আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমতালিপ্সু অপঃশক্তির শেষ টোটকাঃ জনগণের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত” শীর্ষক পুরোন জুজুর প্ররোচনা!

(ছবিঃ নাস্তিকতার শাস্তি কি এই অমানবিক ভাবে?) ব্লগারদের লেখা ভুখা নাঙ্গা মৌলিক অধিকার বঞ্চিত দেশবাসীর ধর্মীয় মূল্যবোধ বা ধর্মীয় অনুভূতিতে যে আঘাত লাগে না তা অতি সুনিশ্চিত, এসব প্রচারনা চালানো হয় হয় অপঃরাজনৈতিক কর্মকান্ড ও দুর্নীতি বিরোধী জনরোষ থেকে বাঁচতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে, ক্ষমতায় অরোহন করতে ও জনগনের দৃস্টি অন্যত্র সরাতে! এটা নিরপেক্ষ জরীপ করে দেখতে পারেন তৃনমূলে! এখন এই ইস্যুতেই শেষ টোটকা হিসেবে আগামী কাল "ওলামা-মাশায়েখ" নামে জামাত-শিবির-বিএনপি প্রতিক্রিয়াশীল অক্ষশক্তি সারা দেশে ব্লগারদের বিচারের দাবীতে মাঠে নামার পাঁয়তারা করছে! এই উপমহাদেশে "জনগণের ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাত লাগতে পারে" বাক্যটি আবিষ্কার করে প্রথম সম্ভবতঃ ধান্দাবাজ বেনিয়া ও লুঠেরা বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও পরে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পরে বৃটিশ মহারানী ভিক্টোরিয়ার সরকার ও সেটাকে প্রতিপালন করে চলে সেই পুরোন ধান্দা, ভারতবর্ষে অবাধ শোষন ও লুঠ-পাট অক্ষুন্ন রাখতে! তারা প্রায় দুইশত বছর এদেশে অন্ন, বস্ত্র, বাস স্থানের দিকে লক্ষ্য না রাখলেও তাদের নিবীড় ও তীক্ষন লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় ইস্যুর ওপর কারন তারা এদেশীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক তাদেরই দোসরদের খুব ভাল ভাবেই সনাক্ত করতে পেরেছিল! বেনিয়া বৃটিশরা জানতো যে ভূখা পেট ও ছিন্ন বস্ত্রেও এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে ধর্ম "খাইয়ে" রাখা যাবে, তাই তারা ধর্মীয় গোড়ামী দূরকর তে তো কিছু করেই নি, বরং চেষ্টা করেছে তাকে উতসাহ দিতে এ দেশের নানান ধরনের ধর্ম ব্যাবসায়ী পৃষ্ঠপোষকতা করে, এমন কি তারা তাদের নিজস্ব খ্রীষ্ট ধর্মকে ও সে ভাবে প্রমোট করেনি (যে রকমটি এখন তাদেরই উত্তরসুরী খ্রীষ্ট ধর্ম অনূসারীরা করার সূযোগ পাচ্ছে), কারন ঔপনিবেশিক বৃটিশের ছিল একটিই লক্ষ্য, আর তা হলো উপমহাদেশের সম্পদ আর রাজস্ব লূঠ করা! শুধুমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রামমোহন প্রমূখ (যিনি বৃটিশের প্রাক্তন মূতসুদ্দিও বটেন!) নেতৃবৃন্দের দৃঢ়চেতা ভূমিকার কারনে হিন্দু ধর্মে্র কিছু গোড়ামীর বিরুদ্ধে বৃটিশ ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল! কিন্তু "ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত" নামের অতি উপাদেয় জুজুটি শাসক ও শোষক গোষ্ঠির সর্বরোগহর রক্ষা কবচটি এখন ও স্বমহিমায় বিরাজমান! ভাবখানা এই যে পেটে দানা-পানি না থাকলেও, শরীরে আব্রু ঢাকার বস্ত্রের ব্যাবস্থা না থাকলেও, অন্যান্য মৈলিক চাহিদা গোল্লায় গেলেও শুধু ধর্মের এঁড়ে গরু ছেড়ে দিয়েই বুভুক্ষু মৌলিক চাহিদার রসদ বঞ্চিত বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে বাগে রাখা যাবে! এবং তাই করে গেছে নব্য ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসক ও শোষক গোষ্ঠি, যখনই মৌলিক চাহিদা ও গণতন্ত্রের দাবীতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠি আন্দোলনে গেছে, তখনই এই "ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত" নামের অতি উপাদেয় জুজুটি পাকিস্তানী শাসক ও শোষক গোষ্ঠির হাতিয়ার হয়ে এক রকম সফল ভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে! এর কারন সুষ্পষ্ট, সামজিক স্তরে স্তরে ধর্মের নামে একটি সুবিধাভোগী শ্রেনী সব সময়েই বিরাজমান, ধর্মের দোহাই আর জিগির উঠলেই একধরনের স্বার্থগত একাত্মতায় রাস্ট্রের সর্বোচ্চ অংশের সাথে এদের অতিদ্রুত যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে যায়, তাতে যেমন রাস্ট্রিয় শোষক গোষ্ঠি ও স্বার্থান্বেশী গোষ্ঠির বিপদতারন ঘটেছে, একই সাথে “পোয়াবারো” অবস্থা