কবিতা/ গল্প/ উপন্যাস/ প্রবন্ধ/ অন্যান্য
বিস্তৃর্ণ পথের সীমানা ভুলে আমাদের পরিচিত প্রিয় শহরে যেদিন প্রথম পূণিমার আলো পৌঁছে ওই দিন সকালেই ফূটপাতে মুক্ত ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে কালো কুকুরটির করুণ মৃত্যু ঘটে। ভয়াবহ সেই মৃত্যুর ইতিহাসকে সঙ্গি করে কিভাবে পূণিমার আলোয় বিকশিত হয়েছিলো পরিচিত শহর? দীর্ঘ দিনে অন্ধকারের গাঢ়তায় মানবিক দ্বন্দ ও যাপিত দীর্ঘশ্বাসের ভেতরেই কিভাবে সে পূর্ণিমার আলো ক্রমাগত জ্যোৎস্নায় মুখরিত হয়েছিলো এইরূপ সংজ্ঞা বিহীন অসংখ্য উদ্ভট প্রশ্নের ভেতরেই আমাদের সুপ্রিয়ার শহরে পর্দাপণ।
অথচ কুকুরটি এক সময় এই শহরের প্রিয় ছিলো। যখন অভিভাবকহীন জরাজীর্ণ অন্ধকারের শহরকে আপন করে নেয়ার মতো কেউ ছিলো না। তখন স্বেচ্ছাসেবী এই কালো কুকুরটি পুরো শহর পাহারা দিতো।
শহরের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অসভ্য টহল পুলিশ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনের নৈশ প্রহরী ছিলো না তখন ছিল এই কুকুরটি। এই কুকুরটির উপর নির্ভর ছিলো শহরের সকল মানুষ। কুকুর তার বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধের কারণে কখন যে শহরের মানুষ গুলোর প্রিয় হয়ে উঠে তা কুকুরটি বুঝতেই পারেনি। প্রতিদিন চার বেলার প্রয়োজনীয় খাবার নির্ধারিত স্থানে বসেই কুকুরটি খেতে পেত। আর এই খাবার সরবরাহের জন্য এই শহরে প্রচলন করা হয়েছিলো একটি রুটিন।
অত্যনত্ম সৌখিন খাবার, শহরের সাধারন মানুষগুলোর ভালোবাসায় কালো কুকুরটি যখন পুরো শহরের হৃদয় দখল নিয়ে ছিলো ঠিক সেই মুহুর্তের একটি সকালে অকস্মাৎ পুণির্মার আলোয় বিকশিত হয়ে উঠে পুরো শহর। অন্ধকারের গাঢ়তায় পূর্ণিমাকে স্বাক্ষী রেখে এই কালো কুকুরটির মৃত্যু। কুকুরের মৃত্যুতে শোকাহত শহরে সেদিন কেউ কুকুরটির দিকে দৃষ্টিপাত না করে পূর্ণিমাকেই নিয়ে ব্যসত্ম হয় উঠে। এই ব্যসত্ম দৃশ্যের ভেতরেই আমাদের সুপ্রিয়ার শহরে আগমন।
বয়সে দুর্বিসহ সাহসীকতার তরুণী সুপ্রিয়ার বুকে তখন ১৮ বছরের দূরনত্মপনা ।
নিষ্পাপ গায়ের ধুলি, মমতাময়ী মায়ের স্নেহ, ধার্মিক পিতার দ্বিধার শাসন আর অর্ধপাগল ভাইয়ের বেড়াজাল মুক্ত হয়ে কেন সুপ্রিয়া এই শহরে আসলো? তার সঠিক উত্তর না জানা তরুণী কেবল দৃশ্যমান শহরে পৌঁছেই প্রথম চমকেই ব্যসত্ম হয়ে উঠা কিছু মানুষের দৃশ্য এবং কুকুরের মৃত্যুকেই অনূভব করে। অনুভব করতে পারে না প্রিয় গাঁয়ের সুবজ বেষ্টনীতে ঢাকা চির সবুজ শৈশব। সুপ্রিয়াও চেয়েছিলো স্বাভাবিক নিয়মের মোহে আটকে পরিচিত অন্য দশটা বান্ধবীর মতো একজনের হাত ধরে বেঁচে থাকতে। স্বভাবত গাঁয়ের মেয়ে সে। তার কাছে বেঁচে থাকা মানেই, পুরুষ শাসিত শাসনের কবলে সংসার; ছেলে-সনত্মান।
