আরবী আশারা শব্দ হতে আশুরা শব্দের উৎপত্তি। অর্থ দশম। ইয়াওমু আশুরা অর্থ দশম দিবস। আরবী বছরের ১ম মাস মুহাররম। আর এ মাসের দশ তারিখকে আশুরা বলে।
মহান আল্লাহ এ দিনটিতে অনেক ঘটনা বিশ্ববাসীর সামনে স্মরণীয় ও শিক্ষণীয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। যাতে মানুষ তার রবের গোলামী করতঃ ইহ-পরকালের শান্তির পথ রচনা করতে পারে। মহান আল্লাহ মুহাররমের দশ তারিখে এ পৃথিবী সৃষ্টি করেন। আবার পৃথিবী লয়ও হবে এ তারিখে। হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেন আশুরার দিন, পৃথিবীতে প্রথম রহমত নাযিল হয় এ দিনে।
আরও অনেক ঘটনাই ঘটে এ দিনেই। হিজরী ৬১ সনে ১০ই মুহাররম ঘটেছিল ইতিহাসের চিরস্মরণীয় দুঃখজনক অত্যন্ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে শত শত বছর ধরে আজো চলছে মাতম, আহাজারী আর ক্রন্দন। এ দিনে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর প্রেমিকগণ হায় হুসাইন! হায় হুসাইন! বলে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলে। তবে এ দুঃখ ও কান্না সমগ্র মুসলিম উম্মাহর।
কেউ বুক ফাটায়, কেউবা মুখ ফাটায়।
মুহাররম মাস ভাঙ্গাগড়ার মাস। বান্দাহ তার মালিককে খুঁজে পাবার মাস। আনন্দ-বেদনার মাস। শোক-শুকরের মাস।
ন্যায় ও সত্যের বলে বলিয়ান হয়ে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ঈমানী দীপ্তি বৃদ্ধি করার মাস। জীবন সংসারের মায়ার চেয়ে সত্য-ন্যায়ের পথে শহীদ হওয়ার উত্তম সে শিক্ষা নেয়ার মাস। কাফের মুশরিক তাগুতের পথে ধ্বংস আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে নাজাত তা নির্ণয়ের মাস। ঘটনাবহুল আশুরা শুধু কান্না-কাটি আর রোনাজারী করার দিন নয়। কাওয়ালী, মুর্শিদী, জারী আর শারীগান করার দিন নয়।
শুধু মাতম করা, চাকু মারা, জশনে জুলুশ করার দিন নয়। এ দিন ইবাদত করার দিন। নামাজ-রোজার দিন। কুরআন তিলাওয়াতের দিন। বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শপথ নেয়ার দিন।
ইমাম হুসাইন (রাঃ) নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে সত্যের বীজ বপন করে গেছেন, তা পরিচর্যার জন্য তৈরী হবার দিন। শিশু আলী আসগরের কান্নায় সাড়া দিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকারের দিন।
কালের চাকায় কত মুহাররম উদয় হলো, আর অস্ত গেল। কেউ সাড়া দেয়নি, আলী আসগর আর জয়নবের কান্নায়। কেউ বা দিয়েছে, তবে তা জানেনা কেউ।
মুসলিম, যারা ছিল শ্রেষ্ঠ জাতি। তারা আজ পরনির্ভরশীল, লাঞ্ছিত বঞ্চিত এক হতভাগা জাতি। তাদের বুকে আজ ইহুদী, খ্রীষ্টান চেপে বসে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে। তাদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে। মা-বোনদের ইজ্জত লুটছে।
আর আজ আমরা বসে বসে হয় তসবীহ জপ করছি নয় তো শুধুমাত্র নামাজের দিকে আহ্বান জানাচ্ছি। তাতেই আবার খোদার সন্তুষ্টি চাচ্ছি। আর যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে তাদের ফেতনা সৃষ্টির ফতুয়া দিয়ে কাবু করছি। অতএব সময় এসেছে বলার- 'ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।