"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
মেঘবতীকে, প্রিয়তমেষু - ১
মেঘবতী,
আর ম্যাডাম নয়, আপনিও নয়। এবার থেকে তুমি আর শুধুই মেঘবতী। আমি জেনে গেছি তুমি বড্ডো অভিমানী। তোমার অভিমানের আকাশে কতটা মেঘ জমিয়ে রেখেছো তা অনুমান করতে পারি। আর কতটা আদর-ভালবাসা দিলে সেই অভিমানের মেঘ বৃষ্টি হয়ে তোমার দু’চোখ বেয়ে নামবে তা’ও আমি অনুমান করতে পারি।
তোমার মান ভাঙ্গাতে আমাকে এখন মেঘে মেঘে হাজার রঙের রঙধনু সাজাতে হবে। তোমার নিটোল গালের অনুপম ভাঁজে আমার পত্র মারফত পাঠিয়ে দেয়ে পবিত্র চুম্বনের স্নিগ্ধতা যখন আবির হয়ে তোমার সকল ভাবনার গভীরতাকে আবেশে বিমোহিত করবে তখন আমি বুঝবো তোমার মন আকাশের সকল মেঘ কেটে গেছে। আচ্ছা, সত্যিই কী কাটবে? কি করে জানবো বলতো? তোমার নাম যে মেঘবতী। বিদ্যুতের আলোয় নাহয় চমকে দিও, গুরু গম্ভীর গর্জনে নাহয় জানিয়ে দিও- তোমার অভিমান ভেঙ্গেছে।
মেঘবতী নামটা কিন্তু আমিই তোমাকে দিয়েছিলাম।
আমার খুব পছন্দের একটা নাম। তোমার আরো দুটো নাম ছিল, অন্যেরা তোমাকে সেই নামেই চেনে। আমি কিন্তু কখনোই তোমাকে সেই নামে ডাকিনি। আমার দেয়া এই নামটা তোমারো খুব পছন্দের। আচ্ছা, তুমি কি জানো তোমাকে আমি কেন মেঘবতী বলে ডাকি? হয়তো জানো কিংবা কখনো জানার প্রয়োজন বোধ করোনি।
মনে মনে খুশী ছিলে সেটাই অনেক। নামটা যেহেতু আমার দেয়া তাই সেটা যেমনি হোক তা নিয়ে ভাববার অবকাশ ছিলনা। আর নামটা যা’ই হোকনা কেন, তাতে কার কি আসে যায়? তুমি হয়তো এমনটাই ভাবতে। নামটা তোমার ভাল লেগেছে সেটাই শেষ কথা। তবুও আমার মনে হয় এর পেছনের কথাগুলো তুমি জানলে তোমার ভাল লাগবে- কেন তুমি মেঘবতী।
মেঘের যে অনেক রঙ তুমি কি জানো? অবাক হলে বুঝি! সত্যিই কিন্তু মেঘের অনেক রঙ। শরতের আকাশে মেঘগুলো সাদা, শুভ্র- ঠিক তূলোর মতো। আষাঢ় ও শ্রাবণে সেই মেঘই আবার কখনো ধূসর, কখনোবা কালো। আবার গোধূলি বেলায় সেই মেঘই কেমন লালচে, কমলা, হলুদ, সোনালী আর নীলাভ বর্ণের অপরূপ মিশ্রণ। তুমি নিশ্চয়ই আকাশে এমন সব মেঘের রঙ দেখেছো।
আমিও দেখেছি। আর মনে মনে ভেবেছি আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো এই মেঘেরা আসলেই কত সুন্দর! কত বর্ণিল! কত সুষমামন্ডিত! ঈশ্বরের এক অপূর্ব সৃষ্টি! কেমন মুক্ত বিহঙ্গের মতো যেথায় খুশী ভেসে যেতে পারে। আর এই মেঘগুলোই যেন আকাশের ক্যানভাস জুড়ে আত্মমগ্ন এক শিল্পীর নিপূণ হাতের অনুপম স্পর্শে আঁকা চিত্রকর্ম। প্রতিটি আঁচড় যেন রঙ-তুলির নান্দনিক টানে উদ্ভাসিত। এমন শিল্পময় সৌন্দর্য আর কোথাও দেখেছো কী? আমি দেখেছি।
তোমার মাঝে, তোমার মনে আমি সেই মেঘের ছবিই ফুটে উঠতে দেখেছি। বার বার প্রতিবার, চোখে নয়- আমার অন্তর দৃষ্টিতে। তাইতো তুমি মেঘবতী। তুমি আমার মনের আকাশ জুড়ে বিচিত্র সব রঙের সমারোহ। কখনো সাদা, কখনো ধূসর, কখনো বা অনন্য বর্ণিল।
মন কেড়ে নেয়া বাহারি সব রঙের খেলা। আর এই রঙের মতোই কী তুমি সময়ে বদলে যাও? আমি কি তখন তোমার সঠিক রঙটা চিনতে পারি? পারলে কি আর তোমাকে নিয়ে এতো ভাবতাম? প্রকৃতির ষড়ঋতু যেন তোমার মাঝেই বিদ্যমান। মেঘে মেঘে লুকিয়ে আছে।
