দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
আমার মেঝ বোনের মেয়েটির সাথে মাঝে মধ্যে ভাইবেরাদারের নাটক নিয়া আমার বিষদ আলোচনা হয়, সেই ভাগনী আর তার মা গত ১৬ তারিখ দলে বলে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী'র থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটা দেখে আসছে। কালকে রাতে সেই বাসায় গিয়ে দেখলাম আমার বোন আর তার ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া মেয়ে তারা ছবিটা দ্বিতীয়বার দেখার জন্য দল পাকাইতেছে। আমার ভাগনী মোটামুটি ছবির আদ্যোপান্ত সবি আমারে বলে দিল। আমি হলাম সেই কিসিমের দর্শক যে ছোট বেলায় বাড়ীতে ধরা পরনের ভয়ে এক সিনেমা অর্ধেক অর্ধেক কইরা দুই দিনে দুইবারে দেখতাম।
এক দিন হাফ টাইম পর্য্যন্ত দেইখা বাড়ী ফিরা আসতাম পরে আরেক দিন শো শুরু হওনের আধা ঘন্টা পরে বাড়ির থেকে বের হইয়া হলে হাফটাইমের পরে ঢুইকা বাকী ছবিটা দেইখা আসতাম। আমার এই ব্যাপারে ভীষন ধৈর্য্য, কেউ আমারে সিনেমার গল্প পুরাটা কইয়া দিলেও সেই সিনেমা দেখতে আমার এতটুকুও বেসুবিধা হইত না।
এই দফায় বাংলাদেশে আসার পর গত দেড় বছরে হলে যেয়ে ছবি দেখছি দেড় খান। হুয়া'র আমার আছে জল পুরাটা আর তার আগে মালয়েশিয়াতে শুট করা নার্গিস আক্তারের ডিরেক্শনে রিয়াজ আর পপি'র কি যেন একটা ছবি! যারে নিয়া দেখতে গেছিলাম তার কারনে অর্ধেক দেইখা আর দেখতে পানি নাই। তার পর মনপুরা দেখতে গিয়া এক দিন টিকেট না পেয়ে ফিরে আসি আর দেখা হয় নাই।
এবার না না কারনে খুব ইচ্ছা হইতে ছিল থার্ডপারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটা গরম গরম দেখি। কিন্তু হলে গিয়া টিকেট না পাওয়ার ভয়ে হলে যেতেও ইচ্ছে করছিল না। যেটা জানি যে এক দিন যেয়ে অগ্রিম টিকেট কাটতে হয় অরেক দিন যেয়ে ছবি দেখতে হয়। আজকেও ভাবছিলাম তাই হবে, হলোও তাই। আজকের কোন শো'রই টিকেট নাই সোল্ড আউট।
লাইনে দাড়িয়ে ভাবছিলাম পর দিনের কোন শো দেখা যায়! মজার ব্যাপার হলো এক লোক দেখি পেছন থেকে এসে কি কারনে একটা টিকেট ফেরত দিতে চাইছেন, ব্যাস কুদরতি ভাবে ব্যাবস্থা হয়ে গেল! ঢুকে পড়লাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী'র বহুল প্রতিক্ষীত ছবি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার দেখতে।
ছবিটা দেখার পর বুঝতে পারলাম কেন আমার সিষ্টার ও তার ডটার ছবিটার এমন প্রশংসা করছে। ফারুকী ও তার ব্যারাদারের সকল কর্ম কান্ডে যে জিনিসটা লক্ষ্য করা যায় তা হলো তারা কেমন যেন সকল সময় বদনা হাতে এক প্রকার দৌড়ের উপ্রে থাকেন। এ কারনেই সম্ভবত প্রায়ই তারা ক্যামেরা খানা কান্ধের উপর নিয়া ঘুরতে থাকেন যত্রতত্র। তাদের সকল টিভি প্রডাকশনের মত এই ছবিতেও তার ব্যাতিক্রম হয় নাই।