হয়েছে সামাজিক স্তরে স্তরে যুগাযুগ সক্রিয় থাকা ধর্ম ব্যাবসায়ীদের, মার্কিনী পরিভাষা, “উইন উইন কন্ডিশন” এর বাস্তব উদাহারন! এ যেন সেই ৫৪ ধারা, যাতে সন্দেহ করে মানুষ কে জেলে পোরা হয়, সব বিরোধী দলই এর সমালোচনা করে, কিন্তু ক্ষমতায় গেলেই আবার সেটাকেই আঁকড়ে ধরে টিকে থাকে! দুঃখের বিষয় গৌরব্জ্বল রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশেও সেই হাজার বছরের ঘাড়ে চাপা সিন্দাবাদের বুড়ো "জনগণের ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাত লাগতে পারে" বা “ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত” বাক্যটি শাসক শ্রেনী বার বার ব্যাবহার করে তার ফায়দা লুঠেছে, তার সাথে পোঁ ধরেছে সব সময়েই আগের বারের শাসক দল, সাথে ধর্ম ব্যাবসায়ীরা, সদলবলে! যার কারনে দাউদ হায়দার, আহ্ মেদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ বা তাসলিমা নাসরিনকে রাস্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় মূরতাদ উপাধিতে ভুষিত হতে হয়েছে! তাদের কারো কারো বাংলাদেশ কে চিরদিনের মতো ছাড়তে হয়েছে! যে দেশে এখন ও ব্রথেল রয়েছে, রাস্তায় যেখানে এখনও গনিকাদের ভীড়, জননেতৃবৃন্দের কেউ কেউ রাতে দিনে মদ্য পান করেন বলে প্রচারিত, যেখানে এখনও সাধারন মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয় নি, সেখানে কি করে “ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত” অপরাধের দায়ে মানুষ কে এক তরফা বিচার করে দন্ড দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে? এই “ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত” এর খড়্গ বা স্বার্থান্ধ গোষ্ঠির শেষ নিদান এখন ব্লগারদের ঘাড়ে ফেলতে চাচ্ছে রাস্ট্রীয় ও তাদের দোসর বিরোধী এবং আনুসাঙ্গিক পোএর দল ধর্ম ব্যাবসায়ীরা! তারা তাদের নিশ্চিত পতন ও পরাজয় আঁচ করতে পেরেই এই নিদান ধরেছে তাতে কোনই সন্দেহ নেই! যুগাযুগ ধরে পেটে ক্ষুধা, মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ইত্যাদি যেখানে জনগোষ্ঠির সহ্য করা ডাল-ভাত হয়ে গেছে, সেখানে “ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত” যদি কেউ সাধ করে পেয়ে যায়, মানে বর্তমান প্রজন্মের ভাষায় “খেয়ে যায়”, তাতে দেশ বা জাতির কিচ্ছুটি এসে যাবে না, এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ ধোপে টেকে না! ব্লগ যারা লেখেন তারা তো ধর্মান্ধদের থেকেও বেশী পাগল-ছাগল নন, তারা দেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য, ধর্মের প্রতি তার মনোভাব, মানুষের মানসিকতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই লিখে থাকেন, তাই যেই যা লিখুন না কেন তার ভেতর আনূবিক্ষনিক পরিক্ষার মাধ্যমে “ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত” আবিস্কার করা মানা যায় না, মনে হয় সহসাথী ব্লগাররাও মানবেন না! তাই সর্বমহলের কাছে আমার সুষ্পষ্ট আবেদন ও হুশিয়ারী, প্লিজ, আর কখনও কোন লেখা নিয়ে “ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত” করেছে বলে চ্যাঁচামেচি না করে পারলে লেখার মাধ্যমে তার উত্তর দিন, কিন্তু নিজে দেশ ও জনগণের প্রতিনিধি সেজে তার বিচার করতে যাবেন না! কাউকে জবাই করে হত্যা করবেন না! খবর রয়েছে যে আগামী কাল ব্লগারদের নাস্তিকতার বিরুদ্ধে তথাকথিত "ওলামা মাশায়েখরা" নাকি দেশ ব্যাপী আন্দোলনে যাবেন (পেছনে বুঝতেই পারছেন সব স্বার্থান্বেশী মহলের প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে তাতে!) পরিশেষে কবি নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় কিন্তু স্বল্প উপস্থাপিত (বোধগম্য কারনে) একটি কবিতার কিছু অংশ দিয়ে শেষ করছি- জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জ্বালিয়ে খেলছো জুয়া। ছুলে তোর জাত যাবে জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া। হুকুর জল আর ভাতের হাড়ি ভাবলি এ তুই জাতির জান তাইতো বেকুব করলি তোরা এক জাতিকে একশ খান!  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।