আমি খুবই Innocent...!!!
ঢাবিতে ৭০ হত্যাকা-
বিচার একটির
আপেল মাহমুদ
স্বাধীনতাপরবর্তী ৩৮ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের অন্তত ৭০ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এসব হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এসব ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কোনও রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ের মাত্র একটি হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে। অবশিষ্ট হত্যাকা-ের কোনও বিচার হয়নি।
কয়েকটি হত্যাকা-ের সংক্ষিপ্ত বিবরণÑ
৪ এপ্রিল, ১৯৭৪
নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল রাত ১টা ২৫ মিনিটে সূর্যসেন হলের ৬৪৫ ও ৬৪৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে ৭ জন ছাত্রকে টেনে বের করে। অতঃপর তাদের নিয়ে রাত ২টার দিকে মুহসীন হলের টিভি রুমের সামনের করিডরে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। নিহতরা হলেনÑ নাজমুল হক কোহিনুর (২য় পর্ব, এমএ সমাজবিজ্ঞান), মোহাম্মদ ইদ্রিস (এমকম, প্রথম পর্ব), রেজওয়ানুর রব (প্রথম বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান) সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ (প্রথম বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান), বশিরুদ্দিন আহমদ জিন্নাহ (প্রথম পর্ব, এমকম), আবুল হোসেন (প্রথম পর্ব, সমাজবিজ্ঞান), এবাদ খান (প্রথম বর্ষ, সমাজবিজ্ঞান)। সরকার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিলে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে তদন্ত চালানো হয়। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলমসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বিচারে শফিউলের যাবজ্জীবন সাজা হলেও পরে তিনি ছাড়া পান।
১২ এপ্রিল, ১৯৭৮
রোকেয়া হলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও তাদের সমর্থক ছাত্রীদের সঙ্গে অপর ছাত্রীদের মতবিরোধের জের ধরে কর্তৃপক্ষ তিন ছাত্রীর সিট বাতিল করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষ ক্যাম্পাসে মিছিলের প্রস্তুতি চালানোর সময় সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনার জের ধরে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের ১২৭ নম্বর কক্ষে এক ছাত্র (নাম প্রকাশ হয়নি) নিহত হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩
শিবিরের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের হয়ে কলা ভবনের পশ্চিম গেট অতিক্রম করার সময় মধুর ক্যান্টিন থেকে সংগ্রাম পরিষদের একটি মিছিল হামলা করে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার এক প্রেসনোটে গোলযোগ বন্ধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও সব ধরনের মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ১৪টি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন সব আদেশ ভঙ্গ করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে জয়নুল নামে এক ছাত্র চাকুর আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫
রাত ১১টায় জহুরুল হক হল ও এফ রহমান হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতি মিছিলের ওপর কাটারাইফেলের গুলিবর্ষণে বাকশালের সংগঠক জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, সমাজবিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া নিহত হন।
পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, প্রাধ্যক্ষ ও ডিনরা জরুরি সভায় মিলিত হয়ে ৪ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ রাখেন।
ছাত্রদল ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরীতে অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করে। সে সময় খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, জাসদ নেতা মীর্জা সিরাজ এ ঘটনার জন্য সরকারি মদদপুষ্ট পেটোয়া বাহিনীকে দায়ী করেন।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬
২১ ফেব্রুয়ারির রাতে ছবি টানানো নিয়ে শহীদ মিনারে ছাত্রদল, আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে সোহরাব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দোষীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান।
সোহরাবের মায়ের দায়ের করা মামলায় ছাত্রদলকে অভিযুক্ত করা হয়।
৩১ মার্চ, ১৯৮৬
৩০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলের ওপর বিএনপি খালেদা সমর্থিত ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ও বাসদ সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সম্মিলিত সশস্ত্র আক্রমণের ফলে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মোঃ আসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনের পক্ষে মিছিল জগন্নাথ হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে দিয়ে কলা ভবন প্রদক্ষিণ করে লেকচার থিয়েটারের পশ্চিম গেটে পৌঁছলে সূর্যসেন হল থেকে এ সময় বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদল, জাসদসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় আসলামের মাথায় গুলি লাগলে তার খুলি উড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
৮ মার্চ, ১৯৮৭
