শাহবাগ এর তারুণ্য আর গ্রীষ্মের লাল শিমুল-পলাশের আগুন আজ এক হয়ে গেছে। আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে ৪-৫ দিন গেছি শাহবাগে। মিছিল করেছি ৭১ এর রাজাকারদের বিচার চেয়ে। সেই হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া-- আহ, কি বিভঃস সেই পশ্চিম পাকিস্তানি অত্যাচার ! আব্বাসহ মুরুব্বিদের কাছে শুনে, বই পড়ে, ইতিহাস শেয়ার করে আমি জেনেছি- কত কষ্টের অর্জন আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ ! বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সে কি ত্যাগ আর অবদান ! জয় বাংলা শ্লোগানের সে কি পাগল করা যাদু ! বলতে বলতে গলা পর্যন্ত বসে গেছে। আমার বুকের ভিতর আগুন।
আমার আপন ভাই মারা গেছে ১৯৭১ এর যুদ্ধের মধ্যে। আমার আব্বা একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। মিছিলের ছবি দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছি ফেসবুক। কিন্তু --- তারপর-- মনে হলো- একই লেবু বারবার কচলে আমরা কি তা তেতো করে ফেলছি না !! ১৯৭১ এর রাজাকারদের বিচার চেয়ে কার কাছে আবেদন জানাচ্ছি? কোন্ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আবেদন? কে কে আমার পাশে? কেন সে আমার পাশে? ৭১ এর রাজাকারদের বিচার চেয়ে কি অনিদির্ষ্ট দিন আন্দোলন চলেতেই থাকরে? শাহবাগের মতো গুরুত্বর্পূণ সড়ক-মোড় আজ নিয়ে ১৪ দিন বন্ধ! যেখানে মাত্র কয়েক দিন আগেও প্রেসক্লাবের সামনে সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষকগণ সমষ্টিগতভাবে তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করার ২/১ দিনের মধ্যেই সরকার মরিচ-গুড়ো স্প্রে দিয়ে সেই আন্দোলন পন্ড করে দিলো !সরকার কেন একে এতো উৎসাহ আর রসদ দিচ্ছে এই শাহবাগে? সরকারের-ই তো আর একটা স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান বিচার আদালত! সেই আদালতের দেয়া রায় পাল্টানের জন্য আন্দোলনে খোদ সরকারই সাহায্য করছে? বাংলাদেশের সরকার কখনো এতো ভাল হয় ! শাহবাগ মাইক থেকে ভিন্নমতের ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে যে যে ব্যক্তি হুমকির মতো শুনতে মাইক-ভাষণ দিলো, তাদের পরিচয় তো আমরা জানি ! নির্দলীয় জনগনের একটা সুন্দর আন্দোলন পুরোপুরি চলে গেল একটা সরকারি দলের দখলে? তাই বুঝি সরকার এতো নিরাপত্তা দিচ্ছে? ১৪-১৫ দিন ধরে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলে, আর ট্রাইবুনাল কিংবা সরকার কেউ এদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কিছু বলছে না? যেখানে, ২ সপ্তাহ আগেও এই আদালত থেকেই কাউকে কাউকে আদালত াবমাননার জন্য শোকজ করা হয়েছে এই রায় নিয়ে কথা বরায় !
আজ আমি আর উঃসাহ পাচ্ছি না। এই সুন্দর শাহবাগ চত্বর হয়ে উঠতে পারত ৭১ এর যুদ্ধপরাধীর ফাসির বিচার চাওয়ার পাশাপাশি ১৯৭২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত যত হত্যাকান্ড ঘটেছে; তার সব-এর বিচার চাওয়; উচিত ছিল, সামপ্রতিক সব ানিয়ম, দুর্ণীতি, অনাচার এর বিরুদ্ধে কথা বলা।
না, তা হয় নি। আমার মন বলছে, আর তা বলাও হবে না। বলতে দেয়া হবে না। নেশা'র মতো টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এই সুতো। যতদিন পারা যায়।
যা লাগে এজন্য, দেবে গৌরি সেন। এতে এই সরকার-এর ই মহালাভ! একদিকে ছোট্ট ঢাকায় তীব্র যানজট, তারউপর বিরোধী দল কিংবা কোন সংগঠন আর কোন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নামতেই পারছে না!! ক্ষমতার শেষ বছরে এসে সরকারের জন্য এরচেয়ে মহাসাফল্যের বিনিয়োগ আর হয় না, অতীতে আর কোন সরকার এই সাফল্য দেখাতে পারেনি। এই আন্দোলন এর ১৫তম দিন দেখে আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে আর কোন দুঃখজরা, অভাব-অভিযোগ, ক্ষুধা, দারিদ্র, অনাচার নেই; একমাত্র রাজাকারদের ফাসি দিলেই এই দেশে ানাবিল সুখ হুড়মুড় করে ঝাপিয়ে চলে আসবে। কে নিষেধ করেছে ফাসি দিতে? কে বিচারকদের হাত আটকে ধরেছে? রাজাকাররা? িবরোধী দল? কার হাতে শাসনদন্ড? হা হা হা। ক্ষমতায তো ৭১ এর মহান যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামীলীগ-ই! তো, এখনো ভাবুন, যারা এই আন্দোলন মডারেট করছেন, তারা।
কথার প্রসঙ্গে কথা চলে আসছে; কে কিভাবে নেবে- তাকে সন্মান দিয়েই বলছি--তবে--- সবাইকে মানতে হবে যে, বাপের উপরও সর্বদা বাপ থাকে। শুধু নিজেকেই চালাক ভাবে হয়ত মূর্খেরা। দাবার দান কখন উল্টে যায় কে জানে! এই আমরা সাধারণ জনগণই গত বিএনপির শাসনামলে অতিষ্ঠ হয়ে দুই-তৃতীয়াংশর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় এনেছিলাম হাওয়া ভবনের অভিশাপ থেকে মুক্তির আশায়। আওয়ামীর নিজস্ব ভোটব্যাংকও ভাবতে পারেনি যে, তারা এত বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসবে। তখন আমার মতো আটপৌরে সাধারন জনগন কিন্তু তঃকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়নি; ভোট দিয়েছিল বিএনপি সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে।
আর হয়ত ১০ মাস! এখনো সময় আছে। জনগণের চাওয়াকে সন্মান করা। না হলে হয়ত বাংলার সহজ সরল জনগন আরার ইতিহাসের ভুল পুনরাবৃত্তি করবে। আবার আমাদের দেথতে হবে মতিউর- নিজামীদের গাড়ীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়ছে! ৭১ এর ধর্ষিতা মা-বোন তখন কাকে অভিশাপ দেবে?!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।