মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সিরিয়ায় পশ্চিমাদের সামরিক হামলার হুমকির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বের আর্থিক ও পণ্যবাজারে।
এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে গতকাল বুধবার। ভারতের বিহিত মুদ্রার দর আরও কমে যাওয়ায় প্রতি ডলার ৬৮ রুপির ওপরে চলে গেছে। জ্বালানি তেল ও সোনার দামে উল্লম্ফন ঘটেছে।
অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গতকাল বুধবার প্রতি ব্যারেল ১১৫ ডলারের ওপরে চলে গেছে, যা কিনা ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সিরিয়ায় সামরিক হামলা হলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য বিশাল বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, যা কিনা জ্বালানি তেল উত্তোলনকে ব্যাহত করতে পারে। তেলের স্বাভাবিক উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় আগাম বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম।
তেলের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদক দেশ লিবিয়া ইতিমধ্যে আশঙ্কা করেছে যে সিরিয়ায় মার্কিন হামলা হলে তেলের উত্তোলন ৬০ শতাংশ কমে যাবে।
আসন্ন সামরিক হামলার প্রভাবে গতকাল এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রতিফলিত হয় বড় ধরনের দরপতনের মধ্য দিয়ে। এশিয়ার প্রধান শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের নিক্কি সূচক দেড় শতাংশ ও সিউলের কসপি সূচক ১ দশমিক ৩২ শতাংশ কমেছে।
দিনের শেষে জাকার্তা ও তাইপের শেয়ারবাজার অবশ্য ঊর্ধ্বমুখী হতে পেরেছে। তবে সাংহাই, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর ও সিডনির বাজার শেষ হয়েছে দর পতনের মধ্য দিয়েই।
ইউরোপের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে লন্ডনের এফটি-১০০ সূচক, ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স সূচক ও প্যারিসের ক্যাক সূচকের দশমিক ৩৫ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২০ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে দিনের প্রথমার্ধে।
আগের দিন মঙ্গলবার যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার আক্রমেণর বিষয়ে প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করে, তখন এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে লেনদেন শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই তাৎক্ষণিক প্রভাবটা সরাসরি গিয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই।
নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ডো জোনস সূচক ১ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ন্যাসডাক ২ দশমিক ১৬ শতাংশ পড়ে যায়।
আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছেড়ে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ায় এই মূল্যবান ধাতুর দামও বেড়ে গেছে। গতকাল প্রতি আউন্স সোনার দাম ২৭ ডলার বেড়ে এক হাজার ৪২০ ডলারের ওপরে চলে গেছে, যা মে মাসের পর সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারের সূত্র ধরে ভারতে গতকাল সোনার দর আরেক দফা বেড়েছে। ১০ গ্রাম পাকা সোনার মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬২২ রুপি, মঙ্গলবার যা ছিল ৩৩ হাজার ৭০০ রুপি আর সোমবার এই দর ছিল ৩০ হাজার ৯৮৫ রুপি।
ভারতের মুদ্রা রুপি এমনিতেই বিরাট চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে। সিরিয়ায় আক্রমণের হুমকি দেখা দেওয়ায় এই দরপতন ত্বরান্বিত হয়েছে। গতকাল দিনের প্রথমার্ধেই ভারতের আর্থিক বাজারে প্রতি ডলার ৬৮ রুপি অতিক্রম করে যায়। দিনের শেষে প্রতি ডলার দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৮০ রুপিতে।
রুপির দর স্থিতিশীল করতে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) গতকাল বাজারে ডলার বিক্রি করে জোগান বাড়ানোর চেষ্টা করে। তবে তাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ডলারের পাশাপাশি এখন অন্তত ১০০ বৈদেশিক মুদ্রার তুলনায় ভারতীয় রুপির দর দুর্বল হয়ে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি ও দ্য হিন্দু। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।