আমার দৃঢ় বিশ্বাস, খুব কম সৌভাগ্যবানই আছেন যিনি তার ভালবাসার কাজকে জীবিকা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। কিংবা জীবিকাটিকে ভালোবেসে ফেলতে পারেন। তবে আছেন, অনেকেই আছেন, যারা এ্যারেঞ্জ ম্যারেজের পর স্ত্রীকে ভালোবাসার মতো না-পছন্দের কাজটিকেও বেশ সুন্দর ভালোবেসে ফেলতে পারেন। বাকিদের নিয়েই আমার যত ভাবনা যারা ভালোবাসার কাজটিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারেনা আবার যে কাজটিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেয় তাকেও পুরোপুরি ভালোবেসে উঠতে পারেনা।
আমাদের দেশে বাংলাদেশ বিমানের একটি চাকরির জন্য জাতীয় ক্রিকেট দলকে উপেক্ষা করার নজির আছে।
আমি নিশ্চিত বিমানের চাকরির চেয়ে তার ক্রিকেট মাঠটাই বেশী প্রিয় ছিল। কিন্তু ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি নিজে হয়তো ততটা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না যতটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ সরকারি একটা চাকরিতে। আমি দেখেছি প্রচন্ড রকম শিল্প-সংস্কৃতিমনা একটা ছেলেকে পরিবার অনেকটা জোর করেই চারুকলায় ভর্তি না করিয়ে বিবিএ-তে ভর্তি করালো। কারণ একটাই, পরিবারটা বুঝলো চারুকলার চেয়ে বিবিএ-র চাকরির বাজার ভালো! ছেলেটারও দুর্ভাগ্য সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি অনুষদেই ভর্তি পরিক্ষাতেই উত্তীর্ণ হয়েছিল। আরও দুর্ভাগ্য সে শেষ পর্যন্ত বিবিএ-টাও আর কমপ্লিট করতে পারেনি।
এবং ততদিনে তার শিল্পকলাও শিকেয় উঠেছে। কত কবিকে দেখা যায় ব্যাংকের হিসাব মেলাতে মেলাতে বলপয়েন্টের বল ফেলে দিতে।
এত কিছুর পরও আমি একজন আশাবাদীর মত বলতে চাই ভালবেসে যেমন চলে যেতে নেই, তেমনি ভালবাসার কাজটিকে একদম ভুলে যেতে নেই। সবসময় নক করে যেতে হবে-- আ্জই সেই দিন কিনা কিংবা এই ঘটনাই সেই ঘটনা কিনা। একদিন একটা অন্য সময় এসে বাকি সব পাল্টে দিতে পারে।
বা একটা ঘটনা অন্য সব কিছুকে মিথ্যে করে দিতে পারে।
এবারের শাহবাগ আন্দোলনে দেখলাম শুধু শ্লোগান দিয়েও স্টার হওয়া যায়। শাহবাগ জাগরণ না আসলে হয়তো লাকি অনাবিস্কৃতই রয়ে যেত। কিন্তু লাকি বাকি সব কাজের পাশাপাশি তার ভালবাসার কাজটিও চালিয়ে গেছে। শাহবাগ যার পূর্ণতা দান করলো।
এমন কোন ইভেন্ট জীবনে আসবেই বলা যায় না। তবে লেগে থাকলেই তো জেগে থাকবে আশা। বারাক ওবামা যদি কেবল শিক্ষকতা করেই সন্তুষ্ট থাকতেন তবে কে চিনত তাকে? গগণ হরকরা শুধু চিঠি বিলি করে জীবন কাটিয়ে গেলে হয়তো আমাদের জাতীয় সঙ্গীতও আসতো না, আর সেও হারিয়ে যেত কালের গহ্বরে।
ওয়ার্ক এবং ইভেন্ট এই দুই এর রসায়নটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেকে আছে যারা কেবল ওয়ার্ক করেই গেল।
কিন্তু ইভেন্ট-এর দেখা পেল না। অথবা অনেকের কাছ দিয়ে ইভেন্ট ঘোরাফেরা করছে কিন্তু ওয়ার্ক-এর অভাবে রসায়নটা হলো না। যার এই দুইএর সমন্বয় হলো, তারই হলো। সুদানের দুর্ভিক্ষর ইভেন্ট আর কেভিন কার্টারের ওয়ার্ক-- একটা অসাধারণ রসায়ন হলো, ৫২’র ভাষা আন্দোলন আর গাফফার চৌধুরির ভালোবাসার কাজ--একটা অমর সৃষ্টি।
তাই আমিও চেষ্টা করি-- আজই কি সেই দিন? এই ঘটনাই কি সেই ঘটনা?
কেউ কোন দিন ভুলেও বলে নি আমি ভাল গাই।
বরং যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শণপূর্বক আমাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টাই করা হয়েছে। তবুও আজই সেই দিন কিনা, এই ঘটনাই সেই ঘটনাই সেই ঘটনা কিনা যাচাইএর জন্য আমি ক্লোজ আপ ওয়ান তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ-এ নাম লিখিয়েছিলাম। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি শুনে সাবা তানি ও শওকত আলি ইমন মার্জিত ভাবেই জানালেন আমি ছাত্র বেশ ভালো। আমার পড়ালেখাটাই আরও ভালোভাবে করা উচিৎ। আমি বুঝেছি এই ঘটনা সেই ঘটনা নয়।
এবং নিজেকেও বুঝিয়েছি এটা তেমন বড় কোন ব্যাপার নয়। আদনান সামিকেও এরকম একটা রিয়েলিটি শো থেকে খুব সহজেই বের করে দেওয়া গিয়েছিল।
নতুন নাটকের জন্য নতুন পাত্র-পাত্রী প্রয়োজন। বিজ্ঞাপন দেখেই নিজের কিছু ছবি পাঠিয়েছি। প্রকাশনার জন্য নবিন লেখকের লেখা আহ্বান--আমি দু-চারটা পাঠিয়েছি।
সংবাদ পত্রে প্রদায়ক প্রয়োজন--আমি নিজের নাম উঠিয়েছি তালিকায়। এসবই যে আমার ভালোবাসার কাজ তা হয়তো নয়। তবে যাচিয়ে দেখেছি এই ঘটনাই সেই ঘটনা কিনা। এই দিনই সেই দিন কিনা। I love tossing my luck.
আজকাল আমি সফলদের সপ্নগাথা, আমিই বাংলাদেশ টাইপ লেখা পেলেই পড়ার চেষ্টা করি।
এতক্ষণ যে চাপাবাজি করলাম তা ঐসব পড়ার ফল। কারণ সবাই সফলদের কথাই শুনতে চায়। এবং ব্যর্থদের কথা নিয়ে ব্যঙ্গ করে। আজ যদি আবাহনীর কোচ বলে বার্সাকে হারানো সম্ভব তবে সকলেই একে পাগলামী অথবা মাত্রাতিরিক্ত ডোজের কথাই বলবে। কিন্তু ক্লাব বিশ্বকাপ-টাপ জাতিয় কোন খেলায় যদি সত্যি হারিয়ে দেয় তাহলে অনেকেই সেই কোচের মধ্যেই একটা জন্মগত প্রতিভার কথা বলবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জেগে ওঠার কথা বলবে এবং আরও অনেক কথাই বলবে।
কাজেই আমি আমার কথার দায়ভার নিলাম এবং সেই দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।