অথচ সেই স্বাভাবিক মোহকে এড়িয়ে তাকে পালিয়ে আসতে হলো এই শহরে। কিন্তু শহরে কে তার দায় ভার নেবে? কোথায় তার গনত্মব্য বুঝতে না পারলে ও সুপ্রিয়া অবশেষে সকালেই শহরে পৌঁছে স্বাভাবিক নিয়মের চলিত শহর মুখি বাসে চড়ে।
সুপ্রিয়া। মায়ের দেয়া খুব আদরের নাম। পূর্ণিমার চাঁদের অবয়বের চেহারা, দীর্ঘচুল, মায়াময় নন্দন চক্ষুযুগলের সাথে পাল্লা দিয়ে পূরিপূর্ণ যৌবনকে ধারণ করে সুপ্রিয়া নিজের অজানেত্ম গায়ের মানুষের প্রিয় হয়ে উঠে।
তাকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে হিন্দি সিনেমার ঐশ্বরীয়া প্রিয় অসংখ্য তরুণ। কিন্তু একদিন সুপ্রিয়ার উপরে এক দৈত্যের কু-দৃষ্টি চলে আসে। একদিন পিতা প্রয়োজনে গ্রামের বাইরে যাওয়ায় সুপ্রিয়ার জীবনে সৃষ্টি হয় এক সর্বনাশের গল্প।
সেই সন্ধ্যায় গাঁয়ের দৈত্য খ্যাত জমিদার পুত্র সজীব তার দলবল নিয়ে হানা দেয় সুপ্রিয়ার গৃহে। বৃদ্ধা মায়ের আহাজারী বাঁধা উপেক্ষা করে তারা মাকে বেঁধে ফেলে।
বৃদ্ধা মায়ের সামনে সুপ্রিয়াকে আটকে প্রথমে কৌশলে পরনের সেলোয়ার ছিড়ে ফেলে দেয় দূরে...। দীর্ঘ আঠারো বছরের পরিচর্যা, পরিতৃপ্ত যৌবনের প্রতীক ধব-ধবে র্ফসা গোল-গাল সত্মন যুগল বেরিয়ে আছে দৈত্য দলের সামনে। কি আছে এই চামড়ার আবরনে ঢাকা সত্মন যুগলে। কেন দৈত্যের ক্রমাগত হাতের পরশে তাকে অস্থির করে তুলছে বুঝতে পারেনা সুপ্রিয়া। তারপর দৈত্য-দানব সজীবের নিষ্ঠুর হাত নিচ থেকে খুলে দেয় প্যান্টের গিট।
সুপ্রিয়া হয়ে উঠে জন্ম শরীরের অন্য মানবী। মহাকাশের শুভ্র উপগ্রহের নিকটে চিহ্নহীন অন্ধকার সুড়ঙ্গ বেয়ে ঢুকে পড়ে কালসাপ। দৈত্যের ইশরা ইংগিতে ক্রমাগত ঝপড়াতে থাকে বিষধর এই সাপ। একদিকে অজানা অনুভূতি, শিহরণ, উষ্ণতা। অন্যদিকে ঘৃণার নিম্নসত্মরের বিমুগ্ধ অভিশাপে নির্বাক সুপ্রিয়া একসময় বুঝতে পারে সাপের মুখ থেকে বের হয়ে আসে সাদা বিষের স্রোত।
দেহময় বিষাক্ত হয়ে উঠে তার। সজীব উঠে পড়ে সফল সরল কোন সুপুরুষের রূপ ধরে। তার দলের অন্য জন এসে একই দৃশ্যে অভিনয় করে। না তার আর কিছুই মনে নেই। মায়ের মতে ঠিক এই ভাবে ৭টি দৈত্য দানবের বিষে নীল হয়ে উঠে সুপ্রিয়া।
