সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
গোপাল দাসের ডাকসু সংগ্রহশালাঃ
আমার এস এস সি পরীক্ষার্থী ছোট ছেলের তাগিদে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম "গোপাল দাসের ডাকসু সংগ্রহশালা" দেখতে। পাঠক আপনাদের সাথে গোপাল দাসের ডাকসু সংগ্রহশালা শেয়ার করছিঃ
দেড় দশক আগে ১৯৯১ সালে ডাকসু সংগ্রহশালার যাত্রা শুরু। সংগ্রহশালা আজ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মহা ভাণ্ডারে পরিণত। এ ঐতিহ্যের কারিগর শিক্ষার আলোবঞ্চিত একজন সাধারন মানুষ গোপাল দাস। সংগ্রহই তার নেশা এবং পেশা।
ষাটের দশকে মধুর ক্যান্টিনে বয় ছিলেন। ৭১ এ দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার আগ থেকেই চাকরি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসুতে। নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন ডাকসু সংগ্রহশালা। লিখেছেন "মণিদীপ্ত ক্যাম্পাস" নামের একটি বই।
যার নেই কোন স্কুল সার্টিফিকেট তিনি লিখেছেন আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।
গোপাল দাসের লেখা এবং সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৯২ সালের ৭ জানুয়ারি ডাকসু ভবনের নিচতলায় একটি ছোট্ট কক্ষে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ফিতা কেটে সংগ্রহশালার দ্বার উন্মোচন করেন। এর আগের দিন ৬ জানুয়ারি ডাকসুর সম্পাদকমণ্ডলীর কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডাকসু জিএস খায়রুল কবির খোকন। গোপাল দাস বলেন, সেদিন উপস্থিত সাংবাদিকদের একজন তাকে প্রশ্ন করেন, এতকাল পরে কেন ডাকসু সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা জাগলো।
প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ডাকসু পাঠকক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। সে সকল দৈনিকে আমাদের গৌরবের ইতিহাস প্রকাশিত হয়। সে ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ডাকসু সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা জাগে প্রাণে।
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হলে ডাকসু সংগ্রহশালার পক্ষ থেকে ১৯৯২ সালে যুদ্ধবিরোধী পোস্টার প্রকাশ করা হয়। ঐ বছর ভয়াবহ টর্নেডোয় চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে কাপড়-ঔষধ-খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়।
এছাড়া মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক মোহনাগুলোতে একুশের কথামালা, পোস্টারের বোর্ড স্থাপন করা হতো। চার রঙা একুশের পোস্টার প্রকাশ করা হয় যার নাম "হৃদয়ে আমার ফেব্রুয়ারি"। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে ডাকসু সংগ্রহশালার সামনে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা নিয়মে পরিণত হয়।
১৯৯৮ সালের পর ডাকসুর কার্যক্রম স্থগিত হলে আরো সমস্যার সম্মুখীন হয় সংগ্রহশালা। তখন ক্যাম্পাসের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে আসে এবং সংগ্রহশালায় মহামূল্যবান স্মৃতিগুলো সংরক্ষণে সহযোগিতা করেন।
ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রতীক আমতলার মৃত আমগাছটি সংগ্রহশালায় আনতে দর্শন বিভাগের ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন সহযোগিতা করে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র বর্তমানে শিক্ষক এম এ আযীয অকাতরে পরিশ্রম করে আমাদের মহান ব্যক্তিদের ছবিগুলো এঁকেছেন, যা এখনো বর্তমান। ইংরেজি বিভাগের ছাত্র সজল শিলালিপিতে মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের নিহত সদস্যদের নামফলক স্থাপন করেছেন সংগ্রহশালার সম্মুখ প্রাচীরে। মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের ম্যুরাল চিত্র স্থাপনে হাত বাড়িয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ। এ ম্যুরাল চিত্রের উদ্যোক্তা গোপাল দাস, শিল্পী এম এ আযীয এবং তত্ত্বাবধানে ছিলেন তৎকালীন ডাকসু কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মিজানুর রহমান ম্যুরালের নামকরণ করেন ।
বর্তমানে সংগ্রহশালার প্রদর্শনীতে রয়েছেঃ ধাতব মুদ্রা, কাগজী মুদ্রা, ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার আগমনের চিত্র ও তথ্য, ডাকসু ভিপি-জিএসদের চিত্র, ক্যাম্পাসে রবীন্দ্র-নজরুলের আগমনের চিত্র ও ইতিহাস, প্রায় চল্লিশ বছর আগের ভাষা আন্দোলনের সময় হাতে আঁকা পোস্টার, ঢাকার নবাবদের নানান ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের অগণিত ছবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক আমতলার মৃত আমগাছটি কাঁচের বাক্সে সযত্নে সংরক্ষণ, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ১০৬ জন নিহত তরুণের তালিকা, ১৯৫২ সালে ৮ জন ভাষা শহীদের জীবন বৃত্তান্তসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা। আরো রয়েছে সংগ্রাহক গোপাল দাসের তৈরি কোলাজ। যে কোলাজ পরবর্তী প্রজন্মকে পথ দেখায় সুন্দর আগামীর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।