মস্ত বড় অন্ধকারে স্বপ্ন দেবে ডুব......
উঁচু কোন এক পাহাড়ের উপর দৌড়াতে দৌড়াতে একদম শেষ মাথায় তখন...পেছন থেকে কেউ একজন চিৎকার করে ডাকছে আমাকে...খুব চেনা কোন গলা...আমি থামতে চাচ্ছি কিন্তু কোন অপরিনামদর্শী শক্তি টেনে নিয়ে যাচ্ছে জানি না...আওয়াজটা আরো জোরে শোনা যাচ্ছে ...ম...হু...য়া.........ম...হু...য়া...এবার ধড়মড় করে উঠে বসলাম বিছানায়...'রোজ সকালে তোর এলার্মের জ্বালায় ঘুমাতে পারিনা....ওটা বন্ধ কর এখন... ' আগুন গলায় সিমি বলে উঠল...রোবটের মত মোবাইল টা বন্ধ করলাম। খেয়ালই করিনি যে মোবাইলটা কানের কাছে এত জোরে বাজছিল। এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম.!!..কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম...মোবাইলের এলার্মটাকে নিশ্চিত ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক ভেবেছিলাম। সিমির গলার টেম্পারেচার যতই বেশি হোক ...প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগছিল আমার। কি যে সব ছাইপাশ স্বপ্ন দেখছি ইদানিং...গতকাল রাতে ব্যাপক নাচানাচি করে ঘুমাতে আসলাম ...অনেক রিলাক্সড মুডেই তো ছিলাম...তবু কেন এইসব দৌড়াদৌড়ি মার্কা স্বপ্ন দেখি কে জানে...আবার তলিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।
শীতের সকালের এই জিনিষটা অসাধারণ লাগে আমার। একটু একটু ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কম্বল মুড়ে ঘুম দেয়া...জো..সসস...ইসস কেউ যদি শুধু ঘুমানোর জন্য চাকরী দিত ...শুধু ঘুম আর ঘুম!!!.. বারোটার সময় ঘুম ভাংল আবার হলের খালার ডাকে...'আপা দশটা টাকা দেন না'...উফফফ অসহ্য এই রকম মিষ্টি ঘুমের মাঝে কেউ বাগড়া দিলে কেমন লাগে!মেজাজ খারাপ করে টাকা দিয়ে বিদায় করলাম খালাকে...এরপর এপাশ ওপাশ করতে করতেও আর ঘুম আসল না। ধ্যুত্তেরিকা...বলে কটা বাজে দেখার জন্য মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি বন্ধ...মনে পড়ল সিমির চিৎকারের কথা। হাই তুলে মোবাইল অন করতেই প্রায় ৬-৭ টা ক্ষুদ্রবার্তা আসল। হ্যাপী নিউ ইয়ারের উইশ ...একটা ক্ষুদ্রবার্তা শুধু নিশা'র।
'দুপুর ১২টায় আমার নিউজ'...মোবাইলে তড়াক করে টাইম দেখলাম। ১২টা ২৪। এরপর ভোঁ দৌড় দিয়ে টিভি রুমে। বৈশাখী খুলতেই হামদ ও নাদ গাচ্ছে একটা বুড়া বেটা। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ করে বেরিয়ে আসলাম টিভি রুম থেকে।
নিশার প্রথম অন-এয়ার ছিল গত সপ্তাহে। সেটাও মিস করেছিলাম ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে। উফফফ কেন যে সব এক্টুর জন্য মিস হয়ে যায়। অলস পায়ে বিছানায় এসে থিতিয়ে পড়লাম আবার।
০১/০১/১০...বাইনারী দিন।
শুয়ে শুয়ে ক্ষুদ্রবার্তাগুলোর জবাব দিলাম। তানিয়া,দাদা,বান্দর আর আমার বাচ্চা চারজনের জন্মদিন আজকে। দিদির মুখবইতে গতকাল রাতেই উইশ করেছি বাচ্চাকে। বাকি তিনটার ২টা করা হয়নি গতকাল। বাবা ফ্লেক্সি করার পর সেটা করে ফেললাম......এরপর অনেক চিন্তা করেও কিছু করার পেলাম না।
কম্পিবাবা কে অন করলাম এক আঙ্গুলের খোঁচায়। মুখবইতে অনেক বিজ্ঞপ্তির মাঝে দেখলাম হারিয়ে যাওয়া এক বন্ধু ক্ষুদ্রবার্তা পাঠিয়েছে। ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই প্রায় ২বছরের মত। আমার সাথে মুখবইতে ও যুক্ত নয় তবু তিন অক্ষরের ক্ষুদ্রবার্তা দেখে খুবই অবাক হলাম। হায়রে আধুনিক ভদ্রতা!!! h n y টাইপ করে পাঠিয়ে দিব কিনা ভাবছি তখন হঠাৎ নিলু এসে জোরাজুরি শুরু করল রেডি হওয়ার জন্য।