যাই হোক আগেই বলছি এইটা কোন মুভি রিভিউ না। সিনেমা সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত একটা ধারনা আছে অনেক আগে এই ব্লগে আহা ছবি দেখে একটা পোস্ট লিখতে যেয়ে লিখেছিলাম, আমার কাছে ফিল্ম মানে কেবল পর্দায় বলে দেয়া একটা গল্প বা ঘটনা নয়। ফিল্ম হচ্ছে পৃথিবীর যাবতীয় আর্ট মাধ্যমের এক মিলিত অর্কেষ্ট্রা। আমার ভালোলাগার ছবি সিনেমা হলে থেকে যায় না। ছবি ঘর থেকে বেরিয়ে দর্শকের পিছু নেয়, সঙ্গী হয়।
আজকে ছবিটা দেখতে দেখতে ভাল মন্দ অনেক কিছুই মনে হয়েছে সে সব লেখার আমার কোন ইচ্ছা নাই। মোস্তফা সারয়ার ফারুকীর এই ছবিটাকে আমি আজ স্টার সিনেপ্লেক্সে রেখে আসতে পারিনি। এই রাত বিরেতে ছবিটি নিয়ে কিছু লিখতে যাবার কারন ছবিটির মুল চরিত্র রুবা'র মত এমন এক রুবার সাথে আমার দেখা হয়ে ছিল এই শহরে বেশ ক'বছর আগে।
মিডিয়ার এক ভগিচগি লোকের মরাধরা এক অফিসে সেক্রেটারির কাজ করত মেয়েটি। ঐ লোকই তাকে একটি হষ্টেলে থাকবার ব্যাবস্থা করে দিয়ে ছিলেন।
মেয়েটির গল্প ছিল এমন, মা মারা গেলে বাবা আরেকটি বিয়ে করে ফেলেন। এই কষ্ট সামাল দিতে না পেরে মেয়েটি হুট করে মাত্র ১৫/১৬ বছরে বিয়ে করে বাড়ী থেকে চলে যায়। প্রচন্ড জেদি ও স্বাধীনচেতা মেয়েটির শ্বশুড় বাড়ীতে শেষমেষ আর থাকতে পারে না। এক খলাত বোনের বাসায় কিছু দিন অাশ্রয় মিললেও বেশী দিন না। ঘটনা চক্রে এই রকম অসহায় মেয়েদের সাহায্য করতে যে সব আন্কেলরা এগিয়ে আসেন আমার পরিচিত মিডিয়া লোকটিও তেমন এগিয়ে গেলেন মেয়েটির দিকে।
পরে ঐ লোকের বহু কেচ্ছা কাহিনীর আলামত পেয়েছি। সে সময় দেখা হলে বিদেশ সম্পর্কে নানা কথা মেয়েটি জানতে চাইত আর বলত, বিদেশে ত একটা মেয়ে ইচ্ছে করলেই স্বাধীন ভাবে নিজের মত করে থাকতে পারে তাই না? আমাদের দেশের মত ত এমন কেউ কাউকে খেতে আসে না! দেইখেন ত হেলাল ভাই কোন ব্যাবস্থা করা যায় কিনা? আমি তখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অর্থহীন হাসতাম।
এই বার দেশে এসে সেই লোকটির অফিসে যাই, মেয়েটি আর সেখানে কাজ করে না। সেখানে অন্য একটি মেয়েকে দেখলাম। বিকেলে অফিস ছুটির পর লোকটির ঐখানে আড্ডা দিতে আসে ডাক্তার, ব্যাবসায়ী, সাংবাদিক কত কে মহা জন।
এক দিন বিকেলে চা খেতে খেতে মেয়েটির কথা বলে তারা এক এক জন হাসতে হাসতে ঘরের ছাদ ফাটিয়ে ফেল ছিল। তারা কোন বন্ধু কে কি করে ছিল কে কি করতে পারেনি ঐ মেয়েটির সাথে অসহ্য সে সব বর্ণনা। ভীষন অস্বস্থি নিয়ে বেরিয়ে চলে আসি সে দিন ওখান থেকে।
এ শহরে পাড়ায় মহল্লায় অনেক লেডিস হস্টেল। জানি না মেয়েটি আজ কেথায় আছে, কেমন আছে? থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিতে নির্মাতা জীবনকে এক বড়ো কারাগারের সাথে তুলনা করেছেন।
এই জীবন কারাগারে কত কি কষ্ট সয়ে বেচে থাকে মানুষ, টিকে থাকে মানুষ! এ দেশে সব মেয়েই কি আর তিশার মত, আর রুবার মত অমন ভাগ্যবান! যাদের জন্য ইশ্বর সৃষ্টি করে রেখেছেন এক জন মোস্তফা সারয়ার ফারুকী অথবা তপুর মত এমন কোন ফার্ষ্ট পারসন স্পেশাল নাম্বার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।