আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুত্ব ও স্মরণশক্তি



বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতন্গের মত সৃতি শক্তি ও শুরু করে দেয় বিদ্রোহ । কে না চায় যৌবনের তীক্ষ্ণতা ধরে রাখতে ! বিভিন্ন ধরনের মস্তিষ্ক উন্নয়নকারী খাদ্যাভ্যাস যেমন ‘তৈলাক্ত মাছ’ এর পাশাপাশি একটি শক্ত মজবুত সামাজিক বন্ধন- স্মৃতি শক্তি রক্ষা করতে এমন কি বৃদ্ধিতে ও সহায়তা করে । ২০০৮ ‍সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোরণিয়া অঙ্গ রাজ্যে ৪ বছর ধরে ২২০০ জন ৭৮ বছর বয়ষ্কা মহিলার ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে জোরালো সামাজিক বন্ধন যাদের নেই তাদের তুলনায় য়াদের আছে তাদের স্মৃতি ভ্রম হবার সম্ভাবনা শতকরা ২৬ ভাগ কম । জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানী ১৪৭ জোড়া যমজ পুরুষ সন্তানের ওপর ২৮ বছর ধরে গবেষণা করে দেখেছেন যে -প্রথম জীবনের কায়িক পরিশ্রম ও সামাজিকতা পরবর্তিতে স্মৃতি ভ্রম হবার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমিয়ে থাকে । হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় করেছে মধ্যবয়সীদের নিয়ে গবেষণা এবং সেখানে ও দেখা গিয়েছে য়ে পন্চাশ এবং পনচাশোর্ধ বযস্ক মানুষ য়ে যত বেশী সামাজিক কর্ম কান্ডে লিপ্ত থাকবে, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব পরিবেষ্টিত থাকবে, স্মৃতি শক্তি লোপ পাবার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে ।

শুধু মাত্র বয়স্ক আর মধ্যবয়সীদের স্মৃতি শক্তি রক্ষাতে ই নয়! কম বয়সে ও স্মৃতি শক্তি ও বুদ্ধি বৃত্তির বৃদ্ধিতে বন্ধুবান্ধব বা সামাজিকতার ভূমিকা কম নয় !ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে ৭৮ জন কলেজ ছাত্রকে নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সামাজিক কর্ম্ কান্ডে লিপ্ত থাকা আর তথাকথিত বুদ্ধি বৃদ্ধির কৌশল যেমন ধাঁধা,মানসাঙ্ক ,শব্দ গড়ার খেলা --সমান ভূমিকা রাখে । তুলনামূলকভাবে টেলিভিশনের কোন ভূমিকাই নেই । এখন কথা হ’লো কিভাবে এটা কাজ করে ? এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিটাই বা কী ?আমরা সাধারণ গ্ঞান দিয়েইতো বলতে পারি যে মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদানের জন্য মস্তিস্ক অলস থাকার সুযোগ পায়না কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় । হয় মস্তিষেকর ব্যায়ম। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতন্গের মত এই ব্যায়ামই মস্তিস্ক কে রাখে সুস্থ করে দীর্ঘ্ জীবি ।

হ্যাঁ , ভাবের আদান প্রদান মস্তিষ্কের কোষে এক ধরনের নতুন যোগাযোগ বা কানেকশন তৈরি করে যা ‘প্রোটেক্টিভ রিজার্ভ’ হিসাবে কাজ করে । ভবিষ্যতের ক্ষয়িষ্ণুতা হাত থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া সুস্থ স্বাভাবিক সামাজিক জীবন, ভাবের আদান প্রদান মানুষের দেনন্দিন জীবনের দু:খ, কষ্ট ও মানসিক চাপের হাত থেকে রক্ষা করে । এই মানসিক চাপ বা টেনশনের ফলে মানুষের দেহ থেকে কোরটিসল নামে একটি হরমোন নি:সৃত হয় ,যা কি না স্নায়ু বিশেষ করে -শিক্ষা গ্রহণ ও স্মরণ শক্তির জন্য নির্ধারিত মস্তিষ্কের ‘হিপপোক্যামপসাস’ নামক এলাকার জন্য ক্ষতিকর । ২০০৫ সালে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সামাজিক কর্ম্ কান্ডে জড়িতদের শরীরে ‘ ইন্টারলিউকিন ৬’(IL6) নামক একটি পদার্খ্ কম থাকে যা কি না, আলজাইমার, হৃদরোগ ও ক্যন্সার রোগীদের শরীরে পাওয়া যায় ।

দেখেলেন তো, আপনার বন্ধু আপনাকে কিভাবে আগলে রাখছে ! বন্ধুত্বের সুফল পেতে হ’লে মুখোমুখি হ’তেই হবে দেখা হ’তেই হবে এমন কোন কথা নেই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে টেলিফোন বা ইমেইল একই ভাবে কাজ করে । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামাজিকতার কত পথ ই না বের হ’য়েছে । গবেষণায় এ ও দেখা গিয়েছে যে ফেসবুক ব্যবহারকারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নিজের ওপর আস্থা বহুগুণ বেড়ে যায় মানুষ সামাজিক জীব । সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ একাকীত্বের শৃঙ্খল থেকে বের হ’য়ে এসে হ’যেছে দলবদ্ধ।

হ’য়েছে সংঘবদ্ধ । হ’য়েছে সভ্যতার সূচনা । আজ সভ্যতার চরম শিখরে এসে কর্ম্ ব্যস্ত যন্ত্র মানব আবার একাকীত্বের শৃংখলে। আমরা সবাই আর ও বেশী সচেতন হ’তে পারি । আত্মিয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবার সাথে যোগাযোগ রাখা, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করা , প্রতিবেশীর সুখে দু:খে পাশে দাঁড়াণোর মত হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারি ।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত্ , শেষ মুহূর্ত্ পর্য্ন্ত বাঁচার মত বাঁচতে পারি । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।