আর ওই ৭ জন হয়ে উঠে সুপুরুষ। কাল সাপের বিষ শরীরে ধারণ করে সুপ্রিয়ার যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে হাসপাতালের বেডে ভর্তি। বিমর্ষ চেহারার মা, বাবা, ভাই। সুপ্রিয়া বুঝতে পারে ঐতিহাসিক দৈত্যের ঘটনা প্রবাহ তার কপালে এঁকে দিয়েছে একটি কলংকের তিল। এই তিলের বিরুদ্ধে পরের দিন তাকে মুখোমুখি হতে হলো বির্বণ কুৎসিত চেহেরার এক পুলিশ কর্মকতার।
এই মুখোমুখি তার জন্য আরো বেশী ভয়াবহ হয়ে উঠে। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষী ও অর্থের কারণে থানা অভিযোগ গৃহিত হলো না। যা হলো পুলিশের কাছে যাওয়ার অপরাধে দৈত্যের হাতে পুণ:রায় শরীরিক নির্যাতন। পুন:রায় বিষক্রিয়ায় নীলাভ হওয়ার পাশা পাশি বাড়ী পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা।
না কেউ আর এই দৈত্যের বিপরীতে কথা বলতে পারে না।
পারে না সুপ্রিয়া ও তার পরিবার। সুপ্রিয়া হয়ে উঠে বিচ্ছিন্ন। সামাজিক মুখোশে বেঁচে থাকা মানুষ রূপি প্রাণী গুলোর অবহেলা, অপালাপে বিরক্ত হয়ে সুপ্রিয়া বুঝতে পারে সব সমস্যা তাকেই নিয়ে। সমস্যা সমাধানের উন্নত পথে যাত্রায় সুপ্রিয়ার গৃহ থেকে পালায়ন।
সকালেই পৌঁছে এই শহরে।
বাস থেকে শহরের মাটিতেই প্রথম পা রাখার সাথে সাথে পূর্ণিমার আলোই বিকশিত হয়ে উঠে এই শহরের অলিগলি। পূর্ণিমার আলোর ঝিলিক কুকুরের নিকটে পৌঁছতেই আমাদের এই প্রিয় কালো কুকুরটি বুঝতে পারে তার গনত্মব্য এবং আগামীর ঠিকানা। এই রূপ সহস্র পূণিমার ইতিহাস তার জানা বলে কুকুরটি সহ্য সীমানার বাইরে পৌঁছে। কুকুর সুচিনিত্মত ভাবে পান করে ক্লোরোফর্ম মেশানো এক তৃপ্তির তৃষ্ণার শরবত। আত্মহত্যার সুন্দরতম সড়ক দিয়ে কালো কুকুরের মৃত্যু ঘটে।
প্রাণহীন দেহ নিয়ে কুকুর পড়ে আছে ফুটপাতে। আজ কারো সে দিকে দৃষ্টি নেই।
অন্ধকারের প্রিয় শহরের পূর্ণিমাকে নিয়ে ব্যসত্ম হয়ে উঠে ওরা । আজকের পূণিমার আলো সুপ্রিয়া। যদিও সুপ্রিয়া আজ কালো কুকুরটির মতো প্রিয়।
হাজারো দু পায়ের প্রাণী তার চারি পাশে দাঁিড়য়ে তাকে অভিবাদন দিয়ে পূর্ণিমা ছুটে যাচ্ছে কোন এক গনত্মব্যের দিকে। যাকে সকলেই বেশ্যা পল্লী রূপে চিহ্নিত করে ওটাই সল্প সময়ে তার গনত্মব্য হবে। তারপর ক্রমাগত অন্ধকার তাকে বিলীন করবে। কেবল কালো কুকুরটির মতো অবহেলায় প্রাণহীন দেহ দিয়ে পড়ে থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।