দৃক গ্যালারীতে ওদের আজ ছবিমেলা। সবাই শাড়ী পরবে। ওর সাথে যেতে হবে গাউছিয়াতে কীসব কিনতে। শর্ত জুড়ে দিলাম। বললাম '' যেতে পারি তবে কিছু খাই নি এখনো।
যাবার পথে শর্মায় খেয়ে যাব''। আমাকে অবাক করে দিয়ে নীলু রাজী হয়ে গেল।
দুজন মিলে শর্মায় গিয়ে দেখি সবে খুলছে মাত্র। আরো ৩০মিনিট লাগবে খাবার দিতে। হাতে সময় কম থাকায় হেরিটেজ এ ঢুকে নতুন বছরের প্রথম খাদ্য হিসাবে চীকেন চীজ বার্গারে কামড় বসালাম।
অনেক পোলাপান দেখতে পেলাম। একটা যুগল বসে ঢংঢাং পোজ দিয়ে ছবি তুলছিল। আমি আর নিলু ভালই বিনোদন পেলাম তাদের কাজকর্মে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে গেলাম গাউছিয়ায়। এই জায়গাটাতে গেলে এতোসব প্রয়োজনীয় জিনিস চোখে পড়ে যে কিছুর দিকেই ঠিকমত তাকাতে ভাল লাগে না।
পরপুরুষের মত লাগে। একি অনুভূতি হয় বেইলী রোডের বইয়ের দোকানে আর একুশের বইমেলাতে গেলে। তবে ওখানে গেলে বেহায়ার মত তাকিয়েই থাকি। আমার যখন অনেক পয়সা হবে তখন একটা পাহাড় ,একটা নদী একটা দখিনের বারান্দাওলা একলার ঘর আর প্রচুর প্রচুর বই...একটা লম্বা রাস্তা আর ...উফফফ আরো যে কতকিছু...থাক আপাতত এসব লিস্টিং...আমি,আমার আবোল তাবোল স্বপ্ন,আশেপাশের কিছু প্রিয় মুখ.....যাচ্ছে চলে যেমন তেমন।
গাউছিয়া থেকে বের হয়ে রিকশা নিলাম আমি আর নিলু।
পলাশী,বুয়েট বলেই উঠে পড়েছিলাম। সেই লোক বুয়েটে আসার পরই চিল্লানো শুরু করল। বলে বুয়েট যাবেন বলছেন, হলে যেতে তো বলেন নি। কি অদ্ভুত কথা। লোকটার সাথে এগুলো নিয়ে চিল্লাপাল্লা করছি তখনি নিলু দেখি কার দিকে যেন তাকিয়ে যেন হাসল।
আমি পাশে তাকাতে তাকাতে আমাদের রিকশা এগিয়ে যাওয়ায় আর কিছুই দেখতে পেলাম না। আমাকে জিজ্ঞেস করল "দেখেছিস?'...''কি দেখব?কার দিকে তাকিয়ে হাসলি?''..."অরণ্য,হঠাৎ করে চোখের সামনে পড়ে গেল। কি করব বুঝতে না পেরে হেসে দিছি,"...অপরাধীর দৃষ্টি জড়িত হাসি দিল নীলু আমার দিকে চেয়ে। রিকশা ততক্ষণে ডানে মোড় নিয়েছে। আমি ডানে তাকাতেই দেখি অনেক দূর থেকে হাত নাড়ছে অরণ্য।
কি অদ্ভুত !!! যেন সে খুব আনন্দিত হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়ায়। আচ্ছা পৃথিবীতে কি মানুষই সবচেয়ে নির্লজ্জ সৃষ্টি?!!ধুত্তেরিকা। এইসব ছাইপাশ ভাবলেই শুধু ঘুম আসে। ...'আজীব চিড়িয়া''..নিলু বলে উঠল এমন সময়। ...নিলুও কি শুনতে পেয়েছিল আমার মনের কথা? কে জানে।
কোন কথা বললাম না। .............
শাড়ী পরানোতে সুনাম থাকায় যেকোন প্রোগ্রামেই অনেককেই শাড়ী পরিয়ে দিতে হয়। আজকেও তাই। নিলু অবশ্য পরানো নিয়ে কিঞ্ছিৎ আপত্তি করল। ওর অভিযোগ হল আমার শাড়ী পরানোর মাঝে নাকি "অজন্তা ইলোরা " ভাব আছে ।
শাড়ী কেটে বোরখা বানাতে পরামর্শ দিলাম ওকে । ....................বাইনারী দিন শেষ হওয়ার আর ৪ ঘন্টা বাকি। কালকে একটা ভাইভা একটা রিপোর্ট জমা,একটা ক্লাশ টেস্ট। কিন্তু কিছুই করতে ইচ্ছা করছে না। ফান্দে পড়িয়া বগায় কান্দে রে.........এইতো আবার ঘুম আসছে ......ইসসস সত্যি যদি কেউ ঘুমানোর জন্য একটা চাকরী দিত............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।