তোমার মনের মেঘ যে বিচিত্র রঙ ধারণ করে থাকে তা আমাকেও বর্ণিল করে তোলে। আমি সেই মেঘে মেঘে হারিয়ে যাই কোন এক সুদুরের টানে।
সেই টান শুধুই ভাললাগার, শুধুই ভালবাসার। অথচ আমি ভুলে যাই এই মেঘেও বৃষ্টি হয়। এই মেঘেরও কান্না আছে। মেঘবতীর মেঘলা মন যখন গুমরে কাঁদে তখন এক অনাহুত অভিমানে, এক অলিখিত অভিযোগে, এক না পাওয়া বিষাদ ব্যথায় শুধু প্রলম্বিত হয়। বিরহ যাতনায় দিন কাটে।
আমি তখন তোমাকে শান্তনা দেবার মতো বিশ্বস্ত কিছু বাণী খুঁজতে থাকি। খুঁজতে থাকি মমত্বের প্রভায় বিচ্ছুরিত একরাশ অলৌকিক সূর্যালোক। তোমার মেঘলা মনটাকে চাই আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিতে। আর তা যদি হয় আমার একজনমের ভালবাসা হোকনা। আমি সেই ভালবাসার বিশ্বাসে গাঁথতে চাই আমার সকল অনুভব।
মমত্বের সৌরভে ভরিয়ে দিতে চাই আমার সেই পবিত্র পূষ্পমাল্য। আমার সকল ভালবাসা শুধু তোমারই জন্য।
আজ তোমার আমার যেটকু দূরত্ব সেতো শুধু অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশের বলয় দ্বারাই নির্ণিত, এ দূরত্ব শুধুই অবস্থানগত। আমাদের দুজনের মনের মাঝে কোন দূরত্ব নেই। আমার দৃষ্টির নাগালে যে আকাশ সেই আকাশে যে মেঘ ভাসে, সেই মেঘ তোমার আকাশেও হাসে।
অথচ আমার মনের আকাশে যে মেঘ সেই মেঘ শুধু পৃথিবী কেন- গ্রহ থেকে গ্রহান্তরের আর কোথাও নেই। সেই মেঘ এক মানবী, আমার চিরচেনা মেঘবতী। তুমি কাঁদলে বৃষ্টি হবে এতো জানা কথা, তুমি হাসলে বসন্তের হাওয়া বইবে এটাও ধ্রুব সত্যি। তুমি কাছে থাকলে আমার সমস্ত কষ্ট বরফের মতো গলে যায়- সেটা বহুবার প্রমাণিত। তুমি হাতছানি দিয়ে ডাকলে আমার হৃদয়ে বাঁধভাঙ্গা জলোচ্ছাস বয়ে যায়- সেটা তোমাকে না বললেও তুমি বুঝতে পারো।
হে মেঘবতী, তুমি যেমন মেঘের রঙে নিজেকে রাঙাতে পারো আমিও তেমনি তোমার অভাবে নিরন্তর বদলে যাই, বর্ণহীন হতে থাকি। তুমি নীরব হলে আমার সকল উচ্ছাসে ভাটা পড়ে, আমার নিবেদিত সকল ভালবাসায় মরচে ধরে, আমি স্তিমিত প্রদীপের মতো আলোহীন হয়ে পরি। তুমি মেঘ হয়ে আমাকে একটু ছায়া দাও, আমি ঈশ্বরের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করি প্রত্যাশার সূর্যটা যেন চিরকাল আড়ালে থেকেও তোমাকে আগের মতোই রাঙিয়ে তোলে। আমি তোমাকে মেঘবতী বলেই ডাকবো কারণ তোমার বিচিত্র মনে যেসব রঙ ধারণ করো, সেই রঙের উৎস হয়তো আমি নই, সে হলো অনেক দূরের জ্বলজ্বলে এক সূর্য। আমার সাধ্য কি, আমি সূর্য হয়ে তোমাকে রাঙাই।
বড়জোড় তুমি কাঁদলে আমি একটু বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে পারি। তোমার সেই কান্না ছুঁতে হলে আমাকে কখনো সূর্য হতে হবেনা, বরং ভিখারীর মতো এই হাত দুটোই বাড়িয়ে রাখবো। মেঘবতীর সকল কান্না বৃষ্টি হয়েই ঝরুক, আমার শুকনো হাতদুটোকে করুণাজলে ভিজিয়ে দিক।
- প্রিয়তমেষু
(ফেরারী পাখী'র চিঠি বিষয়ক পোস্টের সূত্র ধরে, অনুরোধে ঢেঁকি গেলা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।