জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।
প্রথমে সবাইকে দেরীতে হলেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
থার্টি ফার্ষ্ট নাইটে প্রতিবছরই 'ফায়ারওয়ার্কস' দেখতে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে ওয়েষ্টমিনিষ্টারে যাওয়া হয়। অনিচ্ছাতে কেন বললাম সেটা বলি। গতকাল এখানে যে ঠান্ডা ছিল (-৩ ডিগ্রী ) তাতে বের হওয়ার কোন ইচ্ছায় ছিল না।
তাছাড়া সন্ধ্যা কিংবা রাত সাতটায় (এখন এখানে চারটা হলেই বাইরে অন্ধকার হয়ে যায়) যখন বাসায় ফিরেছি তখন অনেক ক্লান্ত ছিলাম। তারপরও বন্ধু বান্দরদের জোরাজুরিতে বাইরে যাওয়ার জন্য সাহস করেই ফেললাম। বাসা থেকে বের হওয়ার প্ল্যান নয়টায় থাকলেও বাঙালী সময় অনুযায়ী যথারীতি এক ঘন্টা লেইট। দশটার দিকে বের হয়ে আবার এক বন্ধুর বাসায় যেতে হলো। তারপর মিনিট বিশের মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আমরা দশজন ওয়েষ্টমিনিষ্টেরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
যাওয়ার পথে একটাই চিন্তা ছিল যে, সঠিক জায়গায় নামতে পারব কি না। অতিরিক্ত মানুষ জড়ো হওয়ার কারণে এগারোটার দিকেই কাছাকাছি ষ্টেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাছাড়া 'লন্ডন আই' এর কাছাকাছি থেকে ফায়ারওয়ার্কস দেখতে না পারলে একটা আফসোস তো থাকবেই। তো ঠিক 'কানাডা ওয়াটার' ষ্টেশনে যাওয়ার পরেই আমাদের আশংকা সত্যি হলো। ওয়েষ্টমিনিষ্টারে ট্রেন থামবে না ঘোষণা শুনে মেজাজ খারাপ হলেও কিছু করার ছিল না।
আগের ষ্টেশন 'ওয়াটারলু'তে নামতে হলো। বাইরে এতো মানুষ ছিল যে মানুষের স্রোতে মিশে গেলাম না বলে ভেসে গেলাম বললে আমার মনে হয় ভুল হবে না। পেছনের মানুষের ঠেলায় আর সামনের মানুষকে ঠেলে কোনভাবে 'লন্ডন আই' এর সামনের দিকে গিয়ে দাড়ানোর জন্য একটা জায়গা বেছে নিলাম। তারপর থেকে 'কখন বাজবে বারোটা'র অপেক্ষা করছিলাম। আধাঘন্টার মতো দাড়িয়ে থেকে আমার পায়ের অস্তীত্ব খোঁজে পাচ্ছিলাম না।
সপ্তাহখানেক পূর্বে একটা জুতা কিনেছিলাম। সেটা এতো হালকা হবে বুঝতে পারিনি। বিশাল জনসমুদ্রের মাঝখানে দাড়িয়ে এখন বাসায় চলে যাবার চিন্তা তো দুরের কথা কখন ফায়ারওয়ার্কস শেষ হবে সেটার প্রহর গুণা ছাড়া উপায় নেই। মাঝখানে কোন বন্ধুর সাথে খানিকের জন্য হলেও জুতা বদল করার কথা ভাবছিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটা করতে হয় নি।
যাইহোক, বন্ধুরা ততক্ষণে ব্যাগ থেকে জেডি'তে কোক মেশানো নিয়ে ব্যস্ত। এই দিনে মদ না খেলে কি হয়? অবশ্য না খাওয়ার দলে আমি আর ইমতিয়াজ ছিলাম। এই একটা জিনিস কেন জানি কখনো খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি। তারপর 'বিগ বেন' এর ঢং ঢং আওয়াজের সাথে সাথে ফায়ারওয়ার্কস এর শুরু হলে সবাই অনেক চিল্লালাম। এতক্ষণ ঠান্ডার মধ্যে দাড়িয়ে থাকা বিফলে যায়নি।
প্রথম বিশ্বে থাকলে এ ধরণের বিলাসীতা কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। তবে, এবারেরটা অনেক সুন্দর হইছে। লন্ডনেরটা এবারের সেরা ফায়ারওয়ার্কস মনে হলো, বিশ্বের সব শহরগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র সিডনি'রটা ভালো ছিল।
যাইহোক, আশে পাশের কাপলরা ততক্ষণে নতুন বছরের প্রথম চুমো খাওয়াতে ব্যস্ত। আহারে.....আফসোস।
ও হ্যা, পাশের দুটো লাতিন মেয়ে আমাদের হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে জাদু কা ঝাপ্পি দিয়েছে এই যা। দশ মিনিটের মতো ফায়ারওয়ার্কস শেষ হলে বন্ধুরা মিলে সামনের একটা সাবওয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। এখন মানুষের ঠেলাঠলিতে ষ্টেশনগামী না হয়ে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়, ততক্ষণে ওদের জেডি মেশানো কোক ও খাওয়া শেষ হবে। থার্টি ফার্ষ্ট নাইটে ফ্রিতে মানুষের মাতলামি দেখা যায়। বন্ধুরা খেয়ে কেউ ইতিমধ্যে মাতলামি শুরু করেছে।
চান্সে আমিও না খেয়ে মাতলামি শুরু করলাম। এখন সব মাতালের ভিড়ে আমি না খেয়ে একটু মাতলামি করলে কেউ কিছু মনে করবে না। তাছাড়া একা মাতলামি করলে মাইর খাওয়ার চান্স থাকলেও এখন বন্ধুদের সাথে সেটা নেই। একটার দিকে বাসায় ফেরার জন্য পা বাড়ালেও মানুষের জন্য হাঁটা যাচ্ছে না। ততক্ষণে সবাই সমানে চিল্লাচ্ছি।
'হ্যাপি নিউ ইয়ার', 'মি লাভ ইউ লং টাইম' ইত্যাদি। ষ্টেশনের ঢুকব এমন সময় পাঁচ সাতজন মেয়ের একটা গ্রুপ আমাদের 'হ্যাপি নিউ ইয়ার সেক্সি, বেইব' বললে আমরা ও 'মি লাভ ইউ লং টাইম' বলে আকাশে চুমো খেলাম। আসার পথে একজন হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য সে আমাদের খুঁজে পেয়েছিল। সাথে দুজন নতুন পাবলিক থাকায় যাবার সময় আমি সবাইকে বলেছি কেউ লাইনচ্যুত হলে 'নৌকা' বলে চিল্লাইতে।
কারণ এটা অন্তত আর কেউ বলবে না। হা হা হা।
অনেক মজা করলাম। আমি মদ না খেয়ে কতো মাতলামি করতে পারি সেটা বন্ধুদের দেখালাম। মজা করার জন্য মদ খেতে হয় নাকি?
সবাইকে আবারো নববর্ষের শুভেচ্ছা।
নিচে আইফোনে তোলা কিছু ছবি শেয়ার করলাম।
বন্ধুদের কয়েকজন:
নিচের ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে:
বিবিসির সৌজন্যে ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।