৮ মার্চ দুপুরে মুহসীন হলের ৪২৬ নম্বর কক্ষে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
এই রুমে অবস্থান করতেন ছাত্রদল নেতা বাবলু। বিস্ফোরণে বাবলুসহ মাইনুদ্দীন ও নূর মুহাম্মদ আহত হন। বাবলুকে পিজিতে আনার পথে মারা যান। পরের দিন তার দুই সহযোগী মাইনুদ্দীন ও নূর মুহাম্মদও মারা যান।
১৫ জুলাই, ১৯৮৭
১৪ জুলাই সূর্যসেন হলের একটি কক্ষের দখল নিয়ে ছাত্রদল ও জাসদ ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এতে সূর্যসেন হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুল হালিম নিহত হন। এই ঘটনার জের ধরে ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে আরও ৩ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেনÑ শহীদুল্লাহ হলের ছাত্র আসাদ আহমেদ মুন্না, রিকশাচালক আবদুর রহিম এবং পথচারী কামরুল হাসান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
কিন্তু সেই রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি।
১১ ডিসেম্বর, ১৯৮৮
১১ ডিসেম্বর রাতে জিয়া হলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সম্মেলন কক্ষে খালেদা জিয়া বক্তৃতা করছিলেন। এ সময় জানা যায় ছাত্রদলের অন্যতম নেতা বজলুর রহমান শহীদ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মুহসীন হলের ৩৫৭ নং কক্ষ থেকে শহীদকে পিজি হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। ঘটনা তদন্তের জন্য আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর কেএএস কামরুদ্দিনকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়।
সে রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।
৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে পরাজিত ছাত্রদলের কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। এ সময় ছাত্রদলের হামলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মী কফিল উদ্দিন কনক নামের এক ছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় ৭ দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয় এবং ভিসি আবদুল মান্নান ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির তদন্তের ফল আজও জানা যায়নি।
২৬ নভেম্বর, ১৯৯০
সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত নেতা নীরু-অভি গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ক্যাম্পাসের চা দোকানদার নিমাই বুলেটবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ সময় ভাইস চ্যান্সেলর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞার সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডেকে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পদক্ষেপের অনুরোধ জানানো হয়। এভাবেই ঘটনাটির সমাপ্তি ঘটে।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০
২১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার জের হিসাবে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ ২৫ ফেব্রুয়ারি মধুর ক্যান্টিনে একত্র হয়। এ সময় একদল ছাত্র ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
মুহসীন হল, সূর্যসেন হল ও জহুরুল হক হল এলাকায় ছাত্রদের সশস্ত্র উপস্থিতি বেড়ে যায়। এক সময় ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে গোলাগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় কাব ভবনের পাশে জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের ভিপি শহীদুল ইসলাম চুন্নু মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় ভিসির সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভার তদন্ত কমিটি গঠন এবং ২০ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। এদিকে রাষ্ট্রপতি এরশাদের সভাপতিত্বে আরও একটি বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের ওপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২৬ নভেম্বর, ১৯৯০
ক্যাম্পাসে বহিষ্কৃত নেতাদের প্রবেশ বন্ধে নীরু-অভি গ্রুপ উত্তেজিত হয়ে উঠলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একাংশ ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলা একাডেমীর গার্ড নিতাই চন্দ্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
পরবর্তী সময়ে ভিসি মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
২৭ নভেম্বর, ১৯৯০
২৭ নভেম্বর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ছাত্রদল ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় দুপক্ষের ক্রসফায়ারে ডা. মিলন প্রাণ হারান।
২০ জুন, ১৯৯১
সিট দখলসহ নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের সূত্র ধরে ২০ জুন মুজিববাদী ছাত্রলীগ এবং জাসদ ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মধুর ক্যান্টিন থেকে সব হলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
জাসদ ছাত্রলীগের কর্মীরা মুহসীন হলে এবং মুজিববাদী ছাত্রলীগ জহুরুল হক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাবে একে অপরকে মোকাবেলা করে। সংঘর্ষ চলাকালে আইইআর ভবনের পশ্চিম গেটের সামনে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা মাহবুবুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাহবুব ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এমএ শেষ পর্ব এবং মুহসীন হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। কর্তৃপক্ষ এ সময় ঈদের ছুটি ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাস শান্ত করে।
