জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
পর্ব -০৩
পর্ব -০৫
মন-ভোলানো দর্শক থেকে মগজ খাটানোর দর্শক : আরও জ্ঞানের নেশা
এবার কিছু জ্ঞানের কথা বলার আগে পৃথিবী বিখ্যাত দুটি চলচ্চিত্র দেখে নিন। প্রথমটি হল প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের “হীরক রাজার দেশে” এবং আরেকটি হল বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জ্যামস ক্যামেরনের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র “টাইটানিক”।
কিভাবে দেখবেন চলচ্চিত্র ?
এতকাল আপনি মনের মাধুরী মিশিয়ে চলচ্চিত্র দেখেছেন, মগজ খাটান নি। এবার মগজ খাটিয়ে চলচ্চিত্র দেখবেন। দর্শক হিসেবে নয়, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্র দেখবেন।
সেভাবে দেখার একটা সাধারণ নিয়ম আছে।
অনুশীলনী :
০১) কাগজ কলম নিন।
০২) সত্যজিৎ রায়ের “হীরক রাজার দেশে” চলচ্চিত্রটি আপনার ডিভিডি প্লেয়ারে চালু করুন।
০৩) প্রথম দৃশ্য থেকে ধীরে ধীরে দেখুন। বারে বারে থামুন।
০৪) শটগুলো লিখে ফেলার চেষ্টা করুন।
একবার ক্যামেরা চালু হওয়ার পর ক্যামেরা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত যে অংশটুকু গৃহীত হয়, সেটাই একটি শট।
শটগুলো লেখার ক্ষেত্রে ক্যামেরা দূরত্ব , ক্যামেরা কোণ ও ক্যামেরা সঞ্চালন বিবেচনা করুন।
বস্তু থেকে ক্যামেরা দূরত্বের উপর ভিত্তি করে শটের অনেকগুলো নাম দেয়া হয়েছে।
যেমন :
ক্যামেরা দূরত্বের উপর ভিত্তি করে শটের বিভাজন :
০১) এক্সট্রিম লং শট (অতি দূরবর্তী শট) : একটা পুরো গ্রাম, প্রান্তর ইত্যাদি দেখানোর জন্য দূর থেকে যে শট নেয়া হয় সেটাই এক্সট্রিম লং শট।
এক্সট্রিম লং শট ছাড়া অন্য সব শট বোঝার জন্য মানুষের শরীর থেকে ক্যামেরা দূরত্ব বিবেচনা করা হয়। সেই দূরত্বের কারণে শরীরের কতটুকু ক্যামেরা ধারণ করা হচ্ছে সেটা বিবেচনা করে শটগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
০২) লং শট : ফ্রেমে একটি মানুষের পুরো শরীর আসবে। সেই সাথে মানুষটির পেছনের বেশ কিছু জায়গা এবং সামনে বেশ কিছু জায়গা ফ্রেমে থাকবে। এটাই লং শট।
০৩) ফুল শট : মানুষের পা থেকে মাথা পর্যন্ত শট। মানুষের সামনে কোন দৃশ্য বা ফোরগ্রাউন্ড এই শটে থাকে না। লং শটের ফোরগ্রাউন্ড বা সামনের জায়গা ছেটে দিলেই সেটা ফুল শট হয়ে যায়।
০৪) মিড লং শট : পায়ের পাতার উপর থেকে ও হাঁটুর নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে মিড লং শট বলে।
০৫) মিড শট : হাঁটুর উপর ও কোমরের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে মিড শট বলে।
তাছাড়া বসা অবস্থায় যে কোন শটকেও মিড শট বলে।
০৬) মিড কোজ শট : মিড শটে একটি মানুষ না থেকে যদি একাধিক মানুষ থাকে তবে তাকে মিড কোজ শট বলে।
০৭) কোজ শট : নাভির উপর থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে কোজ শট বলে।
০৮) কোজ আপ : বুক থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে কোজ আপ বলে।
