........
প্রাইভেট মেডিকেল নিয়ে কিছু মানুষের মাতম দেখতে পাচ্ছি । তারা ভেবেই পাচ্ছেন না, এত টাকা দিয়ে পোলাপানের প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে কি লাভ??? প্রাইভেটে ভর্তি হতে বর্তমানে কলেজভেদে ১০-২৫ লাখ টাকা খরচ হয় । এখন ধরেন, কোন বাপ তার সন্তানকে প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করাল না । তো সেই বাপের মহামূল্যবান ১৫ লাখ টাকা কি ঘরে বসে বাচ্চা দিবে??? বেকার অথবা অর্থহীন ডিগ্রিধারী ছেলের হাতে ঐ ১৫ লাখ টাকা পড়লে সেই ছেলে যদি শুয়ে বসে কাটায় তাহলে ১৫ লাখ টাকা শেষ হতে ৩-৫ বছরের বেশি লাগার কথা নয়, যদি ব্যবসায় খাটিয়ে লস খায় তাহলে তো আর বড় ধরা, শেয়ারে ধরা খাইলে তো কথাই নাই । তারচেয়ে যদি একটা ছাত্রের মেডিকেল লাইফ চালিয়ে যাবার সামান্যতম সাহসও থাকে, তবে বেশিরভাগ বাবা-মাই ১৫লাখ খরচ করতে দ্বিধাবোধ করবে না ।
টাকার আলাপ তো গেল । এইবার আসি যোগ্যতার ব্যাপারে । একটা ছেলে মেধাতালিকায় ১৫০০০-২০০০০ এর পরে থেকে মেডিকেলে ভর্তি হতে পারে, কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর যদি গতর না খাটায় তাহলে পাশ করা কিন্তু এত সোজা না । মাঝে মাঝে না আচমকা পাশ হলেও হয়ে যেতে পারে, কিন্তু না পড়ে আইটেম ক্লিয়ার হলে টার্ম ক্লিয়ার হবে না, যদিওবা টার্ম ক্লিয়ার হয়, প্রফ ক্লিয়ার নাও হতে পারে । অনেক সময় পড়েও একই ধরণের টপিকগুলো মাথায় গুলিয়ে যেতে পারে ।
এরপরও কিন্তু প্রাইভেটের ছেলেমেয়েরা পড়ছে, পরীক্ষা দিচ্ছে, পাশ করছে, ফেল করলে আবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করছে । প্রাইভেটে টাকা দেওয়া হয় বলেই যে পাশ করিয়ে দেওয়া হয় এগুলো আসলে আবালের মত চিন্তাভাবনা । একটা ছেলেকে যদি কোনভাবে ক্লিয়ারেন্স না দিয়ে আটকে রাখা যায় তাহলে কলেজ ৬ মাসের বেতন(৪০০০০+ টাকা) ফাউ পাবে । ছেলে ৬ মাস/১বছর পর পাশ করলে একটা ইন্টার্র্নিকে বেতনও কম দিতে হবে । কাজেই না পড়িয়ে পাশ করানোর ব্যাপারটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই “মিথ” ।
এইবার আসি পরীক্ষায় পারা না পারার ব্যাপারে, বেশি সমস্যা হয় ভাইভার সময় । দিনভর পরীক্ষার ক্লান্তি অনেক সময় একটা ছাত্রের ওপর চেপে বসতে পারে । এক বোর্ড থেকে আরেক বোর্ডে দৌড়াদৌড়ি, OSPE, প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা একসাথে দিতে গিয়ে একেকজন পরিক্ষার্থীর ভয়াবহ পরিশ্রম হয়, এমন অবস্থায় শান্ত মস্তিষ্কে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়া মুখের কথা না । আমি নিজের পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যদি ভাইভার কিছু সময়(আধ ঘণ্টা) আগে থেকে পড়া বন্ধ রাখা যায় তাহলে যে একেবারে শেষ সময় পর্যন্ত পড়বে তার চেয়ে পরীক্ষা ভালো হবে । কারো পরীক্ষা যদি খারাপ হয়েই যায়, সেটার জন্য তাকে পুরোপুরি দোষ দেয়া বোধহয় ঠিক না ।
অনেক সময় মেডিকেল কলেজ পেজগুলোতে সরকারী মেডিকেলের অনেককে বলতে শোনা যায়, “......অনেক ভয় পেয়েছিলাম, স্যার অনেক সাহস দিলেন......” “অনেক কিছুই পারিনাই, তারপরও স্যার পাশ করিয়ে দিলেন......” ময়মনসিংহ মেডিকেলে তো হার্ট, লিভার চিনিয়েও এক ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে এম এম সি থেকে পাশ করা এক ম্যাডাম বলেছিলেন । এখন কি তাহলে বলা উচিত হবে যে সরকারীতে এমনই বেশি হয়??? কক্ষনো না!!