২৭ অক্টোবর, ১৯৯১
দীর্ঘ ৪ মাস ধরে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার জের ধরে ছাত্রদল জিএস ডাকসুতে বৈঠক শেষে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি লেকচার থিয়েটারে পৌঁছলে সূর্যসেন হল থেকে আসা আরও একটি ছাত্রলীগের মিছিলের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় ভাষা ইনস্টিটিউটের সামনে ছাত্রদল কর্মী মির্জা গালিব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গালিবকে নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলে ছাত্রদল কর্মী লিটন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই দুজনের মৃত্যুর পর ছাত্রদল ছাত্রলীগের ওপর ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ করলে রেজিস্ট্রারের বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগ কর্মী মিজানুর রহমান ও এক টোকাই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে আহত ও পরে নিহত হন।
তখন ক্যাম্পাসে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা হয়।
৯ জানুয়ারি, ১৯৯২
টিএসসির সড়ক দ্বীপে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা চলাকালে সংগঠনের দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কিছু পরে শামসুননাহার হলের সামনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
১৩ মার্চ, ১৯৯২
গণতান্ত্রিক ছাত্রঐক্য ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে প্রচ- গোলাগুলির এক পর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মইন হোসেন রাজু টিএসসির সড়ক দ্বীপে গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর পর ময়না তদন্ত ছাড়াই রাজুর লাশ দাফন করা হয়।
রাজু শহীদুল্লাহ হলের ১শ ২০ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২
সূর্যসেন হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন ছাত্র নিহত হয়। গ্রুপ দুটি হচ্ছে সূর্যসেন হল ও মুহসীন হলভিত্তিক এবং অন্যটি মুজিব ও জসীম উদ্দীন হলভিত্তিক। মুজিব ও জসীম উদ্দীন হলভিত্তিক গ্রুপটি সূর্যসেন হল দখল করার সময় ভূগোল বিভাগের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র আশরাফুল আজম মামুনকে ২৬৫ নম্বর কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামুন জিয়া হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর মুজিব হলের দেয়াল টপকানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ইতিহাস বিভাগের মাহমুদ হোসেন। এ সময় ভিসি মনিরুজ্জামান মিঞার সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা এবং যথাযথ তদন্তের দাবি করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন।
১ নভেম্বর, ১৯৯৩
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ভবনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নাট্য সম্পাদক জিন্নাহকে গুলিতে হত্যা করে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। এ সময় নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আট সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
২২ নভেম্বর, ১৯৯৩
ছাত্রলীগ মন্টু গ্রুপের নেতা অলোক কান্তিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিতুমীর হল গেটে হত্যা করা হয়। মন্টু সমর্থিত ছাত্রলীগ এ হত্যাকা-ের জন্য শেখ হাসিনা সমর্থিত ছাত্রলীগকে দায়ী করে। মুজিববাদী ছাত্রলীগ দাবি করে অলোক টেন্ডারের চাঁদা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের শিকার হয়েছেন। অলোক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় এ ঘটনার নিন্দা ও স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪
ডাসের অভ্যন্তরে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে পরস্পরবিরোধী দুটি গ্রুপের গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একটি শেল তথ্য ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র কামরুল ইসলাম বুলবুলের বুকে লাগলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ হত্যাকা-ের জন্য ছাত্রনেতা রুহুল কুদ্দুস বাবু বিপরীত গ্রুপের ১৪ জনকে আসামি করে রমনা থানায় মামলা করেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মজুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মনিরুল হককে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সিন্ডিকেটের সভায় ৩ দিন কাস বন্ধ করা হয়।
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪
ছাত্রদলের মধ্যে দুটি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দিবাগত রাতে ফজলুল হক হলে এক সাধারণ ছাত্র গুলিতে নিহত হন। তার নাম সারোয়ার হোসেন মিঠু। তিনি ডেমোগ্রাফি বিভাগের প্রথম বর্ষ মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন।
২২ সেপেম্বর, ১৯৯৬
স্যার সলিমুল্লাহ হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র জাকিরকে জগন্নাথ হলের গোবিন্দচন্দ্র দেব ভবনের ৭১ নম্বর কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ছাত্রলীগ সরকারি কিলিং এজেন্টকে দায়ী করে। এ সময় সিন্ডিকেট সভায় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মনিরুল হককে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়।