০৯) টাইট কোজ আপ : গলার নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে টাইট কোজ আপ বলে।
১০) বিগ কোজ আপ : থুতনি থেকে কপাল পর্যন্ত শটকে বিগ কোজ আপ বলে।
১১) এক্সট্রিম কোজ আপ : শুধুমাত্র ঠোঁট, চোখ বা গাল ইত্যাদির শটকে এক্সটিম কোজ আপ বলে।
ক্যামেরা কোণের উপর ভিত্তি করে শটের বিভাজন :
০১) হাই এঙ্গেল শট : আই লেভেল থেকে ক্যামেরা উপরে স্থাপন করে নিচের দিকে শট নিলে তাকে হাই এঙ্গেল শট বলে।
০২) লো এঙ্গেল শট : আই লেভেল থেকে ক্যামেরা নিচে স্থাপন করে উপর দিকে শট নিলে তাকে লো এঙ্গেল শট বলে।
০৩) স্ট্রেইট এঙ্গেল শট বা ফ্রন্ট এঙ্গেল শট : আই লেভেল বরাবর ক্যামেরা স্থাপন করে শট নেয়া হলে সেটা স্ট্রেইট এঙ্গেল বা ফ্রন্ট এঙ্গেল শট।
০৪) টপ শট : হাই এঙ্গেল শটের চূড়ান্ত অবস্থা হল টপ শট। একেবারে মাথার উপর থেকে শট নেয়া হলে তাকে টপ শট বলে।
ক্যামেরা সঞ্চালনের উপর ভিত্তি করে শটের বিভাজন :
ক্যামেরা সঞ্চালন ২ প্রকার : ০১) নিজের অক্ষের উপর ক্যামেরা সঞ্চালন, ০২) ক্যামেরার স্থান পরিবর্তন।
০১) নিজের অক্ষের উপর ক্যামেরা সঞ্চালন :
ক) প্যান : নিজের অক্ষের উপর ক্যামেরার আনুভূমিক সঞ্চালনকে প্যান বলে। আমরা যে রকমভাবে ডান থেকে বায়ে বা বা থেকে ডানে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাই, ঠিক সেভাবে ক্যামেরা এক পাশ থেকে অন্য পাশে সঞ্চালন করাকেই প্যান বলা হয়।
খ) টিল্ট আপ/ টিল্ট ডাউন : নিজের অক্ষ বরাবর ক্যামেরা নিচ থেকে উপরে উঠলে টিল্ট আপ এবং উপর থেকে নিচে নামলে টিল্ট ডাউন বলে। আমরা যেভাবে ঘাড় উচু করে আকাশ দেখি সেটাকে ক্যামেরা করলে টিল্ট আপ এবং আমরা যেভাবে ঘাড় নিচু করে মাটি দেখি সেটাকে ক্যামেরা করলে টিল্ট ডাউন বলি।
০২) ক্যামেরার স্থান পরিবর্তন:
ক) ডলি শট : চাকা লাগানো প্লাটফর্মের উপর ক্যামেরা ও ক্যামেরাম্যানকে বসিয়ে সেই প্লাটফর্মকে চলন্ত করে শট নিলে সেই শটকে বলা হয় ডলি শট।
খ) ট্রলি শট : কোন ট্রলির উপর ক্যামেরা ও ক্যামেরাম্যানকে বসিয়ে শট নেয়া হলে সেটাকে বলে ট্রলি শট।
গ) ট্রাকিং শট : ডলি শট বা ট্রলি শট নেয়ার ক্ষেত্রে প্লাটফর্মের চাকার নিচে কোন লাইন থাকে না, কিন্তু ট্রাকিং শটের ক্ষেত্রে রেল লাইনের মতো ট্রাক বসানো হয়।
সাধারণত কোন অমসৃণ স্থানে ক্যামেরা সঞ্চালনের জন্য ট্রাক ব্যবহার করা হয়।
ঘ) ক্রেন শট : ক্রেনের উপর ক্যামেরা বসিয়ে শট নেয়া হলে তাকে ক্রেন শট বলে।
অধুনা সকল টেলিভিশন প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ক্রেন ব্যবহার না করে জিব আর্ম ব্যবহার করা হয়।
ঙ) এরিয়াল শট : হেলিকপ্টার ব্যবহার করে যেই শট নেয়া হয় তাকে এরিয়াল শট বলে।
(অফ টপিক : আমার লেখা "কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? " নামের একটি অপ্রকাশিত বই থেকে লেখাটি দেয়া।
এই পোস্টটি অনেক বড় হয়ে গেল বলে দুঃখিত। )
পর্ব -০৩
পর্ব -০৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।