিনা। আমি কবি নই। আমি কবিতা বুঝিনা।

তোমার ধারণাই ঠিক। তোমার চিঠি পড়ে আমার মনে যে ভাবনার সঞ্চার হলো তাই শুধু ব্যক্ত করছি। তুমি আমার চিঠিতে কেনি জি’র ব্রেদলেস বেজে উঠতে দেখেছো- তুমি কী জানো সেই সুরের উৎস কোথায়? প্রিয়তমেষুর হৃদয়ে যে সুরের অনুরণন তা যে মেঘবতী’র কোমল হাতের ছোঁয়ায় সৃষ্ট এক একটি অক্ষর আর শব্দের মূচ্ছর্ণা। যা চিঠির পাতা থেকে কখন যেন গানের স্বরলিপি হয়ে নীরবেই বাজতে থাকে। আর সেটাই তোমার “সাউন্ড অব মিউজিক” এর “মাই ফ্যভোরিট থিংস” হয়ে মনে গুঞ্জরন সৃষ্টি করে।

আমিও যে বহুবার সেই “সাউন্ড অব মিউজিক” দেখে তারুণ্যের উচ্ছাসে ভেসে গেছি। মেঘের ছায়ার সাথে বিস্তৃত সবুজ প্রান্তরে দৌড়ে গেছি। সেই মেঘগুলো দিগন্তে হারিয়ে গেলেও আমার মন-পাহাড়ে জমে থাকা ভালবাসার মেঘগুলোকে আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি। হয়তো মনে মনে কোন মেঘবতীকেই খুঁজেছি। বিদ্যুতের ঝলকানি কিংবা মেঘের গর্জনে ভীত হইনি বরং বৃষ্টিকে বরণ করেছি।

ভেবেছি কোন এক মেঘবতী আকাশপাড়ে বন্দীনি, অঝোরে একা একা কাঁদছে। যাহ্! কি আবোল তাবোল ভাবছি! মেঘবতী কাঁদবে কেন? সেতো শুধু হাসবে। মেঘে মেঘে সে রামধনুর মতো হাসির রঙ ছড়াবে। আর সেই রঙে আমি প্রকৃতির সবকিছু রঙিন দেখবো। আর সেই রঙ এখন সাদা- শুধুই সাদা।

তুমিতো জানো সব রঙের মিশ্রণ হলো সাদা। সেই যে ছোটবেলায় পড়েছি “বেনীআসহকলা”। আমার চারিদিকে এখন সেই সাদার সমারোহ। চারিদিকে শুধু বরফ আর বরফ। সবকিছু এখন বরফে ঢেকে আছে।

এখানে এখন শীতকাল। আমি জানি মেঘবতীর হয়তো শীতকাল তেমন পছন্দের নয়। আমারো নয়। কারণ আমি মেঘ হয়তো সামলাতে পারি- কিন্তু বরফ সামলাবো কি করে? বরফের দেশে মানুষ কাঁদতে জানেনা। তাদের চোখে কখনো অশ্রু ঝরেনা।

তার কারণ কি জানো? মানুষের চোখের জল বের হবার আগেই তা জমে যায়। তাই এরা কাঁদতে জানেনা। তুমি যদি কখনো আমাকে “বরফ হৃদয় পুরুষ” বলে সম্বোধন করো আমি অবাক হবো না। তবে এই বরফ মানবেরা কান্না চোখে না ধরলেও তা হৃদয়ে জমিয়ে রাখে। তাই সহজে কারো চোখে পড়েনা।

তবে কারো হৃদয়ের উষ্ণতা পেলে সেই বরফ হৃদয় যে গলবেনা তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কোন এক শ্রাবণসন্ধ্যায় যদি মেঘবতীর চোখে জল আসে তবে সেটাকে বৃষ্টির জল বলে ভ্রম হলেও তা যে হৃদয়ের কান্না তা কে বলে দেবে? বসন্তের দিন এলে যেমন মেঘবতী শ্রাবণসন্ধ্যার অঝোর বৃষ্টিকে ভুলে যায় তেমনি প্রিয়তমেষু এক সোনালী গ্রীষ্মের প্রতীক্ষায় আছে যেদিন তার চারিদেকের সব বরফ গলে যাবে। কারো অশ্রুসজল চোখের দিকে তাকিয়ে তার চোখ দিয়েও জল গড়াবে। সেদিন বরফের সব দেয়াল ভেঙ্গে যাবে। বৃষ্টির জলের সাথে বরফ গলা জল মিশে একাকার হয়ে যাবে। আর সেই মিলিত শীতল জলস্রোতে ভাসিয়ে দেবো ভালবাসার নৌকা- হয়তোবা চিঠির কাগজে তৈরী নৌকা।

যে নৌকা ভাসাতে গভীর জলের কোন প্রয়োজন নেই- কোন মাঝি-মাল্লার প্রয়োজন নেই, কোন নির্দ্দিষ্ট বন্দরের ঠিকানা জানারও প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন- তা হলো দুটি মন, একটু ভালবাসা, একটু বিশ্বাস আর হৃদয়ের একটু গভীরতা। অভিমানী মেঘবতীর জন্য আজ এটুকুই রইলো। আর রইলো তোমার চিঠির জন্য আমার একরাশ প্রতীক্ষা। ভাল থাকার প্রার্থনা রইলো।

ইতি- প্রিয়তমেষু

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.