১৩ মার্চ, ১৯৯৭
ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতা কামরুজ্জামান রতন নিয়ন্ত্রিত ইলিয়াস গ্রুপ ও বরিশাল টিটো গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের হিসাবে ছাত্রদলের একটি সশস্ত্র গ্রুপ ভোর রাত সাড়ে ৪টায় দেয়াল টপকে মুজিব হলে ঢোকে। গেটে পাহারারত ছাত্রদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে ৩০৫ নং কক্ষে ঢুকে তারা আরিফ হোসেন তাজকে গুলি করে। এতে তার মৃত্যু হয়।
তিনি ছিলেন অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। প্রক্টর একেএম নূর-উন-নবীকে সদস্য সচিব করে ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়।
২৩ এপ্রিল, ১৯৯৮
সূর্যসেন হল দখলকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও মুজিববাদী ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র পার্থপ্রতিম আচার্য সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘটনার তদন্তের জন্য প্রফেসর এটিএম জহরুল হককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
২৯ মার্চ, ২০০১
৫৬ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে জহুরুল হক হলের পুকুরের পাশে সহযোগীদের গুলিতে নিহত হয় খায়রুল আলম লিটন ওরফে কুত্তা লিটন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র লিটন বিসিএসে চান্স পেলেও যোগদান না করে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
১৭ আগস্ট, ২০০১
গুলিবিদ্ধ হয়ে জিয়াউর রহমান হলে ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ আহমদ নিহত হন। অনুমান করা হয় নিজের রিভলবারের ছোড়া গুলিতে অথবা বন্ধুদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। ফিরোজ ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের ছাত্র এবং থাকতেন জিয়া হলের ৪২০ নম্বর কক্ষে।
ঘটনা তদন্তের জন্য অধ্যাপক মোঃ শাহাদাত আলীকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
এ ছাড়া ২ জুলাই ২০০০ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে (লাল্টু-পিন্টু) একজন বহিরাগত বোমায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ মার্চ ২০০৩ সালে এফ রহমান হলের গেটের সামনে অপরিচিত এক ব্যক্তিকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।
এ যাবৎকাল চার শিক্ষক খুন
মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষক খুন হয়েছেন আজ পর্যন্ত তাদের হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। এসব খুনের পর মামলা হলেও তদারকির অভাবে মামলাগুলো ঝুলে পড়ে, এরপর এক পর্যায়ে তা হারিয়ে যায়।
২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় নিজ বাসার শোবার ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা অধ্যাপক আফতাব আহমাদকে গুলি করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক ভিসি ঘটনার পরদিনই মারা যান। সুরক্ষিত আবাসিক এলাকায় ঢুকে গুলি করে নির্বিঘেœ সন্ত্রাসীদের পালিয়ে যাওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।
এর আগেও ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকজন শিক্ষক সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত ও খুন হয়েছেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শাসন মেয়াদে ড. হুমায়ুন আজাদ ক্যাম্পাসে আক্রান্ত হলেও কয়েক মাস পর জার্মানিতে মারা যান। শিক্ষকরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক খুন হয়েছেন। কিন্তু কোনও ঘটনারই বিচার হয়নি। ১৯৭২ সালের ৬ জুন খুন হন বাংলা বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন কবির। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে সংসদ ভবন চত্বরে খুন হন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক নোবান আহমেদ।
সিআইডির এএসপি খালেকুজ্জামান এ মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে কোনও অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারেননি। পরে তিনি এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আদালত ভালো বলতে পারবে
আতিকুল ইসলাম, ডিসি, রমনা জোন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া হত্যাকা-ের বর্তমান অবস্থা বলা মুশকিল। কোন মামলা কী অবস্থায় আছে এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। কারণ আগে রমনা থানার অধীনে থাকলেও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ থানার অধীনে।
সর্বশেষ অবস্থা আদালত ভালো বলতে পারবে।
কে এম সাইফুল ইসলাম
প্রক্টর ঢাবি
শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের মামলা রমনা থানায় আছে। আর আফতাব আহমাদের মামলা সিআইডি দেখছে। গত মাসে আমরা আবেদন করেছি বিচার যেন দ্রুত হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খোঁজ-খবর নিয়ে সহযোগিতা করছে।
তবে শিক্ষক সমিতি থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ছাত্রদের হত্যাকা-ের ব্যপারে আমাদের কাছে তেমন কোনও তথ্য নেই। শুধুমাত্র ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের তালিকা আছে। কোন মামলার কী অবস্থা তা আমাদের অফিসে নেই।
লেখাটি সাপ্তাহিক ২০০০ পএিকায় ৪ডি.০৯ প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।