২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসের ১৯ তারিখ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের গোলাগুলিতে শিশু রাব্বি নিহত হওয়ার ঘটনায় টানা ২৮ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম কৃষি শিক্ষার বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে প্রশাসনের বাহানার কাছে হার মেনে সেশনজোটের কবলে পড়তে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঐ ঘটনার দিন (রাব্বি নিহত হওয়ার দিন, ১৯ জানুয়ারী/২০১৩) ছাত্রলীগ বাকৃবি শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে বাকৃবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলতে বিলম্ব হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
যদিও বাকৃবি কর্তৃপক্ষ নিহত শিশু রাব্বির পিতাকে ২ লক্ষ টাকা ও অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালযে চাকুরী দিয়ে ওই ঘটনার সমাধান করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উপযুক্ত পরিবেশ থাকলেও না খোলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী বহুদিন পর সেশনজোটের কবলে পড়তে যাচ্ছে।
এদিকে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহব্বায়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসলাম আলী জানান, ঘটনায় ভাংচুরকৃত ৭টি হল মেরামতের জন্য কিছু সময় লাগছে। হল মেরামত হলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা না করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সব হল দখল নেবে।
তাই ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই ক্যাম্পাস খুলতে দেরি করছে প্রশাসন।
বাকৃবি ছাত্রদলের কয়েক নেতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে যে কোনো মূল্যেই হল দখল নেবে ছাত্রদল। এইটা তাদের অধিকার, তারা ক্যাম্পাসের বৈধ ছাত্র। এছাড়া তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকার জন্য সকল প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদ পেতে লবিং গ্র“পিংয়ে মরিয়া হয়ে ছুটছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
পদ প্রত্যাশায় উত্তরবঙ্গের মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে মঞ্জু, কুমিল্লার সাইফুল, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাবু, ফরিদপুরের শফিক জোর লবিং চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বলেছেন, খুব শীঘ্রই আহ্বায়ক বা নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া ধারনী করা হচ্ছে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হলে ২৪ ফেব্র“য়ারীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত (২০/০২/২০১৩) কমিটি হওয়ার মত কোন লক্ষণ ই দেখা যাচ্ছে না বলে কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এছাড়া আরেকটি সূত্র জানিয়েছে , এই মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোন সম্ভাবনাই নেই।
কয়েক শিক্ষার্থী জানান, বাকৃবিতে এবার সেশনজট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অদক্ষতার মাশুল দিতে হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে। এদিকে গত ১২ ফেব্রয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালী দল’ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পর ক্যাম্পাস খোলার হিসেব-নিকেশ কিছুটা পাল্টে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্থানীয় এমপির জামাতা হুমায়ুন কবিরকে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগের বিরোধীতে করে তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ‘সোনালী দল’। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ‘সোনালী দল’ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর শিক্ষকদের আবার নতুন করে আন্দোলনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে কর্মকর্ত-কর্মচারি নিয়োগ ও টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন নিয়োগ ও টেন্ডারের কার্যক্রম নির্বিঘেœ করার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হচ্ছে না বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে হল এবং ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাস খোলার উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে না খোলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
আর ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. রফিকুল হক জানান, উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অতি শীঘ্রই ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হবে।
এদিকে আজ ২১/০২/২০১২ সকাল ১০টায় সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে একটা মানববন্ধন ও সমাবেশের (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু যা শুরু হওয়ার কথা) কর্মসূচীর ঘোষণা করা হয়েছে ছাত্রদের পক্ষ থেকে । এতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদি ছাত্রদল ও ছাত্রফ্রন্ট সংহতি প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য যে এর আগে গত ১৯/০২/২০১২ ইং তারিখে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও এর আগের দিন একটা মানববন্ধন কর্মসূচী করা হয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।