আরেক পার্টি কইতেছেন, প্রাইভেট মেডিকেল থেকে পাশ করা এইসব ছাত্রেরাই নাকি রোগীর পেটে ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি জিনিসপত্র রেখে আসবে । মেডিকেলে ফরেনসিক মেডিসিন নামে একটা সাবজেক্ট আছে, এই বিষয়ের জন্ম নিশ্চিতভাবেই প্রাইভেট মেডিকেলগুলোর জন্মের বহু বহু আগে, সেইখানে দুইটা টপিকের কথা উপস্থাপন করি একটা হইল সিভিল ম্যালপ্রাক্সিস- এর মাঝে আছে- কোন পেশেন্টের অনুমতি ছাড়া তার পরীক্ষা করা, অপারেশনের আগে পরের সঠিক দেখভাল করতে অসফল হওয়া, অসতর্কতার সাথে বিষাক্ত ওষুধ দেওয়া, কড়া ডোজে ওষুধ দেওয়া, ইনজেকশন দেওয়ার সময় সুঁই ভেঙ্গে ফেলা, গভীর এক্স-রে করার সময় চামড়া পুড়িয়ে ফেলা, সঠিক নির্নায়ক পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি । অন্যদিকে ক্রিমিনাল ম্যালপ্রাক্সিসের মাঝে আছে- অপারশনের সময় ছুরি-কাঁচি-গজ শরীরে রেখে সেলাই করে দেওয়া, ভুল অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা, আঁটোসাট প্লাস্টারের কারণে গ্যাংগ্রিন, ভুল রিপোর্ট, ভুল সাইডের অপারেশন ইত্যাদি । এখন কথা হইল, এই যে এত এত খারাপ কাজের লিস্ট এইটা ফরেনসিক মেডিসিনওয়ালারা ভাইবা ভাইবা বার করছে নাকি ডাক্তাররা যেই সমস্ত ভুল আগে থেকেই করে আসতেছে সেখান থেকে আইডিয়া নিয়ে তৈরি করছে??? প্রাইভেট মেডিকেল আসার আগে দেশের সরকারি মেডিকেল থেকে পাশ করা কোন ডাক্তারই কি এইসমস্ত কোন ভুলই করেনাই??? তারা তো প্রাইভেটে পড়েনাই, তারা কেন এইসব ভুল করল???
মেডিকেলে যারা উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতেছেন, তাদের কষ্ট এম বি বি এস করনেওয়ালাদের চাইতে অনেক বেশী ।
কারণ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে শিক্ষকদের টেন্ডেন্সি থাকে ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেওয়ার, অন্যদিকে হায়ার ডিগ্রি করতে গেলে সামান্য ভুলের কারণেই ফেল করিয়ে দেওয়া হয় । কাজেই প্রাইভেটের এত এত পোলাপান কেমনে কি করবে, কেমনে ডাক্তার হবে, কেমনে স্পেশালিষ্ট হবে এইসব নিয়ে চিন্তা না করে সেই সময়টা পড়াশোনায় দিলে নিজেদেরও লাভ, আগামী দিনের রোগীদেরও লাভ ।
আর যারা কথায় কথায় “রোগী মারা ডাক্তার” কইয়া ফাল পারেন তাদের সামনে তো অপশনের শেষ নাই । আইচ্ছা কন তো দেখি প্রাইভেটের কোন এক কাল্পনিক ডাক্তারের কাল্পনিক রোগীর পেটে গজ রেখে আসার কাহিনীতে আপনারা যেই হারে চেগাইছেন...... এপোলোর ডাক্তারের সেম সত্য কাহিনী, ফার্মেসির “স্বশিক্ষিত” ডাক্তারদের দ্বারা ছড়িয়ে দেওয়া “এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স” নামক নীরব ঘাতক, কবিরাজের অপচিকিতসা, হোমিওদের ধোঁকাবাজির ক্যান্সার চিকিৎসা, ভণ্ড পীরদের পানি পড়া- ফুঁ পড়া দেওয়া হাতুড়ে চিকিৎসার বিরুদ্ধে ১০০০ভাগের ১ভাগও কি চেগাইছেন??? না, সেইগুলা তো আপনাদের কাছে অপরাধ মনে হয় না? কিছু পোলাপান বাপের টাকা খরচ করে গতর খাটিয়ে নিজের জীবন তেজপাতা বানিয়ে পড়াশোনা করবে এতেই আপনাদের যত আপত্তি! শাবাশ! এই না হলে আর কিসের বাঙালি!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।